কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা
সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে যমুনা নদীর ভাঙন জনপদের মানুষ বর্ষার আগমনে নৌকা ও লগি-বৈঠা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। কাজিপুর উপজেলার পূর্ব পাশ দিয়ে বহমান যমুনা নদী আর পশ্চিম পাশ দিয়ে ইছামতি নদী। নদীর পাড়ের ইউনিয়নের দুই লাখ মানুষ বাস করছে। তিন দশক আগে থেকে যমুনা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত ৩৫ বছরে রাক্ষুসি যমুনা গ্রাস করেছে ভাঙন জনপদের প্রায় ১৫০টি গ্রাম। এরপর গত ১০ বছর আগে যমুনা নদীর পূর্ব পাশে চর জেগে উঠেছে। যা নতুন মাইজবাড়ী চর নামে পরিচিত। অথৈ জলে ঘেরা ওই চরে বসতি গড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে চরে প্রায় ১০০০ পরিবার বসতবাড়ি করেছে। চরবাসীর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। বার বার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে নিস্ব মানুষগুলো পেশা পরিবর্র্তন করেছে। তাদের জন্য নৌকার প্রয়োজন। এছাড়া চর এলাকার মানুষ মূল ভূখ-ের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য নৌকার কোন বিকল্প নেই। নৌকা তাদের একমাত্র ভরসা। ঢেকুরিয়া, মেঘাই, খাসরাজবাড়ী, রঘুনাথপুর, খুদবান্ধী, নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, চরগিরিশ, শালগ্রাম, চরছিন্না যমুনা নদীর ঘাট এলাকায় থেকে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক নৌকা বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করে। প্রতিদিন ওই সকল ঘাট থেকে নৌকায় যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করছে। যমুনা পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকার সাথে নৌকা জড়িত। এজন্য বর্ষা মৌসুম আসলেই প্রতিবছর নৌকা তৈরি ও পুরাতন নৌকা মেরামত করে। একটি ছোট নৌকা তৈরি করতে ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা আর বড় নৌকা ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা খচর হয়। মাঝি-মাল্লার ছোট নৌকাগুলো লগি, বৈঠার সাহায্যে কিংবা পাল তুলে নদীর বুকে চলাচল করছে। এছাড়া শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকা রয়েছে। এগুলো দূরপালার পরিবহন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। নৌকা ছাড়া যমুনা ও ইছামতি পাড়ের মানুষের কোন গতি নেই। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গ্রামে গ্রামে কারিগররা নৌকা তৈরি করছে। আর নৌকার মালিকরা নৌকা তৈরির উপকরণ সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। মানিকপটর গ্রামের নৌকা তৈরির কারিগর (মিস্ত্রি) আয়নাল ম-ল বলেন, প্রতি বছর এ সময়ে নৌকা তৈরির হিড়িক পড়ে যায়। একটি নৌকা তৈরি করতে এক থেকে দুই মাস সময় লাগে। নৌকার আকার ও প্রকার ভেদে মজুরি নেওয়া হয়। যমুনার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রিত মোখলেছুর রহমান জানায়, নৌকা ছাড়া জীবন-জীবিকা অচল। তাই বেঁচে থাকার জন্য নৌকা খুবই প্রয়োজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন