নড়াইল জেলা সংবাদদাতা
“ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি, তৃণমূল থেকে আজ পর্যন্ত নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে দলকে সংগঠিত করে আসছি। কিন্তু লোহাগড়া পৌর নির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ড মেয়র পদে অপরিচিত মুখকে মনোনয়ন দেওয়ার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে ত্যাগী রাজনীতিক বলে কিছুই নেই”-মন্তব্যটি করেছেন নড়াইলের লোহাগড়া পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ কামাল। ঈদের আগে থেকে লোহাগড়া পৌর এলাকার সাধারণ মানুষের মনের কোণে একটাই প্রশ্ন- কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি? সাধারণ মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিলেন, হয়তো আ.লীগ থেকে ত্যাগী কোন নেতা মেয়র পদে আ.লীগের মনোনয়ন পাবেন। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ১০ জুলাই রাতে আ.লীগের হাইকমান্ড লোহাগড়া পৌর মেয়র পদে লোহাগড়ায় লিপি খানমের নাম ঘোষণা করেছেন। ঘোষণার পরেই আ.লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। গত ১১ জুলাই সারাদিন বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানে আ.লীগের মেয়র প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া ফুটে উঠেছে। গত দু’বারের আ.লীগের প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল আলমকে নিয়ে সাধারণ মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল। এবার হয়তো তাকে দল মনোনয়ন দেবেন। কিন্তু সব কিছু শেষ। তবে সাধারণ মানুষ এখন যুবলীগ নেতা আশরাফুলকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। লোহাগড়ার আওয়ামী রাজনীতিতে আশরাফুলের অবদান অনেক। কেননা আপন দুই ভাই ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আশরাফুল ও যুবলীগ নেতা খসরুল আলম খসরু দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র লীগ থেকে যুবলীগ পর্যন্ত আ.লীগকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। গত ২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগের এমপি শরীফ খসরুজ্জামান ও তার সমর্থকদের বিরাগভাজন হন আশরাফ ও খসরু দুভাই। গভীর ষড়যন্ত্রে প্রতিপক্ষের হামলায় নৃশংসভাবে খুন হন যুবলীগ নেতা খসরুল আলম খসরু। তাছাড়া রাজনৈতিক মারপ্যাচে আ.লীগের অপর একটি অংশের মদদে আশরাফুল আলমের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এই সব ঘটনায় আশরাফুল ও তার পরিবার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পৌরবাসী তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয় এবং সাধারণ জনগণ মনে করে আ.লীগ নেতৃবৃন্দ তার প্রতি সুবিচার করবেন। এর আগে মেয়রপদে আ.লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন সঠিক না হওয়ায় ২০০৫ সালে প্রথম ও ২০১১ সালে দ্বিতীয় দফা পৌর নির্বাচনে মেয়র পদটি হাত ছাড়া হয়ে যায় আওয়ামী লীগের। এ সুযোগে বিএনপির প্রার্থী অ্যাড. নেওয়াজ আহম্মেদ ঠাকুর নজরুল দু’বার মেয়র নির্বাচিত হন। প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক লোহাগড়া ইউপি চেয়ারম্যান শিকদার শাহিদুর রহমান। প্রথম নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হয়ে শিকদার শাহিদুর রহমান ৫০৬ ভোট পান, অথচ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও উপজেলা ছাত্রলীগের (সাবেক) সভাপতি ও যুবলীগের বর্তমান সভাপতি আশরাফুল আলম ১৬৭৬ ভোট পেয়েও পরাজিত হন। ২০১১ সালে দ্বিতীয় পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা মুন্সী আলাউদ্দিন। দলীয় প্রার্থী হয়ে মুন্সী আলাউদ্দিন ৯১১ ভোট পান, অথচ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে যুবলীগের বর্তমান সভাপতি আশরাফুল আলম ৪৫৮৬ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। সে নির্বাচনে ৪৮০০ ভোট পেয়ে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হন। বিগত দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন না দিলেও শুধুমাত্র ব্যক্তি ইমেজে দলের নেতা কর্মীরা আশরাফুলকে বিজয়ী করতে মরিয়া হয়ে উঠলেও সামান্য ভোটে পরাজয় বরণ করে। উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু পৌর মেয়র পদে মনোনয়ন প্রসংগে বলেন, নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, তার বাইরে কাজ করার সুযোগ নেই। তৃণমূল নেতাকর্মীদের আবেগের বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রসংগে প্রশ্ন করলে তিনি তার জবাবে বলেন, আমরা উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ হয়তো তৃণমূলের চাওয়া-পাওয়াকে নেত্রীর কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন