গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা
গোপালগঞ্জে এক প্রভাবশালী যাতায়াতের রাস্তা কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দিয়েছেন। তারপর একের পর এক মামলা দিয়ে গ্রামবাসীকে হয়রানি করছেন বলে গ্রামবাসী ওই প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নের দক্ষিণ জলিরপাড় তালুক গ্রামের অধিবাসীরা পিএলআরে থাকা কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের সহকারী কৃষি অফিসার অজিত ম-লের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন। অজিত ম-ল ওই গ্রামের দ্বরিক ম-লের ছেলে। অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তার স্ত্রী করুণাময়ী ম-ল দক্ষিণ জলিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তিনি গ্রামের মানুষকে হয়রানি করে চলেছে বলেও তারা অভিযোগ করেন। জলিরপাড়-ফুলকুমারী সড়ক থেকে দক্ষিণ জলিরপাড় তালুক সার্বজনীন কালিবাড়ি মন্দির হয়ে গোলদার বাড়ি পর্যন্ত ৮শ’ ফুট রাস্তা নির্মাণের বিরোধকে কেন্দ্র করে অজিত ওই গ্রামের মানুষের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা দায়ের করেছেন। ওই গ্রামের পরান দত্ত, পরিতোষ দত্ত, ধন্য ম-ল সেনানী ম-ল, নিলু ম-ল বলেন, জলিরপাড়-ফুলকুমারী সড়ক থেকে দক্ষিণ জলিরপাড় তালুক সার্বজনীন কালিবাড়ি, সরকার বাড়ি, ম-ল বাড়ি, দত্ত বাড়ি, ও গোলদার বাড়ি যাতায়াতের জন্য একটি পায় হাঁটা রাস্তা রয়েছে। ওই রাস্তার জায়গার মালিক অজিত ম-ল ও বিপুল ম-ল। এ রাস্তা দিয়ে ওই গ্রামের শতাধিক পরিবারের সদস্যরা যাতায়াত, কৃষিপণ্য পারবহন করেন। মন্দিরের ধর্মীয় অনুষ্ঠান যোগ দিতে হাজার হাজার মানুষ এ রাস্তাটি ব্যবহার করেন। গুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তাটি ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় প্রশস্তকরণ ও মাটি ফেলার উদ্যোগ গ্রহণ করে জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদ। রাস্তার কাজ করতে গেলেই বাঁধা দেন অজিত ম-ল ও তার স্ত্রী করুণাময়ী ম-ল। তিনি তার জায়গায় রোপণ করা গাছের মাথা ভেঙে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। নিজের জায়গায় তারকাটা দিয়ে ঘিরে মানুষের চলাচলের পথ সংকুচিত করেছে। এতে বাধা দিলে সে ফের মামলা দায়ের করে। ওই পথে চলতে গিয়ে অনেকেই রাতের অন্ধকারে কাঁটাতারের খোঁচায় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছেন। রাস্তায় কাঁটাতারের বেড়া টিকিয়ে রাখতে অজিত আদলতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন। আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সম্প্রতি সে আদালতে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য অবেদন করেছে। গত ১৮ জুন এ নিয়ে গ্রামবাসী ও অজিতের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অজিত ও তার স্ত্রী মাথা কেটে গোপালগঞ্জ আড়াইশ’ বেড জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়। তিনি এ ঘটনায়ও গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এছাড়া ১৮ জুন রাতে নিজের ঘরের সিঁধ কেটে চুরি ও ডাকাতির নাটক সাজিয়ে পুলিশের কাছে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। ওই গ্রামের ক্ষিতিশ ম-ল অভিযোগ করে বলেন, অজিতের গাছের আম চুরির ঘটনায় ২০০৫ সালে সম্পদ বৈদ্যকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। পরে অজিতের স্ত্রী করুণাময়ী সম্পদ বৈদ্যসহ ৮/১০ জনের বিরুদ্ধে উল্টো চুরির মামলা দায়ের করেন। এছাড়া করুণাময়ী তার স্কুলের দুই শিক্ষক বীণাপাণী বাকচী ও শোভারাণী বৈরাগীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দিয়ে অযথা হয়রানি করেন। দক্ষিণ জলিরপাড় তালক গ্রামের সভাপতি ও মন্দির কমিটির সভাপতি জগদীশ ম-ল বলেন, অজিত ও তার পরিবারের অন্তত ৪ জন সরকরি চাকরি করেন। তাদের হাতে প্রচুর টাকা আছে। পক্ষান্তরে গ্রামের মানুষ গরিব, নিরীহ ও অসহায় প্রকৃতির হওয়ায় অজিত ও তার স্ত্রীর কোনো কাজে বাধা দিলেই তারা গ্রামবাসীকে মামলা দিয়ে হয়রানি করে। গ্রামবাসী টাকার অভাবে মামলা লড়তে পারে না। ফলে অজিত মামলায় একতরফা ফায়দা লোটে। গ্রামের মানুষ মামলার ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না। অজিত তার জায়গা কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। তারপর গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে নাজেহাল করছে। অজিত মন্দিরের জায়গা দখলে নিয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। জলিরপাড় ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার নারায়ণ গোলদার বলেন, কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় ওই রাস্তার কাজ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু বাধার কারণে কাজ করা সম্ভব হয়নি। জলিরপাড় ইউপি চেয়ারম্যান অখিল বৈরাগী বলেন, বিপুলের জায়গা দিয়েই গ্রামের লোকজন যাতায়াত করছে। অজিত রাস্তার জন্য জায়গা দিতে চান না। রাস্তা নিয়ে তিনি ওই গ্রামের মানুষের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন বলেও গ্রামের লোকজন আমাকে জানিয়েছেন। আমরা বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করছি। অভিযুক্ত অজিত ম-ল মামলা দায়েরের কথা স্বীকার করে বলেন, আমি জনগণের রাস্তা বন্ধ করিনি। আমি রাস্তার জন্য ২ হাত জায়গা ছেড়ে দিয়েই তারা কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছি। ওই জমির ফসল আমি ঘরে আনতে পারি না। তাই গাছ লাগিয়ে তার কাঁটার বেড়া দিয়েছি। গ্রামের লোকজন আমার গাছ ভেঙেছে। আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মারপিট করেছে। জীবনের নিরাপত্তার জন্য মামলা করেছি। আমি ও আমার স্ত্রী কাউকে মামলা দিয়ে হয়রানি করেনি বা করছিন না। আমি মন্দিরে জায়গা দখল করিনি। বরং মন্দিরে ২ হাত জায়গা ছেড়ে দিয়েছি। ঘরে সিঁধ কেটে চুরি ও ডাকাতির মামলা দায়ের করার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান অজিত ম-ল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন