প্রশাসনের নির্দেশ মানছে না কেউ
এম এস এমরান কাদেরী, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) থেকে
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের হাটবাজারগুলোতে উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জোড়ালো যথাযত মনিটরিং টিম না থাকায় যে যার মতো করে মালামাল বিক্রি করছে বলে অভিযোগ তুলেন এখানকার এলাকাবাসী। উপজেলার হাজার হাজার সাধারণ, শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষকে জিম্মি করে সিন্ডিকেট তৈরির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য তালিকা টাঙ্গানোর নির্দেশ দিলেও তা মানছে না এসব ব্যবসায়ীরা। আবার কেউ কেউ এ তালিকা লাগালেও তালিকায় লেখা দরের সাথে মিলছে না বিক্রি দরের সাথে। অনেক ব্যবসায়ী চলতি বাজার দরের তালিকা থেকে ১৫-২০ টাকা অনেক সময় ৩০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধিতে বাজার বিক্রি করছে বলে জানান ক্রেতারা। এছাড়া উপজেলার মার্কেটগুলোতেও ঈদের প্রয়োজনীয় সামগ্রীতেও গলা কাটা দাম আদায় করছে বলেও জানান দূরদূরান্ত থেকে আসা গ্রাহকরা। তারা জানান, উপজেলার জব্বার মার্কেট, সওদাগর মার্কেট, খাজা মার্কেট, মদিনা মার্কেট ও পৌরসভা মাকেটে সিন্ডিকেট করে যে যার মত করে দাম হাঁকাচ্ছে। ৬-৭শ টাকার শিশুদের কাপড় ১-২ এমনকি ৩ হাজার টাকা লাভেও বিক্রি করছে এখানকার মাকেটের দোকানিরা। বিভিন্ন ধরনের কথার ফুলজুড়ি দিয়ে প্রতারণার মাধমে সাধারণ মানুষ তথা প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের সদস্যদেরকে। ক্রেতারা এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বাজার মনিটরিং এর জন্য বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় টিম প্রতিনিয়ত কাজ করলেও বোয়ালখালীতে প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য বলে দাবী করেন সুশীল সমাজ। উপজেলা প্রশাসন-নির্বাহী অফিসার ও ভূমি কমিশনার মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও প্রয়োজনের তুলানায় এ তদারকি কিছুই নয় বলে জানান সুশীল সমাজ। চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন ভোগ্যপণের আড়ত, পাইকারী বাজারে জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদ্যোগে মনিটরিং করার পর পাইকারী বাজারে ভোগ্যপণের দাম অনেকটা কমলেও শহরতলী বোয়ালখালীতে এর কোন প্রভাব পরেনি এক পার্সেন্টও। উল্টো এখানে প্রতিটি পণ্যে আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে দিয়েছে। প্রশাসনকে দেখানো জন্য নামমাত্র তালিকা টাঙ্গালেও সব ক’টি দোকানে মালামাল বিক্রি করছে তাদের মনগড়া দামে। ভোগপণ্য চিনি, ছোলা, ডাল, চিরা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলু, কাঁচা মরিচ, বেগুনসহ কাঁচা বাজার ও মুদিদোকানগুলোতে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে পেঁয়াজ থেকে শুরু করে সব ক’টি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম। প্রতিটি পণ্যে বেড়েছে কেজি প্রতি ১০-২০ ও ৩০ টাকা পর্যন্ত। একেক দোকানে একেক দাম হাঁকছে ব্যবসায়ী। যে যার মতো মূল্য হাঁকায় ভোক্তারা কি করবে বুঝে উঠতে পারছেন না। কোন দোকানে সঠিক মূল্য তালিকা টাঙ্গানো হয়নি। গুটি কয়েক দোকানে মূল্য তালিকা দিলেও সে মূল্য তালিকা অনুযায়ী দাম নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করে ক্রেতারা। মূল্য তালিকা টাঙানো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এসবের কথা বলে প্রশাসন তাদের দায় সারছে মাত্র। এসব নিয়ে প্রশাসন মাইকিং করলেও কেউ সঠিক ভাবে মূল্য তালিকা লাগায়নি। উপজেলা সদর অস্থায়ী ক্ষুদ্রবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল মনছুর এ ব্যাপারে বলেন, ‘মূল্য তালিকা যারা টাঙায়নি তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করে দেয়া যেতে পারে।’ তবে নিজের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে মূল্য তালিকা ২ সপ্তাহ আগের মূল্য রেটে দেখা গেছে। তার পাইকারি কেনা মূল বেশি দাবী করে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া উপজেলার মার্কেট থেকে শুরু করে বিভি জায়গায় চুরি, ছিনতাই, গিরাকাটাসহ বিভিন্ন অপরাধ আগের তুলানায় বহুগুণে বৃদ্ধি পেলেও নিরাপত্তাসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর যথাযথ ভূমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বলে জানান ব্যবসায়সহ এলাকাবসী। চলতি ঈদ বাজারে একাধিক চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটার পর উপজেলা সদরের মার্কেটগুলোতে পুলিশ থাকলেও অন্যান্য এলাকার মানুষ নিরাপদ নয় বলে জানান তারা। এলাকাবাসী জানান, পুলিশ মার্কেটগুলোর দায়িত্বে কাজ করার সুবাধে পাহাড়ি বাংলা মদের চালান আরো দিগুণ বেড়ে গেছে। ফলে পবিত্র রমজান মাসেও নিস্তার পাচ্ছে না মাদকের করাল গ্রাস ও মদ্যপায়ী এবং মদ ব্যবসায়ীদের অত্যাচার থেকে। কেউ কিছু বলতে গেলেই উল্টো হুমকি দিয়ে বলে- অন্যান্য মাসের চেয়ে দিগুণ টাকা দিয়ে মদ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। কোন ধরনের বাধা আসলে একের পর এক মামলা দেয়া হবে। আমাদের কেউ কিছুই করতে পারবে না। কারণ হিসেবে তারা দেশের লাগব বোয়ালদের মাসোহারার কথা দিব্বি বলে থাকে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মাহবুবুল আলম এ বিষয়ে বলেন, গত বুধবার থেকে মাইকিং এর পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। মূল্য তালিকা কারসাজির অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে বলেন, কোন ভাবেই অনিয়ম করা চলবে না। জনসার্থে অভিযান চালু থাকবে। বোয়ালখালী থানার অফিসার ইনর্চাজ মো. সালাউদ্দিন বলেন, বর্তমানে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। জনসাধারণের বাজার-মার্কেটিংসহ সব কিছু নির্বিগ্নে করার লক্ষ্যে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধেও নিয়মিত অভিযান চলছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন