শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বাড়ছে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব

দর্শনা পৌর এলাকায় পানিবদ্ধতা

প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নূরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে

পৌরসভা গঠনের পর থেকে দীর্ঘদিনেও দামুড়হুদার দর্শনা পৌর এলাকার পয়ঃ ও পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ড্রেন নির্মিত হয়নি। যতটুকুই হয়েছে তার বেশিরভাগই পরিষ্কার ও সংস্কারের অভাবে অকেজো হয়ে পড়ায় বর্তমানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পৌর এলাকার রামনগর, আজমপুর ও মহম্মদপুর এলাকায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন স্থানে পানি জমে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে ওইসব এলাকার মানুষ। স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা দূর করতে প্রয়োজনীয় ড্রেন নির্মাণের দাবি এসকল এলাকার মানুষের। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে পৌর এলাকার হাট-বাজার ও বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার ড্রেনেজ ব্যবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। রেলবাজারের মেইন রোড থেকে হার্ডওয়্যার পট্টি হয়ে মাছ বাজারের ভিতরের ড্রেনটি দিয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই ড্রেনের উপচেপড়া পানি ও কাদায় বাজারের ভিতর সয়লাব হয়ে যায়। এ ড্রেনটির গন্তব্যস্থল ছিল বাজার মাঠের উত্তরে কেরুর একটি গর্ত। ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে বর্তমানে সেটি প্রায় ভরাট হয়ে গেছে এবং গর্তটির পূর্বদিকে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য মাটি ফেলে ভরাট করায় গর্তটির আয়তনও কমে গেছে। অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে এখন গর্তের পানি এ ড্রেনটি দিয়ে উল্টো মাছ বাজারে ঢুকে পড়ে। রেলবাজারের কাঁচাবাজারের ড্রেনটির উপরের সøাবগুলো ভেঙে বসে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন হতে পারে না। এ ড্রেনটির গন্তব্য স্থলও গর্তের মালিকরা মাটি ফেলে ভরাট করে ফেলছে। ফলে আর কয়েক বছর পর বাজারের পানি বের হবার আর কোন রাস্তা থাকবে না। বাসস্ট্যান্ডের দর্শনা হল্টের তেঁতুল তলা থেকে বাসস্ট্যান্ড হয়ে রশিক শাহ’র মাজারের দিকের ড্রেনটির অবস্থা করুণ। দীর্ঘদিন ড্রেনটি পরিষ্কারের অভাবে ও ড্রেনের উপরের স্লাব ভেঙে বসে যাওয়ায় ড্রেনটি ভরাট হয়ে প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। ড্রেনটি সংস্কার না করলে অল্প কিছুিদনেই এটির আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না। পৌরসভার প্রথম পর্যায়ে নির্মিত শ্যামপুর, পরানপুর, রামনগর, হল্টচাঁদপুর, ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের মধ্যে পুরাতন কিছু ড্রেনের বর্তমানে কোন অস্তিত্বই নেই। দীর্ঘদিন ধরে এসব ড্রেন ভেঙে পড়ে থেকে ভরাট হয়ে যাওয়ায় অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থেকে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতি বছর সরকারি কোষাগার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে পৌর এলাকার বিভিন্ন মহল্লায় ড্রেন নির্মাণ করা হলেও জনসচেতনতা ও সংশ্লিষ্টদের তদরকির অভাবে বেশিরভাগ মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারে না। বেশিরভাগ ড্রেনই অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত হওয়ায় হাতেগোনা কিছু মানুষ ছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকার বেশিরভাগ মানুষই এর সুবিধা ভোগ করতে পারছে না বলে অভিযোগ অনেকের। পৌর এলাকার রামনগর গ্রামের রাস্তার উত্তর পাশের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষাকালে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বছরের বেশিরভাগ সময়ই এ অবস্থা থাকায় ওই এলাকার মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। বাসস্ট্যান্ড থেকে রেলবাজার পর্যন্ত মেইন রোডের দুই পাশ দখল করে অবৈধ দোকানপাট গড়ে ওঠায় পুরো বর্ষাকাল জুড়ে রাস্তার পানি নিষ্কাশিত হতে পারে না। রাস্তার দুই পাশ কাদা-পানিতে একাকার হয়ে থাকে। ফলে এ রাস্তা দিয়ে চলাচলকারীদের পড়তে হয় চরম বিপাকে। পৌর এলাকার আজমপুর ও মহম্মদপুর মহল্লা দু’টি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। জায়গার স্বল্পতার কারণে এ মহল্লা দুটির মানুষ গাদাগাদি করে বসবাস করে। তার উপর এ এলাকা দু’টির রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এ দু’টি মহল্লার বেশিরভাগ এলাকাই নিচু। এসব এলাকায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে বছরের দীর্ঘ সময় ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর। দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে এ পানি পচে দুর্গন্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ ঘটছে। ফলে এসব এলাকায় বসবাসকারী নানা বয়সের মানুষের মধ্যে আমাশয়, ডায়রিয়া, জন্ডিস, চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এছাড়া আজমপুর মহল্লায় হীরা সিনেমার দক্ষিণ পাশে এলাকায় একটি ডোবা রয়েছে। আশপাশ ড্রেনের পানি এসে এখানে পড়ে। দীর্ঘদিন এটি সংস্কার না হওয়ায় এর পানি পচা ও দুর্গন্ধময়। সেইসাথে কচুরিপানায় ভরা। কচুরিপানা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে মশা-মাছির বিস্তার ঘটে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু জ্বর ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই সরেজমিনে তদন্ত করে এসব এলাকার স্থায়ী জলাবদ্ধতা দূরীকরণে পৌর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন এমনটাই দাবি ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন