এস কে সাত্তার, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে
এই ভরা বর্ষায় ও পর্যাপ্ত বৃষ্টি নেই ঝিনাইগাতীতে। এ যেন আবহাওয়ার রীতিমতো হেয়ালি আচরণই বটে। ঋতু বৈচিত্র্যের ব্যাপারটি যেন এখন বলতে গেলে হয়ে গেছে অনেকটাই গ্রন্থগত। বর্ষায় যেমন বৃষ্টি নেই তেমনি গ্রীষ্মে দেখা যায় অতিবৃষ্টি। এই বর্ষাকালে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না থাকায় ঝিনাইগাতীতে তপ্ত তাপমাত্রায় মানুষের হাসফাঁস অবস্থা। তার ওপর আবার থাকছে না নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ। চলছে ঘন ঘন লোডশেডিং। এমনি অবস্থায় চলতে হয়েছে রমজান। আর বাড়তে শুরু করেছে রমজানদ্রব্যসহ পণ্যমূল্য। তারপর আবার আশানুরূপ বৃষ্টির অভাবে আমন চাষিরাও পড়েছে মহা বিপাকে। অনেকেই পানির অভাবে আমনের চারা রোপণ করতে না পেরে। সব মিলিয়ে ঝিনাইগাতীর সর্বস্তরের লোকজন হয়ে পড়েছে দিশেহারা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই প্রকৃতির এমন বিরূপ আচরণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রকৃতির এমন বিরূপ আচরণে মানুষের নানা রোগব্যাধি ছাড়াও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে কৃষি ক্ষেত্রেও। বিশেষজ্ঞদের মতে, আবহাওয়ার এ ধরনের আচরণ জলবায়ু পরিবর্তনেরই করণেই ঘটছে। এ জন্যই প্রকৃতি এমন বিরূপ আচরণ করে চলেছে। প্রকৃতি এখন আর স্বাভাবিক আচরণ করছে না। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ক্রমেই বেড়ে চলছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়ও পরিবর্তন ঘটছে। আর এ জন্যই বছরের যে সময় আবহাওয়া যেমন থাকার কথা, তা থাকছে না। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ, তাতে ক্রমেই পরিবর্তন ঘটছে। ৬ ঋতুর দেশে এখন যেন ঋতু মাত্র ৩টি। গ্রীষ্ম, বর্ষা, আর শীত ছাড়া বাকি বসন্ত, শরৎ এবং হেমন্তকাল যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। তাছাড়া গ্রীষ্ম, বর্ষা এবং শীতকালেও আবহাওয়ার অস্বাভাবিকতা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় বটে। আর সে জন্যই বর্ষাকাল শুরু হলেও সেভাবে দেখা নেই বৃষ্টির। খাল-বিল, নদীনালা এখনো পানি শূন্য! অপরদিকে বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা। ফলে একদিকে জনজীবন ওষ্ঠাগত। অপরদিকে অত্যধিক তাপমাত্রার ফলে মানুষের হচ্ছে নানা ধরনের রোগব্যাধি, হাসপাতালে এখন আর ঠাঁই নেই। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আর শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়েছে নানা রোগে। তাছাড়া অপুরণীয় ক্ষতি হচ্ছে ফসলাদির। উৎপাদন কমছে ভোগ্যপণ্যের। এ প্রসঙ্গে নানা শ্রেণি, পেশার মানুষ মন্তব্য করেছেন, গত ক’দিন যাবৎ এমন গরম পড়েছে যে জীবনটা যায় যায় অবস্থা। তার ওপর আবার ঘন ঘন বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার খেলাতো আছেই। জীবনে এতো লোডশেডিং আর দেখিনি। মনে হচ্ছে কখন যে হিটস্ট্রোকে মারা যাই তা আল্লাহই ভালো জানেন এমন মন্তব্য করেছেন শালচুড়া গ্রামের সরোয়ার্দী দুদু ম-ল। এই ভরা বর্ষাকালেও আশানুরূপ বৃষ্টির দেখা নেই। তার ওপর অস্বাভাবিক লোডশেডিং যেন মরার উপর খাঁরার ঘা। ভরা আষাঢ়ে বৃষ্টির অভাবে তাপমাত্রা যেমন বাড়ছে তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অসহনীয় বিদ্যুৎ ঘাটতি, তারপর নিত্যপণের মূল্য বৃদ্ধিতো আছেই। এই অবস্থায় শুরু হয়েছে রোজা। চাল, আটা, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ভোজ্য তেল, ছোলা এবং চিনিসহ মাছ-মাংস, তরিতরকারী, শাকসবজির মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষুদ্ধ ঝিনাইগাতীর সাধারণ মানুষ। শুধু যে এ বছরই তা কিন্তু নয়। গত বছরও বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির অভাবে এখানকার কৃষকসহ সর্বশ্রেণির মানুষের কৃষি-সেচসহ জনস্বাস্থ্য সমস্যা প্রকট থেকে প্রকটতর আকার ধারণ করে। এ বছরও সে অবস্থাই বিরাজ করছে। এই ভরা বর্ষায় আষাঢ়ের শেষ পর্যন্ত ও কাক্সিক্ষত বৃষ্টির দেখা নেই বললেই চলে। ফলে দ্রুত বাড়ছে তাপমাত্রা। সেই সাথে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং গোটা পরিস্থিতিকে আরো অসহনীয় করে তুলছে। সাধারণ জনগণের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ। রমজান শুরুর সাথে সাথে মানুষ যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিল রোজা রাখার জন্য। সেই প্রথম রমজানেই মুসল্লিসহ সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে রমজান সামগ্রীসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন