এস.কে সাত্তার, ঝিনাইগাতী (শেরপুর)
ঝিনাইগাতীতে জলবায়ু-মাটি, কৃষি ও পরিবেবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বিদেশী ইউক্যালিপ্টাস-আকাশমণিসহ বিভিন্ন বৃক্ষ রোপণের হিড়িক পড়ে গেছে। জানা যায়, এ সব গাছ যে শুধু ব্যক্তিগত উদ্যোগেই রোপণ করা হচ্ছে তা নয়। রীতিমত সরকারিভাবেও রোপণ করা হচ্ছে এ সব ক্ষতিকর বৃক্ষ। জানা যায় এ সব ক্ষতিকর বৃক্ষ সর্ব প্রথম সরকারিভাবে বন বিভাগের মাধ্যমে ঝিনাইগাতী গারো পাহাড়ে জনসাধারণের অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যাপকভাবে রোপণ করে বনায়ন করা হয় এবং বন বিভাগই সর্ব প্রথম নার্সারির মাধ্যমে এসব ক্ষতিকর চারা উৎপাদন করে। অল্প সময়ে বেড়ে উঠা এসব গাছ পরবর্তীতে ব্যাপক লাভজনক মনে করে দ্রুত ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠতে থাকে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। জনসাধারণের ধারণা সরকারের বন বিভাগ যেহেতু বৃক্ষগুলো রোপণ করছে সেহেতু তা যে ক্ষতিকর বৃক্ষ তা কল্পনাতো করেইনি সাধারণ মানুষ, বরং গ্রহণযোগ্যতা আরো বেড়ে যায় বহুলাংশেই। এভাবেই প্রতেকটি বাড়ি, ফাঁকা রাস্তাঘাট, পতিত জমি ক্ষেতের আইল এমন কি এক চিলতে জমিও ফাঁকা রাখছে না সাধারণ মানুষ। সর্বত্রই এখন এ সব বিদেশী বৃক্ষের ছড়াছড়ি। বর্তমানে এ সব ক্ষতিকর গাছে গারো পাহাড়েতো বটেই প্রত্যেকটি বাড়ি- প্রধান প্রধান সড়ক এমনকি গ্রামীণ রাস্তাসহ গোটা উপজেলা জুড়েই ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। জানা যায়, বিভিন্ন এনজিও’র মাধ্যমেও এসব চারা রোপণ করা হয়েছে। গারো পাহাড়ের কৃষকরা না জেনেই ইউক্যালিপ্টাস-আকাশমণি (একাশিয়া) গাছ বাড়ির আঙিনা, রাস্তার পাশে, কৃষি জমির পাশে এমন কি পতিত জমিতে ব্যাপকভাবে রোপণ করেছেন। দ্রুতবর্ধনশীল এসব গাছ রোপণে বলতে গেলে হিড়িক পড়ে গেছে। উদ্ভিদ বিজ্ঞানিদের মতে ইউক্যালিপ্টাস গাছ আশপাশের প্রায় ১০ ফুট এলাকার পানি শোষণ করে এবং অকাশে উঠিয়ে দেয়। এই গাছ সব সময়ই এক কথায় রাত-দিন পানি শোষণ করে বাতাসে ছেড়ে দেয়। আর এ জন্যই এই গাছ লাগানো ক্ষতিকর। তাছাড়া এই বিদেশী গাছের আশপাশে অন্যকোন গাছও জন্মাতে পারে না। এই গাছে আশপাশ এলাকার পর্যন্ত মাটি শুকিয়ে ফেলে এবং জমির উর্বরা শক্তি কমে যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্ত বেঁধে দিয়ে একজন বন কর্মকর্তা জানান, এই বিদেশী প্রজাতির অত্যন্ত দ্রুতবর্ধনশীল গাছ এবং তা মাটির ৫০-৬০ ফুট নিচের পানি পর্যন্ত শোষণ করে বাতাসে ছেড়ে দেয়। ফলে পানিশূন্যতা দেখা দেয় মাটিতে। তাছাড়া এসব বিদেশী প্রজাতির গাছের শিকড় ও ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। এতে এসব গাছের আশপাশে ধান গাছসহ অন্য যে কোন গাছ টিকতেই পারে না। এই বিদেশী গাছ প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড নির্ঘমন করে। তাই কৃষি জমিতো বটেই বাড়ির আঙিনায় পর্যন্ত এ সব গাছ রোপণ না করা উচিত। এ জন্য বাড়ির আঙিনায়তো বটেই বনায়নের জন্যও দেশীয় ফলদ বৃক্ষ রোপণ করা উচিত। তাতে করে এক দিকে যেমন পর্যাপ্ত ফল পাওয়া যাবে পক্ষান্তরে পাওয়া যাবে মূল্যবান কাঠ। জানা যায়, এই সব বিদেশী প্রজাতির গাছ ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও অস্বাভাবিকভাবে নিচে নামিয়ে দেয়, এমনকি পানির উৎসকেও শেষ করে ফেলে। ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষক দলের সেক্রেটারি সরোয়ার্দী দুদু মন্ডল এই প্রতিবেদককে জানান, এ সব বিদেশী গাছে পাখি বাসা পর্যন্ত বানায় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ডাক্তার জানান, এই গাছের ফুলের রেণু নিঃশ্বাসের সাথে মানুষের দেহে প্রবেশ করার ফলে অ্যাজমা রোগ হয়। অথচ সরকারিভাবে এসব বৃক্ষ রোপণে বাধাতো দেয়াই হচ্ছে না বরং সরকারের বন বিভাগ বনায়নের নামে এ সব গাছ রোপণ করায় জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এ দিকে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এ সব বিদেশি গাছের চারা। এক শ্রেণির নার্সারি মালিকরা অবাধে এসব চারা উৎপাদন ও বাজারজাত করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন