করোনা মহামারীর কারণে সমগ্র বিশ্ব প্রায় নিশ্চিতভাবেই চরম অর্থনৈতিক মন্দায় জড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দেশ মহামারীটি প্রতিরোধের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করার ফলে এখন আশঙ্কা বাড়ছে যে, অর্থনৈতিক মন্দাটি প্রাথমিকভাবে পরবর্তী বছর পর্যন্ত স্থায়ী হওয়ার পরিবর্তে সম্ভবত আরো বেশি পীড়াদায়ক এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে যাচ্ছে। হার্ভার্ডের অর্থনীতিবিদ ও আর্থিক সঙ্কটের ইতিহাসের সহ-লেখক কেনেথ এস. রোগফ বলেছেন, ‘এটি ইতিমধ্যে ১শ’ বছরেরও বেশি সময়ের বিশ্ব অর্থনীতির ইতিহাসের গভীরতম ক্ষতের রূপ নিতে শুরু করেছে।’
যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি, প্রায় নিশ্চিত মন্দার মধ্যে পড়েছে। ইউরোপও তাই। সম্ভবত একই অবস্থা কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং মেক্সিকো’র মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক দেশগুলোর।
গবেষণা সংস্থা টিএস লম্বার্ডের মতে, চীন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে চলতে বছরে মাত্র ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রণোদনা প্যাকেজগুলির কার্যকারিতা সম্পর্কেও নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, সাধারণ অর্থনৈতিক ধাক্কায় সরকারগুলো জনগণকে বাইরে গিয়ে ব্যয় করতে উৎসাহিত করার জন্য প্রণোদনা অর্থ ব্যয় করে। কিস্তু করোনা মহামারীর এই সঙ্কটে কর্তৃপক্ষগুলি ভাইরাসকে সীমাবদ্ধ করার জন্য মানুষকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘরের ভেতর অবস্থানের আদেশ করছে।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্মেলন সংস্থার তথ্য অনুসারে বিশ্বব্যাপী বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ চলতি বছরে ৪০ শতাংশ হ্রাস পাবে। সংস্থাটির বিনিয়োগ এবং উদ্যোগ বিষয়ক পরিচালক জেমস য্যান বলেছেন, ‘এটি বিশ^জনীন উৎপাদন এবং সরবরাহ কাঠামোর উপর একটি দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির হুমকি স্বরূপ।’
উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এর পরিণতি ইতিমধ্যে মারাত্মক আকার নিয়েছে। দেশগুলিতে মূলধনের ঘাটতির পাশাপাশি পণ্যম‚ল্য, বিশেষত তেলের স্বল্পমূল্য অনেক দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এদের মধ্যে মেক্সিকো, চিলি এবং নাইজেরিয়া রয়েছে। চীনের ধীরগতির উৎপাদনের কারণে চীনা ফ্যাক্টরিগুলোতে কাঁচামাল সরবরাহকারী ইন্দোনেশিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলিতেও মন্দা চলছে।
মার্কিন বাণিজ্য সংস্থা কর্তৃক সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলিকে এখন থেকে আগামী বছরের শেষের মধ্যে প্রায় ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ শোধ করতে হবে। সাধারণ সময়ে তারা ঋণের বেশিরভা পরিমাণ নবায়ণ করতে পারে। কিন্তু আকস্মিক বিশ^জনীন অর্থনৈতিক ধস বিনিয়োগকারীদেরকে নতুন ঋণের জন্য উচ্চ হারে সুদ নেয়ার জন্য প্ররোচিত করেছে। সবচেয়ে আশাবাদী দৃষ্টিতে দেখলে, ইতিমধ্যে সমস্যার সমাধানের কাজ চলছে। চীন কার্যকরভাবে ভাইরাসটিকে বশ করেছে এবং দেশটি ধীরে ধীরে আবার কাজ শুরু করেছে।
চাইনিজ কারখানাগুলি যদি প্রাণ ফিরে পায়, সেই স্পন্দন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। তাইওয়ানে তৈরি কম্পিউটার চিপস, জাম্বিয়ার খনি থেকে তোলা তামা এবং আর্জেন্টিনায় উৎপাদিত সয়াবিনের চাহিদা বাড়িয়ে তুলবে। কিন্তু চীনের উৎপাদন শিল্প বৈশ্বিক বাস্তবতা প্রতিরোধক নয়। আমেরিকানরা যদি মহামারী নিয়ে এখনও লড়াই করতে থাকে, যদি দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্ব বাজারে থেকে ঋণ নিতে না পারে এবং যদি ইউরোপে মন্দা হয়, তবে বিশ^ব্যাপী চীনা পণ্যের চাহিদা সীমিত হয়ে যাবে।
গণ বেকারতের¡ মূল্য সমাজকেই বহন করতে হয়। ব্যাপক দেউলিয়াকরণ বিনিয়োগ ও নতুন ধারাকে গ্রাস করে শিল্পখাতকে দুর্বল অবস্থায় ফেলে দেবে। এমনকি, ভাইরাসকে দমন করার পরেও, যদিও কখন তা ঘটবে তা কেউ জানে না, অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত, সমস্যায় জর্জরিত করোনা পরবর্তী পৃথিবীকে পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন