রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

স্থবির সিলেট

ফয়সাল আমীন | প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০২০, ৬:২২ পিএম

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে পূণ্যভূমি সিলেট। প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল সিলেট শুরু থেকেই ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারি তথ্যমতে গত দেড় মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে সিলেটে এসেছেন প্রায় ৩০ হাজার প্রবাসী। সিলেটের বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের জন্নাথপুর উপজেলার বেশিরভাগ মানুষই প্রবাসী। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বিশ্বনাথ ও জগন্নাথপুর। এ দুটি উপজেলার প্রতিটি ঘরেই রয়েছেন প্রবাসী। এদের বেশিরভাগ যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। ইতিমধ্যে জগন্নাথপুর উপজেলা লকডাউন করা হলে ও বিশ্বনাথ রয়েছে সরকারি নির্দেশের অনুক‚লে।

করোনা ভাইরাসের আক্রমণ শুরুর পরও সিলেটে প্রবাসীদের আগমন টেকানো যাচ্ছেনা। বৃহস্পতিবার ও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সিলেটে যুক্তরাজ্যে ম্যানচেষ্টার থেকে সিলেটে এসেছেন ৩৬ প্রবাসী। তাদের মধ্যে দুজনের শরীরে তাপমাত্রা বেশি থাকায় তাদেরকে শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে আইসোলেশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। বাকিদের প্রশাসনের তত্বাবধানে পাঠানো হয়েছে হোম কোয়ারাইন্টেনে। পূর্বে আসা প্রবাসীরা হোম কোয়ারাইন্টাইন না মানলে ও গত ১৫ দিন থেকে যারাই আসছেন তারা চলে যাচ্ছেন হোম কোয়ারাইন্টেনে। বাইরে থাকা প্রবাসীদের হোম কোয়ারাইন্টেনে যেতে এখনো অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন। এদিকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে সারাদেশের ন্যায় সিলেটে ও গণপরিবহন ও দোকানপাঠ বন্ধ রয়েছে। ফলে সুনসান নীরবতা সর্বত্র। হরতাল অবরোধে ও এমন চিত্র দেখেনি সিলেটবাসী। বিমেষ করে হযরত শাহজালাল রহ.মাজার এলাকায় রাত দিন ২৪ ঘন্টা মানুষের ভীড় থাকে। বিশেষ করে শুক্রবারে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজার হাজার মানুষ আসেন সিলেটে। মাজার এলাকা থাকে লোকে লোকারণ্য। অথচ আজ শ্রক্রবার বেলা ৩ টায় মাজার এলাকায় গিয়ে একজন মানুষের ও দেখা মিলেনি। একই অবস্থা নগরীর ব্যস্ততম এলাকা জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, চৌহাট্্রা ও আম্বরখানার। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউই বাইরে বের হচ্ছেননা। রাস্তায় কেবল পুলিশের গাড়ি আর মাঝেমধ্যে কিছু রিকসার দেখা মিলছে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্বরত আইনশৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়ে আছেন। প্রয়োজনমত তারা মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার দেখলেই থামাচ্ছেন। জানতে চাচ্ছেন কেন বের হয়েছেন, কোথায় যাচ্ছেন? ফাঁকা সিলেট শহরের রাস্তায় যেন অন্যরকম আমেজ। সাধারণত ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আজহার ছুটিতে সিলেটের বাইরের মানুষ বাড়িতে চলে গেলে ও এমন ফাঁকা হয়না শহর।

বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায় পুরো নগরী নিরব-নিস্তব্ধ। সিলেট স্টেশন থেকে ছেড়ে যাচ্ছে না কোনো ট্রেন, বাস টার্মিনালে ঠায় দাঁড়ানো বাসের সারি- বন্ধ সব ধরণের গণপরিবহন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে প্রাইভেটকার, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ছাড়া রাস্তায় কোনো গণপরিবহন দেখা যাচ্ছে না । তবে জরুরি সেবার কিছু যান চলাচল করছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নিয়েছে। একসঙ্গে একাধিকজন দেখলে সচেতন করে দেয়া হচ্ছে । সেই সাথে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার দেখলেই থামাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা, জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তাদের, পরামর্শ দেয়া হচ্ছে ঘরে থাকার। সিলেট সদর উপজেলায় সরকারি নির্দেশ অমান্য করে চালু রাখা ৫০টি স্টোন ক্রাশার মিল বন্ধ করে দিয়েছে সেনাবাহিনী। গত বৃহস্পতিবার সেগুলো বন্ধ করে তারা। জানা গেছে, সিলেটে প্রাণঘাতি করোনাভারাসটির ছড়ানো ঠেকাতে সরকারের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর মধ্যে ছিলো সব ধরনের গণজমায়েত বন্ধের নির্দেশ। কিন্তু সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের ধোপাগুলসহ বিভিন্ন স্থানে ৫০টি স্টোন ক্রাশার মিলের মালিকপক্ষ প্রশাসনের সব পরামর্শ ও নির্দেশ উপেক্ষা করে তাদের মিলটি চালু রাখে। সেখানে কর্মরত রাখে শত শত শ্রমিক। এই অবস্থায় গত দুদিন থেকে এলাকার সচেতন মানুষ মিলগুলো বন্ধ রাখার তাগিদ দিলেও তা মানেনি মালিকপক্ষ। অবশেষে সেনাবাহিনী সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া নগরসহ সিলেট জেলার সর্বত্রই টহল দিচ্ছে সশস্ত্র এই বাহিনী। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর লক্ষ্যে সিলেটের সব এলাকায় সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে প্রশাসনের সহায়তায় নিয়োজিত হয়েছে সেনাবাহিনী। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে তারা জেলা ও বিভাগীয় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাব্যবস্থা, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করছেন।

সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) মো. মেজবাহ উদ্দিন ইনকিলাবকে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর ১৫টি টিম চষে বেড়াচ্ছে পুরো সিলেট জেলা। সিলেটে আজ শুক্রবার সকাল ৮টায় সেনাবাহিনী মাঠে নামলেও তাদের টহল জোরদার করার লক্ষ্যে বিকেল ৩টায় মোট ১৫টি টিম বের হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর লক্ষ্যে সিলেটের সব এলাকায় সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানে গতকাল থেকে সিলেটে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী। শুক্রবার সকালে ৮টা থেকেই মাঠে বেরিয়েছে সশস্ত্র বাহিনী। নগরসহ সিলেট জেলার সব উপজেলায় রাত পর্যন্ত সশস্ত্র এই বাহিনীর একাধিক টিম টহল দেবে। এদিকে, বিকেল ৩ টা থেকে তাদের পুরো ১৫টি টিম মাঠে কাজ করছে। টিমগুলো ভাগ হয়ে টহল দিচ্ছে সিলেট জেলার প্রতিটি উপজেলায়। টহলকালে সেনাবাহিনী হ্যান্ড মাইক দিয়ে সিলেটবাসীকে কোনো ধরণের গুজবে কান না দিয়ে ঘরে থাকার আহŸান জানাচ্ছেন। পাশাপাশি আতঙ্কিত না হওয়ার এবং সচেতন ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শও দিচ্ছেন তারা।

উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী মরণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক নিয়ে সিলেটসহ পুরো দেশে নতুন এক গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। 'লং, সাদা এলাচ আর আদা পানিতে সিদ্ধ করে খেলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবে না' এমন গুজবটি গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সন্ধ্যায় ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রায় প্রতি জেলায়। এছাড়াও বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে সিলেট বিভাগের কয়েকটি এলাকায় 'করোনাভাইরাসের কারণে ভূমিকম্প হচ্ছে' এমন গুজব রটানো হয়। এমন গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে রাত ১০টার পর থেকে রাত ১টা পর্যন্ত আজান দিতে থাকেন স্থানীয়রা। তারপরই শুরু হয় আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মিছিল। এসব প্রতিরোধেও সিলেটে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। কোথাও এমন কর্মকাÐ হতে দেখলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তারা এমনটা জানিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, কোন ধরনের গুজব সহ্য করা হবেনা। যারাই এসব করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি ( মিডিয়া ) জেদান আল মুসা বলেন, মানুষকে সচেতন করতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে। মাইকিং করে দিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। নানা ররক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আমরা যেকোন মূল্যে সরকারি নির্দেশনার আলোকে নগরবাসীকে রাখতে চাই। এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন