বিয়ে করতে মালয়েশিয়া যাচ্ছিল রোহিঙ্গা যুবতি ইছমত আরা। বয়স তার ২২/২৩। বাংলাদেশে বিয়ে করতে দেড়-দু’লাখ টাকার দরকার। কিন্তু এত টাকা সে পাবে কোথায়। মা নেই, বাবা নেই। এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জীবন তার দুর্বিষহ। এখানে কোন বাংলাদেশীকে বিয়ে করে আইনী বিপদে ফেলতেও চায়নি সে। কিন্তু সেন্টমার্টিনের অদূরে তাদের বহনকারী ট্রলারডুবিতে তার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে।
মালয়েশিয়াতে পরিচিত অনেকেই আছেন। ভেবেছিলো, ওখানে গিয়ে তাদের কাউকে বিয়ে করে ফেলবে। কাজ নয়, বিয়ে করতেই মালয়েশিয়া যাচ্ছিলো সে। এখন কি হবে তার? ট্রলারডুবি থেকে বেঁচে ফেরা রোহিঙ্গা নারী ইছমত আরা এমনটাই বললেন। টকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ট্রলারে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছিলেন ইছমত আরাসহ ৯০ জন মহিলা। তারাও একইভাবে ক্যাম্পের দুর্বিষহ জীবন ছেড়ে বিয়ে করে সুন্দর জীবন যাপনের উদ্দেশ্যে সবাই স্বপ্নের মালয়েশিয়া যেতে সাগর পথে ঝুঁকিপূর্ণ এই যাত্রা শুরু করে।
কিন্তু সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপের কাছে পৌঁছালে তাদের ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে ১৭ জনের প্রাণহানি হলেও তিনি বেঁচে যান অনেকেই। ৬২ জনকে জীবিত উদ্ধার করে নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা সেন্টমার্টিন জেটিতে নিয়ে আসেন।
উদ্ধারপ্রাপ্তদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এস এম জাহিদুল ইসলাম জানান, ট্রলারটিতে থাকা অধিকাংশ মানুষই টেকনাফের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে থাকা রোহিঙ্গা। এরা সবাই দালালদের মাধ্যমে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাচ্ছিল। তিনি আরো জানান, নিমজ্জিত ট্রলারটির ভেতরে আরো মানুষ থেকে থাকতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।
বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার খবর প্রায়ই আসে। এভাবে সাগরপাড়ি দিতে গিয়ে বহু নৌকাডুবির ঘটনা ও বহু হতাহতের ঘটনা ইতিপূর্বে ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার বহু চেষ্টা নস্যাৎ করেছে, বহু রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্পেও ফিরিয়ে এনেছে, যাদের মধ্যে বরাবরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ও শিশুর উপস্থিতি ছিল। এভাবে দালাল চক্র ক্যাম্প গুলোতে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন রঙ্গীন স্বপ্ন দেখিয়ে পাচার করছে রোহিঙ্গা যুবতীদের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন