এস.কে. সাত্তার, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে
ঝিনাইগাতীর ঈদবাজারে এখন লেট-কামারদের ভিড়। এখানে লেট-কামার বলা হয় ,স্বল্পআয়ের মানুষ যারা বরাবরই বিলম্বে আসে সাধারণত চাঁদ রাতে কেনাকাটার বাজারে। তাদেরকেই স্থানীয়ভাবে বলা হয় লেট-কামার। চরম অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কারণে যাদের ঈদের কেনাকাটা হয়, হচ্ছেনা, করে করে অবশেষে জোড়াতালি দিয়ে শেষপর্যন্ত হচ্ছে। এমন ক’জন লেট-কামারের সাথে কথা বলে জানা যায়. একেবারেই কমমূল্যে ‘ফুটপাতের’ দোকান থেকে পণ্য কিনে এসব নি¤œবিত্ত, দরিদ্র-অতিদরিদ্র মানুষ উপভোগ করবে ঈদ আনন্দ। ক’জন ব্যবসায়ীর মন্তব্য শেষমুহূর্তে বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে। আজ থেকে চাঁদরাত পর্যন্ত বেচাকেনা চলবে বলে মন্তব্য ব্যবসায়ীদের। তবে কৃষকের হাতে নগদ টাকা না থাকায় তাদের মনে নেই স্বস্তি-শান্তি ও আনন্দ। তার পরও অর্থনৈতিক সঙ্কট যতই থাকুক না কেন, সবাই চান নিজেকে এবং পরিবার-পরিজনসহ সবাইকে ঈদের আনন্দের জন্য প্রস্তুত করতে। পরিবারের সবার মমুখে হাসি ফোটাতে যে-যার সাধ্যমত চেষ্টা করে থাকেনই। কিন্তু সাধ আর সাধ্যের মধ্যে যদি ফাঁরাক হয় বিস্তর তবেই যত বিপত্তি। এখানকার বেশিরভাগ মানুষের অবস্থা হয়েছে তাই। কিন্তু ঈদে তো সবারই চাই নতুন জামা-কাপড়। অবশ্য সামর্থ্যবানদের মধ্যে ধুম পড়ে যায় শাড়ি, থ্রি-পিস, টুপিস, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট, লুঙ্গি, শিশু-কিশোরদের জন্য তৈরি পোশাক কেনাকাটার। কিন্তু এবার এখানকার মানুষের সাধ আর সাধ্যের মধ্যে কোনো সমন্বয় না থাকায় বেকায়দায় পড়তে হয়েছে সিংহভাগ মানুষকে। তারপরও শেষমুহূর্তে ধার-দেনা করে হলেও সব শ্রেণী-পেশার মানুষের ভিড় এই চাঁদরাত পর্যন্ত ঈদবাজারে। পক্ষান্তরে রমজানের এই শেষ সময়ে সকল পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি বা আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবীরা বেতন-বোনাসের টাকা হাতে পেয়ে গেছেন। ব্যবসায়ীসহ অন্য পেশার সচ্ছল ও মধ্যবিত্তরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন যার যার পছন্দমত কেনাকাটা সেরে ফেলেছেন। অপরদিকে. গারো পাহাড়ের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের ঈদ আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন যাবত তাদের উপার্জনের এক মাত্র পথ ‘পাথর মহাল’ বন্ধ থাকায়। এর সাথে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যেখানে পেটের ভাতই জোটে না সেখানে ঈদ করবে কী দিয়ে? তাই ঈদ যেন আসছে তাদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে। অপরদিকে, ভারতীয় শাড়ি আর পোশাকে সয়লাব হয়ে গেছে সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতীর হাট-বাজার। ভারতীয় হিন্দি-বাংলা, টিভি চ্যানেলগুলোর মেগাধারাবাহিক নাটক ও সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকাদের পোশাক ও ডিজাইনের প্রভাব পড়েছে ঈদবাজারে। বলতে গেলে ‘মা’ নাটকের ঝিলিকের দখলে চলে গেছে এখানকার কিশোরী/মেয়েদের পোশাক বাজার। বিভিন্ন মার্কেট ও বিপণি বিতানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, রোমিও, আওয়ারা, ঝিলিক, এক থেকে চার, লে-হালুয়া, ভালোবাসা ডটকম, পাগলু, উল্লা-লা ইত্যাদি ভরতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর জনপ্রিয় সব হিন্দি, বাংলা টিভি. সিরিয়াল ও মেগাধারাবাহিক নাটকের নায়ক-নায়িকাদের নানা পোশাক, মূলত, ঝিনাইগাতীর হাট-বাজার দখল করে রেখেছে। ঈদুল ফিতরের পোশাক বাজারকে এখন ভরতীয় বাজারই বলা যায় অনেকটা। বিনিময় বস্ত্রালয়ের মালিক শ্রী অজিত বলেন. রেডিমেট পোশাক কিছুটা বেচাকেনা হলেও থানকাপড় ও শাড়ি কাপড়ের বেচা-কেনা হচ্ছে কম। এধরনের ক্রেতাসাধারনত গ্রাম থেকে আসেন। এবার গ্রামের মানুষের হাতে টাকা না থাকায় কৃষক পরিবারের লোকদের খুব একটা মার্কেটে দেখা যাচ্ছে না। তারপর এই শেষমহূর্তে কিছু কিছু গ্রামীণ কাস্টমারের দেখা মিললেও তাদের বাজেট একেবারেই কম। সবধরনের কাপড়ের দাম বাড়তি, তাই তারা পছন্দের পোশাক কিনতে না পেরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সবধরনের কাপড়ে শতকরা ৩০/৪০ ভাগ দাম বাড়ায় হিমশিম খাচ্ছে ক্রেতাসাধারণ। রাংটিয়া গ্রামের আ. রহমান মাস্টার, আহাম্মদ আলী, বন্ধভাটপাড়া গ্রামের রুস্তম আলী, প্রতাবনগর গ্রামের আশ্রাব আলী, দীঘিরপাড় গ্রামের আরফান আলী, মুনসুর সরকার, গান্দিগাঁও গুচ্ছগ্রামের অটোরিকশা মালিক ও চালক আবুল কাশেম, ঝিনাইগাতীর মো. রাজা মিয়া প্রমুখ জানান, ২/৩ মণ ধান বিক্রি করে একটি মাঝারি মানের শাড়িও মিলছে না। আর ছেলে-মেয়েদের কাপড়ের দাম এবার অনেক বেশি। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী কেনাকাটা করতে পারছি না। পারছি না সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন