মোঃ মেরাজ উদ্দিন, শেরপুর থেকে
শেরপুর জেলার শ্রীবরদীর খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের পূর্ব খড়িয়া কোনাপাড়ার দরিদ্র কৃষক হাশেম আলীর গোটা পরিবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল গত ৪/৫ মাস আগে। এ সময় তার সাড়ে তিন বছরের কন্যা শিশু সাহেরা খাতুনের মৃত্যু হয়। সে ও অল্পের জন্য বেঁচে যায়। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল তাদের ও তাদের আশপাশের বাড়ীগুলোতে কোন স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ল্যাট্রিন নেই। আর্থিক ধৈন্যতার কারণে স্যানিটারি ল্যাট্রিন তৈরি করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। জনপ্রতিনিধি বা কেউই তাদের এ ব্যবস্থা করে দেয় না। তাই তারা খোলা পায়খানায় বা খোলা আকাশের নীচেই প্রকৃতির ডাকে সারা দিয়ে থাকে। এদিকে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহার না করা, সচেতনতার অভাবে শেরপুর জেলায় সারা বছরই ডায়রিয়া লেগেই আছে। চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসেই জেলায় ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে জেলার সরকারী হাসপাতালগুলোতেই ১০ হাজার মানুষ চিকিৎসা গ্রহণ করে। বাকি আক্রান্তরা বেসরকারীভাবে ও স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করে। দিনদিন পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে। শেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, শেরপুরে স্যানিটেশন কার্যক্রম খারাপ হওয়ায় জেলায় ডায়রিয়া পরিস্থিতি ভাল নেই। অন্যান্য জেলায় পরিস্থিতি ভাল থাকলেও সবচেয়ে খারাপ অবস্থা শেরপুর জেলার। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেব মতে ৭৫ ভাগ মানুষ স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। এর মধ্যে বেশীরভাগ ল্যাট্রিনই স্বাস্থসম্মত নয়। জলাবদ্ধ ল্যাট্রিন। বাকি ২৫ ভাগ মানুষ খোলা আকাশের নিচে পায়খানা ব্যবহার করে। আবার কেউ কেউ স্থানীয় ইউনিয়ন ও পৌরসভা থেকে ৩টি রিং ও ১টি ম্ল্যাভ দিলেও টাকার অভাবে ল্যাট্রিন তৈরি করতে পারে না। শেরপুরের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জামাল হোসেন জানান, জেলায় ৭৭ ভাগ মানুষ স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। বাকি মানুষও স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহারের আওতায় আসবে। তবে শেরপুরের যে হিসাবই দেখানো হউক না কেন জেলার অধিকাংশ মানুষই স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করে না। জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, স্যানিটারি ল্যাট্রিন বিতরণ করে থাকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা এবং এনজিওগুলো। তবে অভিযোগ রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান স্যানিটারি ল্যাট্রিন বিতরণ করতেও রয়েছে নানা অনিয়ম। নি¤œমানের রিং ও স্ল্যাব বিতরণ করা হয়ে থাকে। যা ব্যবহার অনুপযোগী। সচেতনতা সৃষ্টিতেও এগিয়ে আসছেনা কেউ। ফলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে এ অবস্থার উন্নতি না হলে জেলায় ডায়রিয়া পরিস্থিতি দিন দিন আরো খারাপের দিকেই এগোবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন