ঢাকার সাভারে 'নিউ আদর' নামে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে জাহাঙ্গীর আলম (৩৮) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৮জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ রাতে অভিযান চালিয়ে দুই জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে মালিকসহ অন্যরা।
শুক্রবার রাতে সাভার পৌর এলাকার রেডিও কলোনী মহল্লার উত্তরা মার্কেটের তৃতীয় তলায় ‘নিউ আদর’ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে দুই জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে রবিউল হোসেন (২০) ও লাবিব আহম্মেদ (২৭)। রবিউল ধামরাইয়ের ছোট চন্দ্রাই দক্ষিনপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে। লাবিব আহম্মেদ গাজিপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার আশোলাই গ্রামের আবদুস সোবাহানের ছেলে। তারা দুই জনই নিউ আদরের ট্রেইলানিং প্রশিক্ষক ছিলেন।
এঘটনায় রাতেই নিহতের বড় ভাই মানিক মিয়া বাদী হয়ে নিউ আদরের পরিচালক আরিফুল ইসলাম জুয়েল (৪০), পার্টনার মালিক আরিফুল ইসলাম রাজু (৩০), রোমান মৃধা (৩৫), ট্রেইলানিং প্রশিক্ষক রবিউল হোসেন (২০) ও লাবিব আহম্মেদ (২৭)সহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩ জনকে আসামী করে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা (নং-২৯) দায়ের করেছেন।
মানিক মিয়ার অভিযোগ, সাভার থানা রোডে বিসমিল্লা হোটেলে তাকে সহযোগীতা করতো ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম (৩৮)। কিন্তু জাহাঙ্গীর মাদকাসক্ত হয়ে পরলে তাকে সুস্থ্য করার জন্য নিউ আদর মাদক নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালকের সাথে মাসে ১০হাজার টাকা চুক্তিতে রাজী হোন। তারাই জাহাঙ্গীরকে বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বাসা থেকে নিয়ে যায়। এরপর ভাইয়ের সাথে আর কোন যোগাযোগ হয়নি। ছোট ভাইকে তারা পিটিয়ে হত্যা করে লাশ এনাম মেডিকেলে ফেলে পালিয়ে যায় তারা। তিনি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছেন।
নিহত জাহাঙ্গীর আলম ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানার বড়ইকান্দি গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দিনের পুত্র। সে পরিবারের সাথে পৌর এলাকার তালবাগ মহল্লার ভাড়া বাসায় থেকে বড়ভাইয়ের হোটেল ব্যবসায় সহযোগীতা করতেন।
সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো: মনিরুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর থেকেই ওই মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের ৩জন মালিকই পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এছাড়া গ্রেফতার রবিউল ও লাবিব প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চিকিৎসার নামে জাহাঙ্গীরকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছে। শনিবার দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
তবে আদরে ভর্তি একাধিক মাদকাসক্ত রোগী শুক্রবার রাতে পুলিশের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রায় রাতেই হাত-পা বেঁধে, মুখে কাপড় গুজে দিয়ে জিআই পাইপ দিয়ে তাদের নির্যাতন করা হয়। দেখা করতে দেয় না তাদের স্বজনদের সাথে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সাভার উপজেলার মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে কোন তদারকি না থাকায় দাগী আসামীরা আত্মগোপনে থাকছে। এছাড়া মাদক নিরাময়ের আড়ালে চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা ও ইয়াবার মতো মাদক।
প্রসঙ্গত; সাভারের রেডিও কলোনী এলাকার ‘নিউ আদর’ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন এক মাদকাসক্তকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। শুক্রবার পুলিশ সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল থেকে লাশটি উদ্ধার করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন