শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বাড়ছে পানি, প্লাবিত নিম্নাঞ্চল

প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : দেশের অধিকাংশ নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় ব্র্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, করতোয়া, মহানন্দা নদী অববাহিকার চরের নিম্নাঞ্চল করে প্লাবিত হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এতে করে এসব এলাকার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন পানি বিশেষজ্ঞরা।
উত্তরাঞ্চলের সকল নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা না থাকায় অসহায় রোজাদার মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। কুড়িগ্রামে বাঁধ ভেঙে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভারি বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে কুড়িগ্রামে প্রধান কয়েকটি নদ-নদীর পানি বেড়েই চলছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার প্রায় অর্ধশত চরের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এ অবস্থায় দেখা দিয়েছে আগাম বন্যা। এসব এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ধরলা নদীর পানির তোড়ে ভেঙে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় আধা কিলোমিটার বাঁধের অংশ বিশেষ। ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে ফুলবাড়ি উপজেলার ৩ ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম। এছাড়া নদী ভাঙনের মুখে পড়েছে প্রায় ৫ হাজার মানুষ। হুমকিতে রয়েছে শতাধিক বাড়ি-ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্রিজ ও কালভার্ট। পানি বৃদ্ধির কারণে নি¤œাঞ্চলের পাট, সবজি, কলা ও আমন বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তলিয়ে গেছে উঠতি পটল, ঝিঙ্গা, ঢেঁড়শসহ বিভিন্ন সবজি, পাটসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। এ অবস্থায় কৃষকরা আগাম কেটে নিচ্ছেন তাদের সদ্য উৎপাদিত এবং প্লাবিত জমির ফসল।
ভারি বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি সকাল থেকে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। যেকোনো সময় বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে। তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট, পাটগ্রাম উপজেলার ছিটমহল দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা, হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার বৈরাতি ও আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা কলতারপাড় চরাঞ্চলের বেশকিছু এলাকায় বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে যেকোনো সময় এসব এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কন্ট্রোল রুম সূত্র জানিয়েছে। পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুলে রাখা হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট।
এদিকে তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। পানির চাপে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কানাইপাড়ায় ধসে গেছে সøুইচগেট। এতে ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। এছাড়া ভাঙনের মুখে পড়েছে ২টি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভাঙনকবলিত মানুষ আতংকিত হয়ে পড়েছে। গৃহহীন হয়েছে কয়েকশ’ পরিবার।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে গাইবান্ধার বেশকিছু জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ফুলছড়ি উপজেলার এ্যাড়েন্ডাবাড়ি, জিগাবাড়ি, ফজলুপুর, উড়িয়া, রতনপুর, বালাসীঘাট, কঞ্চিপাড়া, মাঝিপাড়া, সৈয়দপুর, ফুলছড়ি ঘাট, গণকবর। এছাড়া সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর, তারাপুর, বেলকা, শ্রীপুর, কাপাসিয়া, খোর্দ্দা। সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, কানাইপাড়া, গোবিন্দপুরসহ বিশাল জনপদ ভাঙনের মুখে পড়েছে। সাঘাটা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেনের বাড়িসহ এ এলাকার অসংখ্য মানুষের পরিবারের শত শত বিঘা জমি ও ঘরবাড়ি হারিয়ে গেছে নদীতে।
গাইবান্ধায় নদী ভাঙন অব্যাহত আছে দীর্ঘদিন ধরে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড বর্ষা এলে নদীভাঙন রোধে নামমাত্র কাজ করে। ভরা নদীতে বস্তা ফেলে ভাঙন রোধে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। কানাইপাড়া নদী ভাঙনের শিকার স্কুলশিক্ষক আতাউর রহমান জানান, নদীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরা দীর্ঘদিন বসবাস করছি। আমাদের জমি-জমা ঘর-বাড়ি সব গেছে নদীগর্ভে। এখন শুধু চাকরির পয়সায় সংসার চালাই আর নদীর দিকে তাকিয়ে হা-হুতাশ করি।
ইতোপূর্বে নদীভাঙন প্রতিরোধে এসব এলাকার মানুষ জোট হয়ে দাবি জানিয়েছিল গাইবান্ধায় এসে। বিক্ষুব্ধ মানুষ গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস ভাঙচুরও করেছিল। এর ফলে এখানে কিছুটা কাজ হয়েছিল। গত দুই বছর এখানে ভাঙন প্রতিরোধে কোনো কাজ হচ্ছে না। এতে করে ভাঙনের গতি আরো বেশি হয়েছে।
এদিকে বন্যাপূর্বাভাস কেন্দ্র জানায়, পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল ৯০টি স্টেশনের মধ্যে ৫৫টির পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। হ্রাস পেয়েছে ২৫টির পানি, অপরিবর্তিত ৩টি এবং তথ্য পাওয়া যায়নি ৭টি স্টেশনের।
নদী ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাউবো মহাপরিচালক বলেন, এরকম কোনো অভিযোগের কথা আমার জানা নেই। তিনি বলেন, নদী ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি কাজে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কী পরিমাণ অর্থ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছেন জানতে চাইলে বলেন, বর্তমানে বরাদ্দ রয়েছে ৩শ’ কোটি টাকার মতো। দেশের মূল্যবান সম্পদ রক্ষায় এই বরাদ্দ কমপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকা হওয়া প্রয়োজন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন