বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

পাহাড়ে লেবু চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছে চাষিরা

প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এসকেএম নুর হোসেন, পটিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে
পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কাগজী লেবু এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে আসছে। কাগজী লেবু বিক্রয় করে চাষি ও বিক্রেতারা প্রতিবছর কোটি টাকা আয় করছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এলাকার লেবু চাষিরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবে গড়ে উঠবে অনেক জ্যাম, জেলিসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া জাতকরণ কারখানা। এ ঐতিহ্যবাহী কাগজী লেবু উৎপাদন হয়ে থাকে পটিয়ার পাহাড়ী অঞ্চলে। ১৯৮০-৮১ সালে পটিয়ার বিস্তৃর্ণ পাহাড়ী অঞ্চলে চাষিরা কাগজী লেবুসহ বিভিন্ন জাতের লেবুর চাষ করে। লেবু সাধারণত ৫ জাতের রয়েছে। এর মধ্যে কাগজী লেবু, পাতি, এলাচি, বাতাবি ও নতুন জাতের হাইব্রিট সিডলেস নামের একটি লেবুর চাষ বর্তমানে হচ্ছে। ৮৫ সালে পটিয়ার খরনা, হাইদগাঁও, কেলিশহর, চন্দনাইশের কাঞ্চননগর, হাশিমপুর এলাকা, বোয়ালখালীর করল ডেঙ্গা, জৈষ্ট্র্যপুরা ও কানুনগো পাড়ার পাহাড়ী এলাকার ব্যাপক পরিমাণে লেবুর চাষ গড়ে উঠে। পটিয়াসহ আশে পাশের পাহাড়ী অন্যান্য এলাকার লেবু চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথের পটিয়াস্থ চক্রশালা, খরনা রেলস্টেশনে জমা হতো। ৮৫ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত এক নাগারে ১১ বছর যাবৎ চক্রশালা রেলস্টেশনে ১৬নং ডাউন ট্রেন দিয়ে সন্ধ্যায় শত শত টুকরি কাগজী লেবুর চালান চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হতো। ফলে চক্রশালা রেল স্টেশনে কাগজী লেবুর বুকিং চার্জ নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ লেবু খাতে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় করতো। তখনকার সময়ে এক টাকা দিয়ে ৪/৫টি লেবু পাওয়া যেতো। যে পরিমাণ লেবু উৎপাদন হতো সে লেবু দিয়ে বেভারেজ কোম্পানি জুস, আচার, জ্যাম, জেলিসহ বিভিন্ন উপাদেয় খাবার তৈরি করতো। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে গত ১৫/১৬ বছর ধরে লেবু বাগানে ছত্রাক জাতীয় রোগের আক্রমণে লেবু বাগানের অনেক গাছ মরে যায়। ফলে দিনদিন পটিয়ার লেবুর উৎপাদন কমতে থাকে। এতে ব্যাপক হারে লেবু বিক্রি বন্ধ সহ বেভারেজ কোম্পানির অর্ডার বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে বাগানে নতুন করে কিছু গাছ সৃষ্টির ফলে ইদানিং লেবুর উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। চৈত্র-বৈশাখ মাসে লেবুর ফুল আসে। আষাঢ়-শ্রাবণে লেবুর ভরা মৌসুম সৃষ্টি হয়। চাষিরা জানিয়েছে, পটিয়ার কমলমুন্সির হাটে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকার লেবু বিক্রি হয়। সবচেয়ে বেশি কমলমুন্সির হাটে লেবু বিক্রি হয়ে থাকে। চন্দনাইশ, বোয়ালখালীর দুই তিন স্পটে প্রতিদিন ২০/৩০ হাজার টাকার লেবু বিক্রি হয়ে থাকে। এভাবে দুই মাস যাবৎ লেবুর মৌসুম চলে। এ মৌসুমে প্রায় ১ কোটি টাকার লেবু বিক্রয় করে স্থানীয় চাষিরা। আর প্রায় ২০ হাজার খুচরা বিক্রেতা এ লেবু বিক্রয়ের সাথে জড়িত হয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। চলিত বর্ষা মৌসুমে নির্দিষ্ট সময়ে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় লেবুর বাম্পার ফলন হয়েছে। লেবুর দাম ভালো থাকায় কৃষকেরাও মহাখুশি। রমজান, ঈদ ও আবহাওয়া গরম থাকার কারণে লেবুর দাম চড়া থাকায় এবার চাষি ও খুচরা বিক্রেতারা ৩/৪ গুণ বেশি দাম পেয়ে আর্থিকভাবে ব্যাপক লাভবান হয়েছে। খরনার লেবু চাষি আবদুল নুর জানান, বাণিজ্যিকভাবে লেবু উৎপাদন ও বিক্রয় করার কারণে এ পাহাড়ের গ্রামগুলোকে লেবু গ্রামও অনেকেই বলে থাকেন। পাহাড়ীও সমতল উর্বর লেবু চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষের প্রতি অনেকেই ঝুঁকে পড়েছেন। লেবু চাষিদের অভিযোগ পরিত্যক্ত পাহাড়ী ভূমি যদি লেবু চাষের আওতায় আনা হয় তাহলে উৎপাদিত লেবু দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমাণে বিদেশেও রফতানি করা যেত। স্থানীয় লেবু চাষিরা আক্ষেপ করে বলেন, লেবু ও সবজি রাখার জন্য হিমাগার না থাকায় উৎপাদিত লেবুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি সংরক্ষণ করতে না পারার কারণে অনেক সময় কম দামে এগুলো বিক্রি করতে হয়। এ ব্যাপারে পটিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রুগুনাথ নাহা জানান, পটিয়ার ১০ হাজার একর পাহাড়ী ভূমিতে লেবুর চাষ হয়ে থাকে। দেশের ঐতিহ্যবাহী কাগজী লেবু উৎপাদন হয় পটিয়া উপজেলার পাহাড়ী অঞ্চলে। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে লেবু বাগান রোগমুক্ত করার জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ এলাকার লেবু দেশের চাহিদা মিটিয়ে অনেক ক্ষেত্রে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন