বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিশ্ব জাকের মঞ্জিল ও সন্নিহিত ২৫ বর্গকিলোমিটার জনমানুষে পরিপূর্ণ

কাল ফজর বাদে আখেরি মোনাজাত

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে মহা পবিত্র উরশ শরিফকে কেন্দ্র করে এ বিশাল দরবার শরিফ ও সন্নিহিত প্রায় ২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা ইতোমধ্যে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। বরিশাল-ফরিদপুর জাতীয় মহাসড়ক ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের ৩টি প্রান্ত থেকে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলমুখী সবগুলো সড়কই ইতোমধ্যে যানবাহনের ভিড়ে আটকে গেছে। দেশ-বিদেশের লাখ লাখ জাকেরান ও আশেকানসহ মুসুল্লিয়ানদের আল্লাহ আল্লাহ জিকিরে প্রকম্পিত হচ্ছে বিশ^ জাকের মঞ্জিল ও সন্নিহিত বিশাল এলাকা।
গত শুক্রবার জুমার নামাজ বাদে মিলাদ শরিফ শেষে বিশ^ জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব হজরত মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ খাজাবাবা ফরিদপুরী (কু.ছে.আ.) ছাহেবের রওজা শরিফ জিয়ারতের মাধ্যমে এ উরশ শরিফের কার্যক্রমের সূচনা হয়েছে।
আগামীকাল মঙ্গলবার ফজর নামাজ বাদ ফাতেহা শরিফ ও খতম শরিফ আদায়ন্তে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এবং মিলাদ শেষে পীর ছাহেবের রওজা শরিফ জিয়ারতের নিয়তে পুনরায় ফাতেহা শরিফ পাঠন্তে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত বিশ্ব জাকের মঞ্জিলমুখী জনস্রোত অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। জনস্রোতের কারণে ইতোমধ্যে আগতদের বেশিরভাগই এ দরবার শরিফে প্রবেশ করতে পারছেন না।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেবের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী পীরজাদা আলহাজ খাজা মাহ্ফুযুল হক মুজাদ্দেদী ছাহেব পুরো কর্মকাণ্ড তত্বাবধান ও পরিচালনা করেছেন। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ৫০ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়ক হিসেবে কাজ করছেন। এ দরবার শরিফে আগত হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্ট্রান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের শান্তিকামী মানুষের জন্যও আলাদা সুবিশাল কম্পাউন্ডে অবস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এবারো দশটি বিশাল খাবার মাঠে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৭০ হাজার মুসুল্লির খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। ওযু ও পয়ঃপ্রণালী সুবিধা নিশ্চিতে এ দরবার শরিফে পর্যাপ্ত অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। পুরো এলাকায় ৫০টিরও বেশি সুবিশাল গাড়ী পার্কিং, অতিরিক্ত হেলিপ্যাড নির্মাণ, চিকিৎসা সেবার জন্য হাসপাতালের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বিশ^ জাকের মঞ্জিল আলীয়া মাদরাসার বিশাল ভবনেও বিপুল সংখ্যক মুসুল্লিয়ানের অবস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাংলা ১৩৫৪ সনে বিশ^ জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব খাজাবাবা ফরিদপুরী (কু.ছে.আ.) ছাহেব আপন পীরের নির্দেশে যখন আটরশীতে আসেন, তখন এখানের মুসলমানরা ইসলামের বিধান সম্পর্কে ওয়া কেবাহাল ছিলেন না। তারা ঈদ ও কোরবানির দিন লাঙ্গল-জোয়াল নিয়ে জমিতে যথারীতি হাল চাষ করতে যেত। অথচ পূজা-পার্বনে নতুন জামা কাপড় পড়ে প্রতিমা দর্শনে বের হত।
সে অবস্থাতেই মাত্র সাড়ে ৬ টাকায় খেজুরের খোলের বেড়া ও ছনের ছাউনি দেয়া ১টি ঘর কিনে তিনি আটরশীতে ‘জাকের ক্যাম্প’ প্রতিষ্ঠা করে ইসলাম প্রচার শুরু করেছিলেন। কালের বিবর্তনে তা জাকের মঞ্জিল থেকে আজকের বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে রূপ নিয়ে সারা বিশ্বে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিচ্ছে।
বিশ^ জাকের মঞ্জিলে উরশ শরিফসহ ১২ মাসই রাতের শেষ প্রহরে রহমতের সময়ে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে প্রতিদিনের এবাদত বন্দেগীর কার্যক্রমের সূচনা হয়ে থাকে। এরপরে মিলাদ ও দোয়া মোনাজাত ছাড়াও জিকির শেষে জামাতের সাথে ফজরের নামাজ আদায়ন্তে ফাতেহা শরিফ ও খতম শরিফ পাঠন্তে এ দরবারে প্রতিদিনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকছে। বিশ^ জাকের মঞ্জিলে সারা বছরই ফজর থেকে এশার নামাজ জামাতের সাথে আদায়সহ নফল নামাজ, মোনাজাত এবং মোরাকাবা-মোশাহেদা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এছাড়াও বাদ ফজর ও মাগরিব বাদে ফাতেহা শরিফ পাঠন্তে মোনাজাত এবং এশার নামাজন্তে ৫শ’ বার দরুদ শরিফ পাঠ করে নবী করিম (সা.) কে নজরানা দেয়া হচ্ছে। জোহর, মাগরিব ও এশার নামাজন্তে নফল নামাজ আদায় এবং দোয়া-মোনাজাতও অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে।
রোববারেও সারা দেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চল থেকেও কয়েকশ বাস বোঝাই করে জাকেরান ও আশেকান সহ মুসুল্লিয়ানগণ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের উরশ শরিফে যোগদানের জন্য সমবেত হয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন