মো. গোলাম ফারুক, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে
দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়ায় পৌর এলাকার সরকারি শাহ্ এয়তেবারিয়া কলেজে অধ্যক্ষসহ শিক্ষকের অধিকাংশ পদ শূন্য থাকায় চলতি বছরে একাদশ শ্রেণীতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি নিয়ে অভিভাবকরা চরম উদ্বিগ্নতায় ভুগছে। দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দক্ষিণে পৌর এলাকা তালোড়ার রেলস্টেশন সংলগ্ন মনোরম পরিবেশে অবস্থিত সরকারি শাহ্ এয়তেবারিয়া কলেজ। ব্যবসা-বাণিজ্য সমাদৃত ঐতিহ্যবাহী তালোড়া গুরুত্ব বিবেচনা করে উচ্চশিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে এলাকার শিক্ষানুরাগী ও বিদ্যুৎসাহী ব্যক্তির অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধায় ১৯৭০ সালে এই কলেজটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে তালোড়ার কৃতী সন্তান সাবেক পাট প্রতিমন্ত্রী বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা এবিএম শাহাজাহানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়। সরেজমিনে কলেজটিতে গিয়ে দেখা যায়, কলেজটি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। শিক্ষকসহ কর্মচারী সংকট। কলেজটি ১৩ জন শিক্ষকের স্থলে দীর্ঘদিন যাবত ৩ জন শিক্ষক দ্বারা কলেজটি পরিচালিত হয়ে আসছিল। চতুর্থ শ্রেণীর ৯ জন কর্মচারীর স্থলে কর্মরত রয়েছেন ৫ জন। কলেজটির গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা কোনো অফিস সহকারী নেই। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, হিসাবরক্ষণ, ডেমোনেস্টর ৩টি পদ থাকলেও ৩টি পদই শূন্য। ফলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বিভিন্ন সময় অফিস সহকারীদের কাজ করতে হয়। জ্ঞান পিপাসুদের জন্য এলাকার মধ্যে অন্যতম বিদ্যাপীঠ হলেও এসব সমস্যা সমাধানের তেমন কোনো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি। এতে কিছু সমস্যার পরও এ কলেজের শিক্ষার মান উপজেলার নজর কাড়ার মতো। এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলাল উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে তিনি “দৈনিক ইনকিলাব”-কে জানান, বর্তমানে এ কলেজেটিতে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩৪ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৫৫ জন, মানবিক বিভাগে ৭৯ জন অধ্যয়নরত রয়েছে। বাণিজ্য বিভাগ থাকলেও এ বিভাগে কোনো ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত নেই। চলতি বছরে একাদশ শ্রেণীর ভর্তির জন্য ৩২৭ জন প্রথম তালিকাভুক্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যেই ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শিক্ষকের শূন্যতার কারণে তালিকাভুক্ত ছাত্রছাত্রী অভিভাবকরা কলেজে এসে তাদের ছেলেমেয়েদের ভর্তি করতে এসে শিক্ষকের স্বল্পতার কথা জেনে হতাশায় পড়েছেন। সেই সাথে লেখাপড়া নিয়ে চরম উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছেন। সদ্য যোগদানকৃত ২ জন শিক্ষক একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির পূর্বে যোগদান করায় এরপরও কলেজটিতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি আরো জানান, কলেজটিতে জীববিদ্যা, রসায়নসহ গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় স্থানীয় স্বীকৃত ছাত্রদের দিয়ে পার্টটাইম পাঠদান করানো হচ্ছে। অফিস সহকারী সকল পদ শূন্য থাকায় কলেজের অফিসিয়াল কার্যক্রমে মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। অধিকাংশ সময় তিনি নিজেই অফিসের কার্যক্রমগুলো সম্পন্ন করে আসছেন। এই সকল সমস্যার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহুবার লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু গ্রামপর্যায়ে এই সরকারি কলেজে কেউ আসতে চায় না। আবার অনেকে এলেও তদবির করে জেলা শহরে চলে যায়। একই ক্ষেত্রে শিক্ষকদের বেলাতেও। ফলে কলেজটি অধিকাংশ সময় শিক্ষক সংকটে থাকতে হয়। এসব ব্যাপারে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিলে গ্রামপর্যায়ে এসব সরকারি কলেজের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমন লেখাপড়ার মানও উন্নয়ন হবে। তিনি এই বিষয়ে শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন