চাঁদপুরের মতলব উত্তরে যুবলীগ নেতার লোকজনের হামলায় গ্রাম পুলিশসহ ৫ জন আহত হয়েছে। শুক্রবার এই ঘটনায় আহত হয় ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ খোকন দেওয়ান (৪৫), আরিফ হোসেন (২৪), আরমান হোসেন (১৮), রাকিবুল (১৮), আরশাদ আলী (৪৮)।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মতলব উত্তর উপজেলার ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়নের ঠেটালিয়া নবাবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হইতে উত্তর ফতেপুর বাইতুশ সফর জামে মসজিদ রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্্র করে দীর্ঘ দিন যাবৎ ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আবুল হাসানাত ও গ্রাম বাসীদের মধ্যে দ্বন্দ চলছে। ওই দ্বন্দকে কেন্দ্র করে হাসানাতের স্ত্রী নিলুফা বেগম ফতেপুর পূর্বইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরী, ফতেপুর ও ঠেটালিয়া গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে চাঁদপুর আদালতে মামলা করেন। ফলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নেতৃত্বে সরোজমিনে নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে আসেন। এদিকে ওই রেশ ধরে বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) গভীর রাতে হাসানাতের ভাড়াটিয়া লোকজন দিয়ে রাস্তার কয়েক জায়গায় কেটে ফেলেন। গ্রামবাসী টের পেয়ে মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিলে এলাকার লোকজন ছুটে আসে। পাশাপাশি টহলরত পুলিশও চলে আসে। এ দিকে গ্রামবাসীর দাওয়া খেয়ে কয়েক জন সন্ত্রাসী চলে গেলেও ২ জনকে কোদাল ও বেলচাসহ আটক করে টহলরত পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
শুক্রবার সকালে বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরীকে অবহিত করেন এলাকাবাসী। চেয়ারম্যানের নির্দেশে গ্রাম পুলিশ খোকন দেওয়ান সকাল ১১টার দিকে হাসানাতকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে আনতে তার গ্রামের বাড়ী উত্তর ঠেটালিয়া যান। সেখানে যাওয়ার পর হাসানাতের ভাইসহ অন্যান্য লোকজন গ্রাম পুলিশ খোকন দেওয়ানের উপর হামলা করে। গ্রামপুলিশ খোকন দেওয়ানের ডাক চিৎকারে গ্রামবাসী ছুটে আসে। তাকে বাঁচাতে গেলে আরও ৪জন আহত হয়েছে। আহতরা হলেন, উত্তর ফতেপুর গ্রামের আরিফ হোসেন (২৪), আরমান হোসেন (১৮), রাকিবুল (১৮), আরশাদ আলী (৪৮)। এদিকে আহত ৫ জন কে মতলব দক্ষিণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক গ্রাম পুলিশ খোকন দেওয়ান (৪৫) ও আরশাদ আলীর ছেলে আরিফ হোসেন (২৪) কে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পেরণ করা হয়।
শুক্রবার দুপুরে সরোজমিনে গেলে ফতেপুর পুর্ব ইউনিয়নের ঠেটালিয়া গ্রামের চাঁন মিয়া চৌধুরী (৬০), আ: হান্নান মাষ্টার, ফতেপুর গ্রামের মিজান, আরশাদ আলী (৪৮), আল আমিন মজুদার, মুক্তিযোদ্ধা মোবারক হোসেন, আব্দুল মতিন, বিলাল হোসেনসহ আরও অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার আনুমানিক রাত ২টায় মাইকে ঘোষনা শুনে আমরা গ্রাম বাসী ছুটে আসি এবং ২ জন অজ্ঞাত সন্ত্রাসীকে ( কোদাল ও বেলচাসহ) হাতেনাতে ধরে টহলরত পুলিশের কাছে সোপর্দ করি।
ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য আলমগীর হোসেন জানান, চেয়ারম্যানের নির্দেশে হাসানাতকে ডেনে আনার জন্য গ্রাম পুলিশ খোকন দেওয়ানকে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে হাসানাতের ভাইসহ তাদের লোকজন গ্রাম পুলিশের উপর হামলা চালায়। গ্রাম পুলিশের ডাক চিৎকারে লোকজন এগিয়ে গেলে তাদের হামলায় উপরও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা হয়। এতে আরও ৪ জন আহত হয়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি আবুল হাসানাতের সাথে যোগাযোগ করে তার মুঠোফোন (০১৯১৬৭০০৮৩৭) বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরী বলেন, আমি বৃহস্পতিবার ঢাকায় ছিলাম। ইউপি সদস্যসহ এলাকাবাসী বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনাটি আমাকে ফোনে অবহিত করে। ফলে শুক্রবার সকালে বিষয়টি জানার জন্য গ্রাম পুলিশ খোকন দেওয়ানকে হাসানাতের বাড়ীতে পাঠাই। পরবর্তীতে জানতে পেরেছি হাসনাতের লোকজনের হামলায় গ্রাম পুলিশ খোকন দেওয়ান সহ ৫ জন আহত হয়।
মতলব উত্তর থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) মহিউদ্দিন আহম্মেদ ও এস.আই আজম জানান, বৃহস্পতিবার রাতে আমরা টহলরত অবস্থায় এলকাবাসীর হৈ চৈ শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে যাই। সেখান থেকে কোদাল, বেলচা ও ব্যাটারী চালিত অটোগাড়ী জব্দ করে থানায় নিয়ে যাই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন