পঞ্চগড় জেলা সংবাদাতা
হাসপাতালের বিছানায় প্রসব ব্যথায় ছটফট করছেন এক প্রসূতি মা। জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য তাকে নেওয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। প্রসূতির শারীরিক দুর্বল ছিল। এজন্য রক্তের গ্রুপ মিলিয়ে রক্ত দাতাকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। কিন্তু অস্ত্রোপচারের ঠিক পূর্বক্ষণে রক্তের গ্রুপ নিয়ে দেখা দেয় বিপত্তি। হাসপাতালের সরকারি ল্যাবোরেটোরীতে ধরা পরে রোগীর রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ভুল ছিল। এ নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে চরম বিপাকে পড়েন চিকিৎসকরা। গত ১২ জুলাই দুপুরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে। তবে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে ভুল করা বেসরকারি প্যাথলজির মালিক এবং টেকনোলজিস্ট রোগীর লোকজনকে অনুরোধ করে ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করেন। প্রসূতির স্বজন ও চিকিৎসকরা জানায়, পঞ্চগড় সদর উপজেলার মোলানী পাড়া এলাকার হোটেল শ্রমিক হাফিজুল ইসলামের প্রসূতি স্ত্রী জোসনা বেগমকে সার্বিক পরীক্ষার পর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। শারীরিক দুর্বলতার কারণে তাকে ১৫ দিন আগেই পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অস্ত্রোপচারের সময় রক্তের প্রয়োজন হবে এই আশঙ্কায় পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়সহ একজন রক্ত দাতাকে প্রস্তুত রাখতে বলেন চিকিৎসক। গত ২৮ জুন শহরের সেবা প্যাথলজি এন্ড এক্স-রে সেন্টারে রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এস.এম সাদেকুজ্জামান সোহেল নামে বে সরকারি এই প্যাথলজির টেকনোলজিস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী একজন ও (পজিটিভ) রক্তদাতা প্রস্তুত রাখা হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচারের ঠিক জরুরি মুহূর্তে হাসপাতালের সরকারি ল্যাবরেটরিতে রোগীর রক্তের গ্রুপ বি (পজিটিভ) নির্ণয় হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে তাৎক্ষণিক স্বজন ও স্থানীয়দের রক্ত পরীক্ষা শুরু হয়। এক পর্যায়ে হাসপাতালেরই একজন স্টাফের রক্তের গ্রুপ মিলে যাওয়ায় রোগীকে তার রক্ত দিয়েই শুরু করা হয় অস্ত্রোপচার। সফল অস্ত্রোপচারে জন্ম হয় ফুটফুটে এক কন্যা শিশু। প্রসূতির স্বামী হাফিজুল ইসলাম বলেন, আমরা গরীব মানুষ তাই আমাদের সাথে ওরা এইটা করার সাহস পেয়েছে। যে ডাক্তার (টেকনোলজিস্ট) আমার স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ ভুল নির্ণয় করেছেন, আমি তার বিচার চাই। এ নিয়ে সেবা প্যাথলজী এন্ড এক্স-রে সেন্টারের টেকনোলজিস্ট এসএম সাদেকুজ্জামান সোহেল কোন কথা বলতে রাজী হননি। মোবাইল ফোনে তার সাথে কথা বললে তিনি কোন প্রশ্নের জবাব না দিয়েই সংযোগ কেটে দেন। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের এ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মনসুর আলম বলেন, বাইরে থেকে পরীক্ষা করে আনা ও (পজিটিভ) রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ভুল ছিল। পরে রোগীর রক্তের গ্রুপের সাথে মিলিয়ে অন্য একজনের বি (পজিটিভ) রক্ত নিয়ে অস্ত্রপচার করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন