মুহসানা জান্নাত
বাস্তবতা হলো আমাদের গণমাধ্যম কলকাতার বাবু-সংস্কৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে এই নিয়ন্ত্রণ সফলভাবে বজায় রাখায় বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয় অদ্যাবধি বিকশিত হতে পারেনি। এদেশের অধিকাংশ মিডিয়ায় এমনভাবে প্রচার চালানো হয়েছে, যাতে ইসলাম ধর্মের আচার-আচরণকে বাঙালিত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এক প্রকার বিজাতীয় সংস্কৃতিরূপে উপস্থাপন করা যায়।
ডানলপ বলেছেন, সাহিত্য ও সংস্কৃতি দেশ ও জাতির দর্পণ বিশেষ। কিন্তু আমরা কোন সংস্কৃতি লালন করে চলেছি? কোনো দেশকে ধ্বংস করতে হলে তার সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দাও, যুদ্ধ করার প্রয়োজন নেইÑএই বাণীরই সফল প্রয়োগ চলছে আমাদের এই দেশ জাতির ওপর। জাতিকে নিঃশেষ করতে অশ্লীলতার প্রসার ঘটাও। তরবারির জোরে বা বিরোধীতা করে কোনো ধর্মকে নিঃশেষ করা যায় না। কোনো ধর্মকে নিঃশেষ করার একটাই মাত্র পথ, ভেতর থেকে রুহটাকে কেড়ে নিয়ে দেহের উপর রঙের প্রলেপ মাখানো।
ওরা আমাদের সভ্যতা, সংস্কৃতিতে আঘাত করে আমাদেরকে অর্থনৈতিক মুক্তি ও রাজনৈতিক ক্ষমতালাভে ব্যস্ত রেখে আমাদের ঈমান আকিদাকে ধ্বংস করে দিতে চায়। তাদের চাওয়া আমরা নামে মুসলমান থাকব, কিন্তু বেড়ে উঠব ইউরোপ, আমেরিকা তথা পাশ্চাত্য, হিন্দু, খ্রিস্টানদের বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা ও মানসিকতা নিয়ে। গ্রামের ছোট্ট একটা ঘর থেকে শহরের বহুতল ভবন, একজন নিরক্ষর ব্যক্তি থেকে সর্বোচ্চ অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি পর্যন্ত সর্বত্রই বিজাতীয় সংস্কৃতির জোয়ার।
দেশের প্রায় ৮০% তরুণ-তরুণী হিন্দি, ভারতী বাংলা সিনেমা, সিরিয়াল, হিন্দিতে কথা বলা, তাদের স্টাইল, তাদের অনুকরণে ব্যস্ত। এই প্রবণতা আমাদের জাতীয় পর্যায়েও। কী আছে এগুলাতে? আছে অশ্লীলতা, আছে ঝগড়া-ঝাটি, আছে হিন্দু ধর্মের প্রচার। আমরা নিজের ঘরের ভিতর ধর্ম পালন করেও মৌলবাদী! আর তারা সিরিয়ালের মাধ্যমে ধর্মের প্রচার করেও মৌলবাদী নয়! কিন্তু কেন?
এ দেশের প্রতিটি ঘর আজ তাদের দখলে। বেশ কিছুদিন আগে মামার বাড়ি গেছিলাম। মামা আবার দেশের শ্রেষ্ঠ একটা মাদরাসার শিক্ষক এবং জেলখাটা নেতা। সন্ধ্যায় দেখলাম মামাসহ পরিবারের সবাই হাজির টিভির সামনে ভারতীয় রাশি নাটক দেখার জন্য। আর কোথাও কেউ নেই বলে আমাকেও সেখানে থাকতে হয়েছিল। সিরিয়ালের দিকে তাকিয়ে আমি একটা কথাই ভাবছিলাম, যে ঘরটা হওয়ার কথা ইসলামের দুর্গ তার অবস্থা যদি এই হয় তবে আর দশটা সাধারণ পরিবারের কী হবে?
একটা পরীক্ষার সময় দেখলাম, পেছনের দুজন ও পাশেরজন পরীক্ষার একটু আগেও এসব সিরিয়াল নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। আমার কোনো বন্ধু বা চাচাত ভাই-বোনরাও এসব থেকে মুক্ত নয়। তবে অবশ্যই আমি এবং আমার ছোট্ট দুইটা ভাই-বোন এসব সংস্কৃতি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। দয়া করে আপনিও এগিয়ে আসুন অস্তিত্ব রক্ষার এই সংগ্রামে। আপনার ভাই-বোন, কাছের পরিচিতজনদের দূরে রাখার চেষ্টা করুন, না পারলে এড়িয়ে চলুন। এমন অনেক লোক আছে যাদের লেখা দেখলে মনে হবে তারাই সর্বোচ্চ ধার্মিক ও দেশপ্রেমিক। এই দেশপ্রেমীকরাও হিন্দির আগ্রাসনের কাছে অসহায়। এভাবেই তারা কাউকে পূর্ণ ইসলামিস্ট হিসেবে বিকশিত হতে দেয় না। এটা আমাদের ধর্ম, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করার আয়োজন। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কাছে আত্মসমর্পণের জন্যই সমাজে ধর্ষণ আর নির্যাতন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নৈতিকতার দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।
মাহমুদুর রহমানের ভাষায়ই বলতে হয়, ‘সামাজিক অবক্ষয়ের মূল্য না চুকিয়ে উপায় নেই।’ রাষ্ট্রের উচিত এসব চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া। বর্তমান সময়ে দেশ, জাতি, ধর্ম রক্ষা করতে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রতিরোধই একজন মুসলমানের সবচেয়ে বড় ঈমানি দায়িত্ব।
সকল ভাই-বোন, সকল শ্রেণির মানুষের কাছে, বিশেষ করে শিক্ষিত ভাই-বোনদের কাছে আপনাদের এই ছোট্ট বোনটার আকুল প্রার্থনা, অনুরোধ আপনারা নিজেরা বিজাতীয় সংস্কৃতিকে ‘না’ বলুন, অপরকে উদ্ভুদ্ধ করুন ‘না’ বলতে। দেশ ও জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় এগিয়ে আসুন, সমবেত কণ্ঠে সবাই বলে উঠুন, অপসংস্কৃতির হোক মূলোৎপাটন, শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চায় আসুক প্লাবন।
ষ লেখক : শিক্ষার্থী
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন