মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

সংকট নিরসনের কার্যকর উদ্যোগ নেই

প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবদুল আউয়াল ঠাকুর
দেশের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদুল ফিতর এবার কেটেছে কিছুটা আশঙ্কার মধ্য দিয়ে। রোজার একেবারে শেষ প্রান্তে গুলশান হামলাকে কেন্দ্র করে গোটা দেশের মানুষের মনে যে আশঙ্কা ঘনীভূত হয়েছে তারই আরেকটি সম্প্রসারিত রূপ দেখা দিয়েছিল শোলাকিয়ায়। রাজধানীতে ঈদের জামাতের আগেই আয়োজকরা কেবলমাত্র জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু আনতে নিষেধ করেছিলেন। যাই হোক, ঈদের দিন রাজধানী ঢাকাসহ অনেক জায়গায়ই বৃষ্টি হয়নি। ফলে প্রকৃতির দিক থেকে পবিত্র এই জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার মতো পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিরজমান ছিল। বাংলাদেশে স্মরণকালের ভয়াবহ হামলা হয়েছে গুলশানে। এ নিয়ে জনমনে যখন নানা আলোচনা অব্যাহত, তখনই বলা হচ্ছে, এটাই শেষ হামলা নয়, আরো ভয়াবহ হামলা হতে পারে। না বললেও এটা পরিষ্কার, যে ধরনের প্রবণতা চলছে তাতে এ ধরনের হামলা অব্যাহত থাকবে বা থাকতে পারে। সে বিবেচনায় পরিস্থিতির আরো গুরুতর অবনতির আশঙ্কা করাই সংগত। বিবেচনার গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, এ ধরনের হামলা মোকাবিলার মতো প্রস্তুতি বা তথ্য প্রাপ্তির কোনো বাস্তবতায় সংশ্লিষ্টরা নেই। আলোচ্য হামলার পর অনেক বিশ্লেষণ ইতোমধ্যেই হয়েছে। হয়তো হতেই থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। কে কারা কী উদ্দেশ্যে এসব হামলা করছে এ নিয়ে নানামাত্রিক আলোচনা রয়েছে, এমনকি এসব হামলা নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল মহল যা বলছে তা কতটা সঙ্গতিপূর্ণ সেসব প্রসঙ্গও রয়েছে।
এ কথা যে কেউ স্বীকার করবেন, ২০১৪ সালের অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পর থেকেই দেশে এক ভিন্ন রাজনৈতিক বাস্তবতা বিরাজ করছে। এক্ষেত্রে সরকার এবং রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী ও আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সুনির্দিষ্ট পার্থক্য রয়েছে। একমাত্র ব্যতিক্রম ভারত। নির্বাচনের সময় যাই হোক পরবর্তী বছর ২০১৫ সালে পুনরায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তির আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দেশে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল এটি নিয়ন্ত্রণে সরকার যে পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিয়েছে সেখান থেকেই কার্যত পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করেছে। সেই সময় থেকে এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া তিনটি বিষয়ের উল্লেখ জরুরি। ওই আন্দোলন প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঘুম ও বাড়িঘরে যাওয়া হারাম করে দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে একটি খবর রেরিয়েছিল যে, জনৈক পুলিশ তার বিশেষ অঙ্গ কেটে ফেলেছিল। এ সম্পর্কে পুলিশের তৎকালীন প্রধান বলেছিলেন, হয়তো আন্ডারসেভ করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। অন্য এক খবরে পুলিশের ডাক্তার যৌন সংক্রমণ ব্যাধি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। এরপর সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটে চট্টগ্রামে। পুলিশের একজন এসপির স্ত্রী সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন। তৃতীয় ঘটনাটি ঘটেছে গুলশানের রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলায় স্থানীয় থানার ওসিসহ আরো একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তিনটি ঘটনার জের ধরে চলমান আলোচনাকে যুক্ত করলে এটাই হয়তো সত্যি বলে মনে হতে পারে যে, এ ধরনের ঘটনা মোকাবেলায় পুলিশের সক্ষমতা নিয়ে যে ধরনের প্রশ্ন উঠেছে তাকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। ২০১৫ সালে বিরোধীদলীয় টানা আন্দোলন মোকাবিলা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল কার্যত অগণতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে। এ ধরনের একটি পরিস্থিতি মোকাবিলা করা পুলিশের পক্ষে ছিল কঠিন। কারণ, এ ব্যাপারে সে কারণেই হয়তো নানা সমস্যা হয়েছিল। বেতন-ভাতা অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে অগণতান্ত্রিকতা বহাল রাখা সম্ভব হলেও তাদের ভেতরে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল সেটি মোকাবিলা করা যায়নি বলেই হয়তো প্রথম ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। এবারের বহুল আলোচিত কথিত জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরুর আগে চট্টগ্রামের এসপির স্ত্রী হত্যা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। এখন এই হত্যা নিয়ে নানা আলোচনা স্থান করে নিয়েছে। সর্বশেষ জানা গেছে, আটককৃতরা নাকি কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে। সেদিক থেকে এ নিয়ে আর বেশি কিছু জানার সুযোগ থাকল না। এই হত্যা নিয়ে যা কিছু প্রকাশিত হয়েছে তাতেই হত্যার মোটিভ নিয়ে নানা প্রশ্ন জনমনে উত্থাপিত হয়েছে। প্রথমদিকে বলা হয়েছিল, যেহেতু আলোচ্য পুলিশ কর্মকর্তা নাকি সরকারের ভাষায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানের একজন সফল নায়ক ছিলেন, তাই তার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। সে বিবেচনায় তখনই এ প্রশ্ন উঠেছিল, তাহলে তার স্ত্রী বা পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ যতœবান ছিলেন না কেন? এখন যা বলা হচ্ছে তারও খুব একটা ভিত্তি আছে বলে মনে হয় না। যাই হোক আলোচ্য কর্মকর্তার স্ত্রীর হত্যার মধ্য দিয়ে পুলিশের সক্ষমতার বিষয়টিই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। সেই আলোচনাই গুলশান হামলার পর আরো বড় হয়ে দেখা দিয়েছে আলোচ্য থানার ওসির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। চটজলদি রুখতে যাওয়ার কারণেই হয়তো এমনটা হয়েছে বা হতে পেরেছে। এটি ঘটনার বিবেচনার চেয়েও আরো একটি বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তাহলে সাধারণত দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এমন অনেককে গ্রেপ্তার করা হয় যাদের সম্পর্কে বলা হয়, সন্ত্রাসের চিন্তা পরিকল্পনা করছিল। সেসব শুনে মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, সংশ্লিষ্টদের খবর পাওয়ার সেলটি হয়তো খুবই শক্তিশালী। আলোচ্য ঘটনাবলী প্রমাণ করছে এ ধারণা সঠিক নয়। যারা নিজের স্ত্রী বা নিজের এলাকা সম্পর্কেই খবর রাখতে অক্ষম তাদের নিশ্চয়ই অন্য কারো তথ্যের ওপর নির্ভর করে চলতে হচ্ছে।
সরকারের ভাষায় বিএনপি-জামায়াতই সব অনাসৃষ্টির মূল। বাস্তবে যারা ধরা পড়েছে বা যারা মারা গেছে তাদের যেসব পরিচয় বেরিয়েছে তাতে এখন পর্যন্ত তাদের সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট হয়নি। এসপির স্ত্রী হত্যার অস্ত্রের জোগানদাতা একজন আওয়ামী লীগার। গুলশান ঘটনার সাথেও জড়িতদের অসহায় অভিভাবকদের পরিচয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগের পরিচয়। যাই হোক, হামলা নিয়ে যত ধরনের আলোচনা দেশে-বিদেশে চলছে তার সাথে কিছু বিষয় রয়েছে যা অবশ্যই ভেবে দেখার। আন্তর্জাতিক মহল এসব ঘটনাকে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সাথে সম্পর্কিত করলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের তাতে আপত্তি রয়েছে। তারা মনে করছে, এসবই হচ্ছে দেশীয় সন্ত্রাস। মনে করা হচ্ছে, গণতন্ত্রের দাবিকে স্তব্ধ করতে সরকার যেভাবে বিএনপি-জামায়াতকে নির্মূল করার অভিযানে রয়েছে তার সমর্থনেই এসব বলা হচ্ছে। যদি এ কথা সঠিক হয় এবং তার সাথে যদি এটা যুক্ত হয় যে, হামলাকারীরা সরকারি দলেরই পোষ্য তাহলে কিন্তু এ কথা ভাবার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, ভেতরেই ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। সরকার নিজে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে যাদের মোকাবেলা করতে দৃঢ় রয়েছে তাদেরকে যে কোনো ছলছুতায় সর্বস্বান্ত করলেও পচন ধরেছে ভেতরেই। এটি ভেতর থেকে ধসে পড়ার আলামত। আর যদি একে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সম্পর্কিত মনে করা হয় তাহলে বিপদের ঝুঁকি অন্যত্র। ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে সরকারের সাথে ভারতের দ্বিমত দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকগণ এ বিষয়টি একটু ভিন্নভাবে দেখছেন। হামলার আশঙ্কা কেউ জানত না বা কারো কাছে কোনো খবর ছিল না, তারা তা মানতে নারাজ। তারা মনে করেন, প্রকাশ্যত যা-ই বলা হোক অভিযানে সফলতা বলতে কিছু নেই। কারণ, যারা মুক্তি পেয়েছেন তারাই জানিয়েছেন, যাদেরকে হত্যা করতে চেয়েছে তাদেরকে অনেক আগেই তারা হত্যা করেছে। অন্যদিকে যারা হামলা করতে এসেছে তারা তো মরার জন্যই এসছে। কেউ পালিয়ে যেতে চেয়েছে এমন কথা কেউ বলেনি। তাহলে সফলতার অংশ কতটুকু। সঙ্গত কারণে প্রশ্ন উঠেছে, এত বিলম্বে অভিযান কেন? এ ঘটনা আমাদের কী বার্তা দিয়েছে সেটি ভাবার রয়েছে। সোজা কথায় বলা যায়, সামগ্রিক নাগরিক নিরাপত্তা এখন বড় ধরনেরর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। স্কুল, কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানও এখন ঝুঁকিতে পড়ল। বাস্তবতা তো এই যে, সারা দেশে কতটা অনুষ্ঠান পাহারা দেয়া সম্ভব? সেক্ষেত্রে আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। এ কথাও বহুবার বহুভাবে বলা হয়েছে এবং হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অতিরিক্ত রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণেই পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হচ্ছে বা হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি একগুঁয়েমি যে পরিস্থিতিতে বাতাস দিচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এবারও বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাব শুনেই সরকারি দলের পক্ষ থেকে নেতিবাচক জবাব দেয়া হয়েছে। পরে অবশ্য কেউ কেউ বিএনপির প্রস্তাবের ইতিবাচকতা মেনে নিয়েও তার সাথে শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। এরা রাজনীতি বোঝেন বলে মনে হয় না। জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন হয় যখন জাতীয় সংকট দেখা দেয়। বাংলাদেশ যে আজ গভীর জাতীয় সংকটে রয়েছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। যেহেতু সংকট সরকারের পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে না। উপরন্তু সরকার গৃহীত নীতি ও কর্মপন্থার কারণে পরিস্থিতির আরো গুরুতর অবনতি হচ্ছে, দেশ ক্রমশ চরম পন্থার ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে। তাই সবাই মিলেই এর সমাধানের পথ বের করা জরুরি। তবে এ কথা মানতেই হবে, দেশের রাজনৈতিক বন্ধ্যত্ব অবশ্যই চরম পন্থাকে সমর্থন দিচ্ছে। রুদ্ধ দ্বার খুলে দিয়েই কেবল খোলা বাতাসের আশা করা যায়। সে কারণেই সবাই মিলেই বসতে হবে। এ ধরনের প্রস্তাবে না বলা সমস্যার সমাধানে আন্তরিকতার অভাবের প্রতিফলন। এর পরিণতি কত মারাত্মক হতে পারে তার একটি উদাহরণ নেয়া যেতে পারে বৃটেন থেকে। দীর্ঘ সাত বছর তদন্তের পর সেখানকার সরকারি তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিভ্রান্তিকর গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে ইরাক আক্রমণ করা হয়েছিল। আরো বলা হয়েছে মীমাংসার সব পথ বন্ধ না হওয়া সত্ত্বেও হামলা করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এই রিপোর্টের গুরুত্বকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। রিপোর্ট প্রকাশের পর প্রশ্ন উঠেছে, ওই যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে কিনা? এদিকে অমানবিক যুদ্ধে অংশ নেয়ার বিবেচনায় সে সময়ের বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এতদিন কোনো ক্ষমা প্রার্থনা না করলেও এই রিপোর্ট প্রকাশের পরপরই ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এই ক্ষমা প্রার্থনাকে অন্য আর দশটি ক্ষমার সাথে মিলিয়ে দেখা যাবে না। কারণ আজকের বিশ্ব সংকটের মূলে রয়েছে সে সময়ের ভুল গোয়েন্দা রিপোর্ট। পরবর্তীতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তৈরি করা হয়েছিল। বাস্তবতা হচ্ছে, গোয়েন্দা রিপোর্ট হতে হয় দেশের ও জনগণের স্বার্থে। কারণ এ ধরনের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই দেশ পরিচালিত হয়। যেহেতু গোয়েন্দাদের প্রকাশ্য জবাবদিহিতার কোনো সুযোগ নেই সে কারণে তাদের কাজের সততা নিরপেক্ষতাও হতে হয় প্রশ্নাতীত। এখন এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ম্যানুপুলেটেট গোয়েন্দা রিপোর্টের কারণে বিশ্বে টালমাটাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ক্ষমা প্রার্থনার মধ্যদিয়ে কার্যত টনি ব্লেয়ার তার ভুলের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এর ফলে তার বিচারের পথ উন্মুক্ত হলো। শুধু তার নয় বরং তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশেরও বিচার হওয়া জরুরি। তার দ্বারা ম্যানুপুলেটেট রিপোর্টের ভিত্তিতেই সেদিন গোটা বিশ্বকে তারা বিভ্রান্ত করেছিল। এর কারণে হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর মানবাধিকার লংঘন হয়েছে। এর বিচার না হলে বিশ্বে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার যত কথাই বলা হোক তা মূলত অরণ্যেরোদন বলে বিবেচিত হবে। এটা আশা করা অনুচিত নয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও অনুরূপ নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠিত হবে। তখন দেখা যাবে মার্কিনিদের রক্ষার নমে অমানবিক শক্তির সেই প্রতিনিধিরা আসলে মার্কিনিদের কতটা অনিরাপদ করে ফেলেছে। বিশ্ব অর্থনীতিকে কতটা ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। এ ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তার জ্বলন্ত প্রমাণ বাংলাদেশ। এযাবৎকাল যাই হয়েছিল গুলশান হামলার পর পোশাক শিল্পে বড় ধরনের সংকটের আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যে তিনটি দেশ মূলত আমাদের পোশাক শিল্পের জন্য অপরিহার্য সেই তিনটি দেশই প্রায় বেঁকে বসেছে নিরাপত্তার বিবেচনায়। তাদের অর্ডার পুনর্বিবেচনা করবে অর্থাৎ নিরাপদ দেশে করতে চায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গার্মেন্ট খাতের প্রকৃতিই এমন যে, এখানে অর্ডারকারীদের প্রতিনিধিরা কাজ বুঝে না নেয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে। সে ক্ষেত্রে গুলশান হামলা তাদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধকে তীব্রতর করে তুলেছে। তাদের এ ধারণাকে বিদ্যমান পরিস্থিতি বহাল রেখে বদলানো সম্ভব নয়। অন্য আলোচনা হচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রাণ ভোমরা হচ্ছে রেমিটেন্স। এখন সরকার বলছে, এসব হামলায় যারা সম্পৃক্ত তারা সবাই বাংলাদেশি। ফলে বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান নতুন হুমকির মুখে পড়তে পারে। আমদানিনির্ভর এই দেশে পোশাক এবং রেমিটেন্স খাত বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়লে কার্যতই বাংলাদেশের অর্থনীতি কেথায় গিয়ে দাঁড়াবে বা সাধারণ মানুষের পরিস্থিতি কী হবে বোধকরি তা ভাবাও কষ্টকর। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের পোশাক খাত দেশের কর্মসংস্থানে বড় ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। কেবলমাত্র যারা চাকরি করছে তারাই নয় এর সাথে সম্পৃক্ত অনেকেই রয়েছেন যারা মূলত এই শিল্পনির্ভর। লক্ষণ যা তাতে এই শিল্পে আঘাত এলে সে বিপর্যয় ঠেকানো নিঃসন্দেহে কঠিন হয়ে পড়বে। সে কারণেই আস্থার যে বড় বিবেচনা উঠে এসেছে সেটিই বড় প্রসঙ্গ।
বাংলাদেশ এখন এক কঠিন সংকটে পতিত। বিএনপির পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে সংকট থেকে উত্তরণের উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। এখন পর্যন্ত এর কোনো লক্ষণ নেই। সময় যত দ্রুত এগোচ্ছে এবং সবার ধারণার বাইরে চলে যাচ্ছে। এর পরে হয়তো কেউ ইচ্ছা করলেও কিছু করতে পারবে না। সরকারের সব প্রচারণা সত্ত্বেও ঈদে যানজট ছিল। সড়ক দুর্ঘটনা, চালকের দায়িত্বহীনতা সবই কমবেশি ছিল। রমজান আমাদের সংযম, সৌহার্দ্য, সহমর্মিতা শেখায়। বাস্তবে যা ঘটছে তাতে মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই যে, বাংলাদেশে স্বস্তিকর কোনো বাস্তবতা রয়েছে। শোলাকিয়ায় হামলা কেবলমাত্র প্রতীকী মনে করার কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, কখন কোথায় কী ঘটবে তার কোনো নির্দিষ্টতা নেই। এই যে অরাজক বাস্তবতা এর বাস্তবভিত্তিক সমাধান করা না গেলে অচিরে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। রাজনীতি সন্ত্রাস, জঙ্গি বোধকরি সব কিছু গুলিয়ে ফেলে যে সংকটের উৎপত্তি হয়েছে তা মোকাবেলায় রাজনৈতিক ঐক্যের এবং সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।
awalthakur@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন