শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

লতিরাজ কচু চাষে কৃষকের সাফল্য

প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

টি এম কামাল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে
‘কচু’ একটি অবজ্ঞামূলক ব্যঙ্গবিদ্রপ শব্দ। কারো কথাকে ব্যঙ্গ করা হলে বলা হয়, এগুলো কচুর কথা। কিন্তু কচু কত যে মূল্যবান এবং ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ একটি উৎকৃষ্টমানের খাদ্য, তা বলার আর আপেক্ষা রাখে না। কচুতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন। নিয়মিত কচু রান্না করে খেলে ‘রাতকানা’ রোগ হয় না। অনেক সময় ‘রাতকানা’ লোকের চোখে জ্যোতি আসে। সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে এবং বগুড়ার ধুনটে স্থানীয় জাতের উৎপাদিত ‘লতিরাজ কচু’ (বড়-ছোট কচুমুখী) অন্যান্য কচুর চেয়ে উন্নতমানের সুস্বাদু একটি সবজি। এক সময় কাজিপুরে ও ধুনটে প্রচুর পরিমাণে ‘কচুমুখীর’ চাষ করা হতো। কচুমুখীকে ঘিরে সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ার লোকজন কাজিপুর ও ধুনটের লোকজনকে এক সময় ব্যঙ্গ করে বলত কচু এলাকার মানুষ। ১৪-১৫ বছর পূর্বে কচু বেশি পরিমাণে চাষ হলেও চাষিরা ন্যায্যমূল্য পেত না। মাত্র ২-৩ টাকা মূল্যে পিচ ও কেজি দরে বিক্রয় হতো। বর্তমানে ১ কেজি কচুর মূল্য ৩০-৩৫ টাকা ও পিচ ১৫-২০ টাকা। কাজিপুর উপজেলার রশিদপুর, পরানপুর, কালিকাপুর, উদগাড়ী, সোনামুখী, হরিনাথপুর, পাঁচগাছী, কুনকনিয়া, ভানুডাঙ্গা, শ্যামপুর, ঢেকুরিয়া এবং ধুনট উপজেলার কচুগাড়ী, গোসাইবাড়ী গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে এ কচু বেশি পরিমাণে চাষ হয়। এছাড়া দুই উপজেলার চরাঞ্চলে প্রায় গ্রামে এ কচু চাষ হয়ে থাকে। এ কচুকে ঘিরে পার্শ্ববর্তী ধুনট উপজেলার একটি গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে ‘কচুগাড়ী’। এক সময় কাজিপুর এবং ধুনটে উন্নতমানের কচুর চাষ হতো। বর্তমানে সেখানে এ কচুর চাষ হয় না। দেশে বর্তমানে সিরাজগঞ্জে-বগুড়ার কয়েক উপজেলায় কিছু কচুর চাষ হলেও তা আগের মতো উন্নতমানের নয়। চৈত মাসে এ কচুর চাষ করা হয়। আষাঢ় মাসে কচুর ফলন আসে। সারিবদ্ধভাবে আঁটি করে বীজ বপনের পর এর থেকে চারা বের হয়। চারার গোড়ায় মাটি দিয়ে নিড়ানি দিতে হয়। নিড়ানি শেষে মাটি দেয়ার পর কিছু ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিতে হয়। এ লতিরাজ কচুর জন্য কচুরীপানা কম্পোস্ট সার হিসেবে বেশি উপযোগী। প্রতি হেক্টরে প্রায় ৩-৪ টন কচুর ফলন হয়। চলতি মৌসুমে কাজিপুরে ২০ ও ধুনটে ২৫ হেক্টর জমিতে লতিরাজ কচুর চাষ করা হয়। উৎপাদিত এ কচুর মূল্য প্রায় ৮০ লাখ টাকা। এ কচুর নাইল আরেক উৎকৃষ্টমানের খাদ্য। এর স্বাদই আলাদা। লতিরাজ কচু মাছ ও মাংস দিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়। বিশেষ করে ইলিশ মাছ দিয়ে রান্না করলে তার স্বাদ হয় অপূর্ব। কাজিপুরে ও ধুনটে বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লতিরাজ কচুর চাষ হচ্ছে। কাজিপুর-ধুনটে স্থানীয় এলাকায় এর চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় এ কচুর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। চাষিরা জানিয়েছেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ লতিরাজ কচুর চাষ আরো সম্প্রসারণ করা হবে। যা দেশের অর্থনীতিতে দারুণভাবে প্রভাব পড়বে। কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মামুনুর রহমান জানান, এবার কচুর বাম্পার ফলন হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন