অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে বাংলাদেশের খেলোয়ারদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। প্রতিবেশি দলটির লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণয়ও এর বাইরে নন। তার এমন আচরণে অবাক তার বাবা-মা ও কোচ। ক্ষোভে-দু:খে খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছেন তার মা। রাজনৈতিক ভাষায়-‘ভুখ হরতাল’।অন্যদিকে দলের খেলোয়াড়দের এমন কর্মকাÐে বিব্রত হয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক দুই অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ও কপিল দেব। বোর্ডকে বলেছেন খেলোয়াড়দের শাস্তি দিতে।
মনে রাখার মতো যুব বিশ্বকাপ কাটল রবি বিষ্ণয়ের। ১৭ উইকেট নিয়ে হয়েছেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ফাইনালে ৪ উইকেট নিয়ে ভারতকে ফিরিয়েছেন ম্যাচে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। স্নায়ুক্ষয়ী লড়াইয়ে জিতেছে বাংলাদেশই। এর বাইরেও ফাইনালটা অন্য একটি কারণে মনে থাকবে বিষ্ণয়ের। অক্রিকেটীয় আচরণের জন্য। খেলা শেষে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে জড়িয়েছেন হাতাহাতিতে। বোলিংয়ের সময় কথা বলেছেন বাজে ভাষায়। সে জন্য শাস্তিও হয়েছে। তবে বিষ্ণয়ের এমন আচরণে সবচেয়ে অবাক হয়েছেন তার বাবা মাঞ্জিলাল বিষ্ণয়। তার দাবি, পরিবারের সব সন্তানের মধ্যে রবি-ই সবচেয়ে শান্ত-শিষ্ট! তিনি বলেন, ‘বুঝতে পারছি না আমার ছেলের কী হয়েছে! আমার সন্তানদের মধ্যে রবি সবচেয়ে শান্ত-শিষ্টদের একজন। কিন্তু এ ঘটনায় কাল থেকে আমার স্ত্রী কিছু খায়নি।’
রবির বাবা যোধপুরে একটি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ম্যাচের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে তিনি ছেলের ব্যাখ্যা শুনেছেন। এ নিয়ে মাঞ্জিলালের ভাষ্য, ‘তার কাছে ঘটনার ক্রমিক ব্যাখ্যা শুনেছি। সে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সতীর্থদের বাঁচাতে গিয়ে, যখন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা তাদের ওপর আক্রমণ করে।’
অন্যদিকে এই ঘটনায় নিজেদের দেশের খেলোয়াড়দের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার এই ব্যর্থতা পীড়া দিচ্ছে ভারতের দুই সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহার উদ্দিন ও কপিল দেবকে। দোষী খেলোয়াড়দের শাস্তি চেয়েছেন তারা।
খেলার মাঠে আগ্রাসন থাকবেই, কিন্তু সেটা যদি লাগাম ছাড়িয়ে যায়, তবে দৃষ্টিকটু লাগবে তো বটেই। আর এটাই বলতে চেয়েছেন ভারতের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কপিল দেব, ‘আগ্রাসনকে আমি সব সময়ই স্বাগত জানাই, সন্দেহ নেই। তবে সেই আগ্রাসন নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। প্রতিযোগিতায় নেমে শৃঙ্খলার সীমা অতিক্রম করলে চলবে না। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় যেসব তরুণ ক্রিকেটার মাঠে এমন বাজে আচরণ করেছে, তা সত্যিই মেনে নেওয়া কষ্টকর। বোর্ডের উচিত এমন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। প্রতিপক্ষকে গালি দেওয়াকে ক্রিকেট বলে না।’
কপিল দেবের এই আক্ষেপই প্রতিধ্বনিত হয়েছে আরেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের কণ্ঠে, ‘কীভাবে এমন করতে পারেন আপনি? প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চাইলে দুর্দান্ত খেলুন। অস্ট্রেলিয়ানরা সেøজিং করলেও ব্যাটে-বলে আপনাকে অসহায় করে দেবে। আমাদের দারুণ কিছু পেসার ছিল যারা বাজে শব্দ কিংবা আচরণে বিশ্বাস করত না, তারা কেবল নিজেদের অনুপ্রাণিত করত এবং ব্যাটসম্যানকে ভড়কে দিত।’
কোচিং দলের সদস্যদেরও উচিত ছেলেদের শিক্ষা দেওয়া, মনে করেন আজহার, ‘আমি জানতে চাই কোচিং দলের সদস্যরা তরুণ এই ক্রিকেটারদের শেখানোর ব্যাপারে কী কী ভ‚মিকা পালন করেছেন। দেরি হওয়ার আগেই আইন করুন। খেলোয়াড়দের অবশ্যই আইন-কানুন মেনে চলতে হবে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন