বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

দক্ষিণ এশিয়ায় ‘নতুন ফ্যাক্টর’ তুরস্ক!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৮:০৯ পিএম

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও সউদী আরবের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পর তুরস্ক এখন তার অর্থনৈতিক, সামরিক ও ইসলামিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় আঙ্কারার অবস্থান এখনও প্রান্তিক পর্যায়ে, কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে সেটা এমন না-ও থাকতে পারে। যে সব কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের অবস্থান জোড়ালো হতে পারে, সেগুলো হলো: তাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি; চীনের সাথে তাদের বন্ধুত্ব; ভারতের সাথে তাদের তিক্ত সম্পর্ক; এবং প্রতিবেশীদের সাথে ভারতের অসুখী সম্পর্ক।

দক্ষিণ এশিয়ায় তুরস্কের এগিয়ে যাওয়ার সহায়ক শক্তি হলো পাকিস্তান। এ অঞ্চলে তুরস্কের সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পর্ক হলো পাকিস্তানের সাথে। রিয়াদ তার প্রভাব বলয় অর্গানাইজেশান অব ইসলামিক কোঅপারেশানে (ওআইসি) কাশ্মীর ইস্যুতে জোরালো এবং অর্থপূর্ণ ভূমিকা রাখতে অনীহা দেখানোর কারণে তাদের ব্যাপারে আশাভঙ্গ হয়েছে ইসলামাবাদের। অন্যদিকে, তুরস্ক এই ইস্যুতে পাকিস্তানকে জোরালো ও অব্যাহত সমর্থন দেয়ার কারণে আঙ্কারা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক একটা ক্রমবর্ধমান উন্নতির দিকে চলেছে।

এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সউদীর অর্থনৈতিক চাপের কারণে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের কুয়ালালামপুরে ইসলামী দেশগুলোর সম্মেলনে অংশ নিয়ে ওআইসিকে কাশ্মীর ও অন্যান্য মুসলিম ইস্যুতে চাপ দিতে না পারার কারণে আফসোস প্রকাশ করেছেন। সম্মেলনের আয়োজন করেছিল মালয়েশিয়া এবং তুরস্ক, ইরান, কাতার ও ইন্দোনেশিয়া এতে অংশ নিয়েছিল। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইমরান কুয়ালালামপুর সফর করে মালয়েশিয়ার নেতা মাহাথির মোহাম্মদের সাথে সম্পর্ক মেরামত করেছেন।

তুরস্ক-পাকিস্তানের সম্পর্কের যে উন্নতি হচ্ছে, তার সর্বশেষ প্রমাণ হলো গত সপ্তাহে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের ইসলামাবাদ সফর। গত শুক্রবার পাকিস্তানের পার্লামেন্টে দেয়া এক বক্তৃতায় এরদোগান বলেন, ‘তুরস্ক বিশ্বাস করে যে, দমনমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে কাশ্মীর ইস্যুর সমাধান হবে না। এ জন্য ন্যায় বিচার আর শান্তির নীতি লাগবে।’ তিনি আরও বলেন, তুরস্ক জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে প্রকাশ্যেই বলেছে যে কাশ্মীরিদের সংগ্রাম ন্যায্য এবং ওআইসির সকল বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করেছে তারা।

পাকিস্তানীরা স্মরণ করেন যে, ২০০৫ সালে আজাদ কাশ্মীরে যখন ভূমিকম্প হয়েছিল, তখন তুরস্ক ১০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা এবং ৫০ মিলিয়ন ডলারের ত্রাণ সহায়তা, এক মিলিয়ন কম্বল, ৫০ হাজার০ টন ময়দা এবং ২৫ হাজার টন চিনি দিয়ে সহায়তা করেছিল।

চীনের পর তুরস্ক পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের সরবরাহকারী হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পর তুরস্ক-পাকিস্তানের সামরিক সম্পর্ক দ্রুত গতিতে এগুচ্ছে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে, পাকিস্তান নৌবাহিনী ১৭ হাজার টনের একটি ফ্লিট ট্যাঙ্কার বহরে যুক্ত করে, যেটা তুরস্কের প্রতিরক্ষা কোম্পানি এসটিএমের সাথে যৌথভাবে তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে জানা গেছে, করাচি শিপইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসে নির্মিত এটা এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় জাহাজ।

২০১৮ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তান নৌবাহিনীর জন্য চারটি করভেট জাহাজ সরবরাহের জন্য বহু বিলিয়ন ডলারের একটি দরপত্রে জিতে যায় তুরস্ক। এটাকে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আঙ্কারা পাকিস্তানের কাছ থেকে এমএফআই-১৭ সুপার মুশহাক বিমান কিনছে, পাকিস্তানের সাবমেরিনগুলো আপগ্রেড করে দিচ্ছে এবং যৌথভাবে আরেকটি ফ্লিট ট্যাঙ্কার জাহাজ তৈরি করতে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তানের কাছে ৩০টি এটাক হেলিকপ্টার বিক্রির জন্য চুক্তি চূড়ান্ত করেছে তুরস্ক।

বাংলাদেশের সাথেও তুরস্কের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। মিয়ানমার থেকে বহু লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর ভারত আর চীন যখন সুস্পষ্টভাবে মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছিল, তখন উদারভাবে অবরুদ্ধ বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়েছে তুরস্ক।

বাংলাদেশ ও তুরস্কের অর্থনৈতিক সম্পর্ক যদিও এখনও দুর্বল এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ যেখানে মাত্র ৮০০ মিলিয়ন ডলারের মতো, এরপর দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক যথেষ্ট বেড়েছে। ২০১৩ সালে তুরস্ক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অটোকার কোবরা হালকা সাঁজোয়া যান সরবরাহ করে। ২০১৫ সালে তুরস্ক বাংলাদেশকে সরকার পর্যায়ে গাইডেড মিসাইলবাহী ফ্রিগেট কেনার প্রস্তাব দেয়। ২০১৮ সালে, তুরস্কের ফার্ম ডেলটা ডিফেন্সকে এক বিলিয়ন ডলারের ৬৮০টি হালকা সাঁজোয়া যান তৈরির কাজ দেয়া হয়। ২০১৯ সালের মার্চে, মাঝারি পাল্লার এক রেজিমেন্ট গাইডেড মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সরবরাহের দায়িত্ব পায়। বাংলাদেশের নৌবাহিনী তুরস্কের নৌবাহিনীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, যারা বাংলাদেশের সবচেয়ে চৌকষ নৌ ইউনিট সোয়াদকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের তিন হাজারের বেশি সামরিক কর্মকর্তা এ পর্যন্ত তুরস্কে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

তুরস্ক শ্রীলংকারও দ্বারস্থ হচ্ছে কারণ ভারত মহাসাগরে কৌশলগত অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে শ্রীলংকা যেখানে চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো সুবিধা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। মানবাধিকার ইস্যুতে পশ্চিমাদের থেকে কলম্বো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এবং তাদের সাথে চীন ও পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের বিষয়গুলোকে কাজে লাগাতে চায় তুরস্ক।

নয়াদিল্লী-ভিত্তিক তুরস্কের রাষ্ট্রদূত দেমেত সেকেরকিয়োগলুর সাম্প্রতিক কলম্বো সফর ছিল গুরুত্বপূর্ণ। শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসা তুরস্ককে অনুরোধ করেছেন যাতে তারা শ্রীলংকার পর্যটন খাতের উন্নয়নে সহায়তা করে কারণ টার্কিশ এয়ারলাইন্সের বিমান প্রতিদিনই শ্রীলংকায় যাতায়াত করছে। দুই পক্ষ প্রতিরক্ষা খাত নিয়েও আলোচনা করেন এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের ব্যাপারেও সম্মত হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সেকেরকিয়োগলু রাজাপাকসাকে বলেন যে, প্রেসিডেন্ট এরদোগান আবার শ্রীলংকা সফরে আগ্রহী। ২০০৫ সাল সর্বশেষ শ্রীলংকা সফর করেন এরদোগান। ২০০৪ সালের এশিয়ান সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো সফরের অংশ হিসেবে তখন শ্রীলংকা গিয়েছিলেন তিনি। সে সময় সুনামি-আক্রান্ত দক্ষিণ শ্রীলংকায় ৪৫০টি বাড়ির সমন্বয়ে গঠিত একটি গ্রাম নির্মাণ করে দিয়েছিল তুরস্ক। সূত্র: এসএএম।

 

কি-ওয়ার্ড: দক্ষিণ এশিয়া, তুরস্ক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Abdur Rahman sojib ৭ জানুয়ারি, ২০২১, ৯:০৬ পিএম says : 0
Khubi valo news chilo aita
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন