পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত। ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর পানি বৃদ্ধিতে ভাঙন কবলে পড়েছে। আমাদের সংবাদদাতার তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন-
আনোয়ার জাহিদ, ফরিদপুর থেকে জানান, ফরিদপুর চরভদ্রাসন এলাকার নদী ভাঙন তীব্রতর হচ্ছে। পদ্মা নদীতে ভাঙন, ঝুঁকিতে আছে প্রায় সাড়ে ৩’শ পরিবার। পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোতের পাশাপাশি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে পানি। ফলে নদীর রক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। পদ্মা নদী বেষ্টিত ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চর হরিরামপুর ইউনিয়নের জাকেরহুরার শিকদারের ডাঙ্গী এলাকায় এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে লোহারটেক কোলের সংযোগ বাঁধেও দেখা দিয়েছে ভাঙন। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে অস্তিত্ব সংকটে পরার সম্ভাবনা রয়েছে সবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও। সেইসঙ্গে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে এলাকার প্রায় সাড়ে তিনশ’ পরিবার এবং জাকেরহুরা একমাত্র ব্রিজটিও। গতকাল বৃহস্পতিবার চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিলা কবির ত্রপা এ ভাঙনের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ভাঙন এলাকায় কিছু বালুর বস্তা পানির স্রোতে ভেসে গেছে। তবে, সেখানে পুনরায় বালুর বস্তা ফেলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য তিনি এলাকাবাসী অনুরোধ করছেন।
এ বিষয়ে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা জানান, ভাঙনরোধে কাজ চলছে। সবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গী গ্রামে দুইশ’ মিটার স্থায়ী বাঁধের কাজটি পুরোপুরি সম্পন্ন করা যায়নি। এবছর পূর্ব সতর্কতামূলক প্রকল্প এলাকা ঢালু করে তার ওপর জিও ব্যাগের ডাম্পিং করা হয়েছে। ওই স্থানে ভাঙনের খবর পেয়েছি। পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা, পদ্মা যমুনা অববাহিকায় অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে প্রতিদিনই মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, এ উপজেলার পদ্মা যমুনা অববাহিকায় প্রবাহিত একমাত্র শাখা নদী ইছামতী। প্রতিদিন পানি বৃদ্ধিতে ইছামতী যেন ভরা যৌবনে ফিরে এসেছে। এতে করে ইছামতীর সংযোগ খাল দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফসলের মাঠে পানি প্রবেশ করছে। ফলে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কাচা মরিচের ক্ষেতে পানি প্রবেশ করায় বিপাকে পড়েছে উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক। ক্ষেতে পানি প্রবেশ করায় অনেকেরই মরিচ গাছ মরে যাচ্ছে। দ্রুত পানি আসায় মরিচের আমদানিও যেন অনেকটাই কমে গেছে হাটবাজারেও। এর ফলে বাজারে মরিচের দামও অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
শরীয়তপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, দেশের মধ্যাঞ্চলীয় শরীয়তপুরে বন্যার পানিতে চরাঞ্চলের নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গতকাল বেলা ৩ টায় সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার অতিক্রম করেছে। এর ফলে জাজিরা, নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মা মেঘনা নদী বিধৌত এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান সোহেল বলেন, টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পানিতে উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি উঠতে শুরু করেছে। এদিকে নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল গুলোতে বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছ। রাস্তা ঘাট ও বাড়ি ঘরে পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার পরিবার। পদ্মানদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধি পেয়ে সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২ দিনে পানি বৃদ্ধির ফলে নড়িয়া-জাজিরা সড়কের মোক্তারচর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি এলাকায় প্রায় ৩০০ মিটার সড়ক তলিয়ে গেছে। ফলে ওই রাস্তায় গণ-পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বিশেষ করে পৌর এলাকার ফকির মাহমুদ আকন কান্দি ও জাজিরা ইউনিয়নের পাতালিয়া কান্দি, দুব্বাডাঙ্গা, ভানু মুন্সি কান্দি, হাওলাদার কান্দি, লখাই কাজি কান্দি, জব্বার আলী আকন কান্দি, জব্বার মোল্যা কান্দি ও গফুর মোল্যা কান্দি ওই এলাকায় প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা, নওয়াপাড়া, নশাসন, জপসা, ভোজেশ্বর ও সদর উপজেলার পালং, তুলাসার, আংগারিয়া, বিনোদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন নিচু এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। নিচু এলাকার কাচা রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। ওই সব এলাকায় গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে। হাঁস মুরগী পশুপাখি নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন