বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে যুবলীগ নেতাদের বালু ব্যবসা

রূপগঞ্জে ডুবছে কয়েকশ’ ঘরবাড়ি প্রতিবাদ করলেই মামলা হামলা হত্যার হুমকি

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

নারায়ণগঞ্জে রূপগঞ্জে পানি নিষ্কাশনের রাস্তা বন্ধ করে স্থানীয় যুবলীগ নেতাদের অবৈধ বালুর ব্যবসার কারণে পানিতে ডুবছে কয়েকশ ঘরবাড়ি। উপজেলা পশ্চিম কালাদী এলাকায় পানি নিষ্কানের রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই।

জানা যায়, কাঞ্চন পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, তারাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমিনুল হক ও জামানসহ কয়েকজন প্রভাবশালীরা মিলে কাঞ্চন পৌরসভার পশ্চিম কালাদী এলাকায় রাস্তার পাশে অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা করছেন। তারা এখানে ড্রেজার দিয়ে অবাধে বালু ফেলছে প্রতিনিয়ত। ড্রেজারের বালুর পানি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে ডুবে যাচ্ছে ঘরবাড়ি। পশ্চিম কালাদী এলাকাটি নিমাঞ্চল হওয়ার কারণে এখানে স্বল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুম হলেও এখানে এই ড্রেজারের বালুর পানির কারণে প্লাবিত হচ্ছে কয়েকশ ঘর-বাড়ি। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। যারা বালুর ব্যবসা করছেন তাদের বেশকয়েকবার বলার পরেও সাধারণ মানুষ কোন সুফল পায়নি। শুধু তাই বালু ব্যবসায়ী যুবলীগ নেতারা দুর্ধর্ষ । তাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবাদ করতে ওই যুবলীগ নেতাকর্মীরা হামলা মামলা, হামলা ও বালুতে পুতে হত্যার হুমকি দিয়ে থাকে। যার ফলে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস টুকু পাচ্ছে না। এসকল ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে ক্ষোভে ফুসছেন এলাকাবাসী। বালু ব্যবসায়ীরা যুবলীগ নেতা ও প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস টুকু পাচ্ছে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পশ্চিম কালাদী এলাকায় কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই নিপূন এন্টারপ্রাইজ নামে রাস্তার পাশে অবৈধভাবে বালুর গদি চালু করেছেন ওই যুবলীগ নেতারা। এখানে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে অন্যের জমির উপর দিয়ে পাইপ এনে ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলা হচ্ছে। পরে সে বালু ট্রাকে করে বা ড্রাম ট্রাকে বিক্রি করা হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। বাতাসে বালুর গদি থেকে বালু উড়ে গিয়ে গ্রামগুলোতে পড়ছে। এতে করে গ্রাম গুলো ধূলার রাজ্যে পরিনত হচ্ছে। এছাড়া এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কের সংযোগ হওয়ায় এ ড্রাম ট্রাক গুলো চলাচল করছে। এতে করে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি করছে। প্রায় সময় এ ড্রাম চালকরা এশিয়ান হাইওয়ে দিয়ে চলাচলরত অন্য যানবাহনের চালকের মারধর করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক গুলো কোন বৈধ কাগজ নেই। এসব সমস্যার বিষয় গুলো স্থানীয়রা রূপগঞ্জ থানার ওসি মাহমুদুল হাসানকে জানালে তিনি গত সোমবার রাতেই পুলিশ পাঠিয়ে এ বালুর ব্যবসা বন্ধ করে দেয়। অবৈধ বালুর ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ায় এলাকাবাসী পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছে।

কথা হয় বৃদ্ধা হাফেজা বেগমের সঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বালি ব্যবসায়ীরা ড্রেজারের বালির পানির যাওয়ার কোন ব্যবস্থা না করায় পানি এসে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করছেন। বালু ব্যবসায়ীদের পানি নিষ্কাশনের কথা বললে তারা পানি নিষ্কাশন করতে পারবে না সাফ জানিয়ে দেয়। ঘরের ভেতরে পানি চলে আসায় ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র পানিতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। আমাদের ভোগান্তি যে কবে শেষ একমাত্র আল্লাহই জানে। দ্রæত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে তিনি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

শিক্ষার্থী আখি আক্তার জানান, বাড়িতে ড্রেজারের পানি চলে আসা চলেফেরা করতে ভোগান্তি পোহাতে হয় প্রতিনিয়ত। ঘরের ভেতরে পানি প্রবেশ করায় লেখাপড়া করতে সমস্যা হচ্ছে। বালু ব্যবসায়ীরা পানি নিষ্কাশন না করার কারণে কয়েকশ বাড়িঘর প্লাবিত হচ্ছে।

দেলোয়ার হোসেন নামে এক ভোক্তভোগী বলেন, প্রায় ২ মাস ধরে এমন পরিস্থিতি চলে আসছে। আমাদের এলাকাটি নিমাঞ্চল হওয়ার কারণে বর্ষকালে আগে এখানে পানি জমতো। পরে পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইপ ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এ বালুর গদির কারণে এ পাইপটিও আজ বন্ধ হয়ে গেছে। তার উপর ড্রেজারের বালু পানি এসে বাড়িতে প্রবেশ করে। এ ভোগান্তিতে থেকে আমাদের মুক্ত করতে উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

অভিযুক্ত রবিউল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম ও জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, এ বালুর গদিটি নতুন হয়েছে। আমরা পৌরসভা থেকে অনুমতি নিয়েছি। এলাকাবাসীর ভোগান্তির বিষয়টি সঠিক নয়। কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, তাদের ইট-সিমেন্ট-রড ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা করছে। এ ব্যাপারে পৌরসভা থেকে নোটিশও পাঠানো হয়েছে।
রূপগঞ্জ থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ করতে দেয়া হবে না। সাধারণ মানুষের স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে তাদের বালুর ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফের চালু করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Nannu chowhan ১১ মার্চ, ২০২০, ৮:০৬ এএম says : 0
Jobulig satrolig shechsasheboklig aowamilig aro kotolig bolei kotha,desher manush o desh gollai jak,onader pete pore opche pora nahole ki ar hoy...
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন