উত্তর : বিয়ে ইসলামে ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য। ইসলামে রীতি নীতিতে দেন মোহর নারীর অধিকার যা অবশ্য স্ত্রী’কে প্রদান করতে হবে। বিবাহ একটি ইবাদত। ইসলামের দৃষ্টিতে মানবজীবনের যাবতীয় কর্মকালই ইবাদত। দাম্পত্য জীবন মানবজীবনের অতীব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সুতরাং, দাম্পত্য জীবনের সূচনাপর্ব শুভবিবাহ সুন্নত অনুযায়ী ও শরিয়াহসম্মতভাবে সম্পাদন হওয়াই বাঞ্ছনীয়। দাম্পত্য যুগলবন্দী হওয়ার পদ্ধতিকে বাংলা পরিভাষায় ‘বিবাহ’ বা ‘বিয়ে’ বলা হয়। উর্দু ও ফারসি ভাষায় একে বলা হয় ‘শাদি’, আরবিতে বলা হয় ‘নিকাহ’।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা খুশি মনে স্ত্রীকে মহর পরিশোধ করো।’ (সূরা আন নিসা: ৪)। তাই অন্যসব অধিকারের মতো স্বামীর কাছে দেনমোহর দাবি করা স্ত্রীর অধিকার রয়েছে। দেনমোহর নির্ধারণ হয় স্বামী-স্ত্রী উভয় পক্ষের আলোচনা সাপেক্ষে।
এর সর্বনি¤œ পরিমাণ ইসলামে নির্ধারিত আছে; সর্বোচ্চ পরিমাণের কোনো সীমা নেই। রূপে, গুণে তারা যদি সমান হয়, তাহলে তাদের দেনমোহরের সাথে মিল রেখে একটা অঙ্ক নির্ধারণ করা যেতে পারে সর্ব সন্মতিক্রমে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাওয়ালা বলেছেন, ‘আর তোমরা স্ত্রীদেরকে খুশিমনে মোহর দিয়ে দাও, তারা যদি খুশি হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করো।’ -সূরা নিসা: ৪
মোহর কম হওয়াই বাঞ্ছনীয়। তবে স্বেচ্ছায় বেশী দেওয়া নিন্দনীয় নয়। মহানবী (সাঃ) তাঁর কোন স্ত্রী ও কন্যার মোহর ৪৮০ দিরহাম (১৪২৮ গ্রাম ওজনের রৌপ্যমুদ্রা) এর অধিক ছিল না। হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর মোহর ছিল একটি লৌহবর্ম। হযরত আয়েশা বলেন, তাঁর মোহর ছিল ৫০০ দিরহাম (১৪৮৭,৫ গ্রাম ওজনের রৌপ্য মুদ্রা)। তবে কেবল উম্মেহাবীবার মোহর ছিল ৪০০০ দিরহাম (১১৯০০ গ্রাম রৌপ্য মুদ্রা)। অবশ্য এই মোহর বাদশাহ নাজাশী মহানবী (সাঃ) এর তরফ থেকে আদায় করেছিলেন।
বরকতপূর্ণ বিবাহের বর্ণনা দিতে গিয়ে উম্মাহাতুল মুমিনীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সবচেয়ে বরকতময় বিয়ে হচ্ছে সুন্নতি বিয়ে, অর্থাৎ যে বিয়েতে খরচ কম হয় এবং কোনো জাঁকজমক থাকে না।’ -মিশকাত শরিফ
সুতরাং মহর হবে বরের আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী। রাসুল (সাঃ) এক হাদসে শরীয়তের মূলনীতিরুপে বলেছেন: “সাবধান, জুলুম কর না। মনে রেখ, কারো পক্ষে অন্যের সম্পদ তার আন্তরিক তুষ্টি ব্যতীত গ্রহণ করা হালাল হবে না। -(মিশকাত/২৪৫)
বর্তমান সময়ে অসুস্থ প্রতিযোগীতা মাধ্যমে কে কার চাইতে বেশি দেন মোহর দিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান করবে এক ধরণের প্রতিযোগীতা নেমেছে কনের পক্ষ। বরের সামর্থ্য বিবেচনা না করে বরের উপর অযৌক্তিক ভাবে ১০ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ পর্যন্ত এলাকা ভেদে ইদানিং কালের দেন মোহর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। বর বা ছেলের যা দেয়ার আদৌ সাধ্য নেই, তার উপর একটা অযৌক্তিক মোটা অংকের মোহর চাপিয়ে দেয়া হয়। একজনের মাসিক আয় ৮০০০/- টাকা। বছরের ৮০০০*১২= ৯৬০০০টাকা। খরচ বাদে তার কাছে বছরে ২০০০০/-টাকা সঞ্চিত হয় না। এ রকম এক ছেলের ‘মোহর’ নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লক্ষ টাকা; এটি একটি উদাহরণ। উভয় পক্ষের মুরুব্বীগণ দেন মোহর নির্ধারণ করেন। একবারও চিন্তা করেন না যে, ছেলেটির বর্তমান আয় অনুসারে মোটা অংকের মোহর আদায়ের সাধ্য তার আছে কি না? ছেলের সাথে আলাপ করারও প্রয়োজন বোধ করেন না। আধুনিক সমাজের রীতি নিতি হলো কে কার চাইতে অনৈসলামিক কার্যক্রমে প্রতিযোগিতা করতে পারবে। সেটা দেখার বিষয়। অথচ ইসলামে এই সব সমর্থন করে না।
অনেকেই মনে করেন, দেনমোহরের টাকা স্ত্রীকে দিতে হয় শুধুমাত্র বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটলে। এটা অজ্ঞতা ও চরম ভুল ধারণা। বিয়ে বিচ্ছেদ না হলেও দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করা ফরজ।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিয়ের মজলিসে পাত্রীপক্ষের চাপে পাত্রপক্ষ দেনমোহরের সম্মত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে যদি কোন কারনে তালাক হয়ে যায় সেক্ষেত্রে পাত্রপক্ষকে দেনমোহরের পুরোটাই পরিশোধ করতে হয় ।এক্ষেত্রে দেনমোহর ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি তালাক যদি স্ত্রী ও দিয়ে থাকেন তা সত্তে¡ও দেনমহর পরিশোধ করতে স্বামী বাধ্য।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন