অধ্যাপক শামসুুল হুদা লিটন
মানুষ হলো আশরাফুল মাখলুকাত- সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ পৃথিবীতে একবারই জন্মগ্রহণ করে এবং একবারই তার মৃত্যু হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে পৃথিবীতে তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছেন। মানুষ পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করবে, পৃথিবীকে পরিচালিত করবে। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করবে। মানুষ সৃষ্টির এটাই উদ্দেশ্য। মানুষ হচ্ছে আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় সৃষ্টি। আর এই মানুষ হত্যা করা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় কাজ। মানুষ হত্যা করা সবচেয়ে বড় কবিরা গুনা। হজরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন সবার আগে হত্যার বিচার হবে”।
ইসলামে ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষ হত্যা করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। মানুষ হত্যা করার ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মহাগ্রন্থ আল কুরআন মজিদে এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার পরিণাম জাহান্নাম। সেখানে সে চিরদিন থাকবে। আল্লাহ তার ওপর ক্রুদ্ধ হন, অভিসম্পাত করেন এবং তার জন্য ভয়ঙ্কর আজাব প্রস্তুত করে রেখেছেন” (সুরা আন নিসা)।
মানুষ হত্যাকারীরা হয় মহাপাপী। মানুষ হত্যাকারীর জন্য আল্লাহ পরকালে আজাব দ্বিগুণ করার কথা বলেছেন। মানুষ হত্যাকারীর জন্য অপেক্ষা করছে মহা অপমান ও লাঞ্ছনা। একজন মানুষকে খুন করার অর্থ হলো পৃথিবীর সকল মানুষকে খুন করা। ইসলাম একটি হত্যাকা-কে গোটা মানব জাতির হত্যার শামিল বলে অভিহিত করেছেন। আল্লাহ বলেন, “এ কারণেই আমি বনি ইসরাইলকে লিখে দিয়েছি যে, যে ব্যক্তি কোনো হত্যার বিনিময়ে ছাড়া কাউকে হত্যা করল সে যেন সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করল আর যে একটা প্রাণকে বাঁচাল সে যেন গোটা মানবজাতিকে বাঁচাল” (সুরা আল মায়েদা)।
ইসলামে মানুষ হত্যা করাই অপরাধ নয় মানুষকে হত্যার ইচ্ছা করা, হত্যার জন্য চিন্তা করা, হত্যার জন্য কাউকে প্ররোচিত করা ও জঘন্য অপরাধ। হত্যার হুকুমকারী মানুষ হত্যাকারী। হত্যার পরিস্থিতি তৈরি করা ও হত্যার অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘অবৈধ হত্যাকা- না ঘটানো পর্যন্ত বান্দার আর সকল গুনা মাফ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’ মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, “আমার কাছে কোনো মুমিনের হত্যাকা- সমগ্র পৃথিবীর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার চেয়েও মারাত্মক ঘটনা। বেহেস্তের সুঘ্রাণ ৪০ বছরের দূরে থেকে পাওয়া গেলেও কোনো অমুসলিমকে হত্যাকারী জান্নাতের ঘ্রাণ পর্যন্ত পাবে না। পৃথিবীতে যত অন্যায় হত্যাকা- হবে, হজরত আদম (আ.)-এর প্রথম পুত্র তার অংশ পাবে। কারণ সে-ই সর্বপ্রথম পৃথিবীতে হত্যাকা-ের প্রচলন করেছে।”
শুধু মানুষ হত্যাই অপরাধ নয়, সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করাও ইসলামে সমান অপরাধী বলে আখ্যায়িত করেছেন। কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন, “আল ফিতনাতু আশাদ্দু মিনাল ক্বাতল।”
যারা আল্লাহ, পরকাল, আসমানী কিতাব, নবী-রাসুলে বিশ^াস করেন এবং যাদের মধ্যে খোদাভীতি আছে তারা মানুষকে হত্যা করতে পারে না, মানুষ হত্যায় কাউকে প্ররোচিত করতে পারে না। পৃথিবীতে বিনা কারণে মানুষকে হত্যা করা, গুম করা, পঙ্গু করা, কিংবা অযথা হয়রানি করার বিচার না হলেও আখেরাতের আদালতে মানুষ হত্যার বিচারই প্রথম হবে। পরকালীন বিচারকার্য শুরু হবে বিনা কারণে মানুষ হত্যার ঘটনা দিয়ে। সব বিচারের আগে হবে হত্যার বিচার। পৃথিবীতে হত্যাকারীরা বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে পার পেলেও হাশরের মাঠে কেউ পার পাবে না। পৃথিবীর আদালত সাক্ষীর অভাবে কিংবা বিচারিক ত্রুটির কারণে ন্যায়বিচার করতে না পারলেও আল্লাহর আদালতে সাক্ষী দিবে নিজের হাত-পা, মুখ, শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। যেখানে হত্যার ঘটনা ঘটেছে সেখানকার মাটি, বাতাস, গাছ-পালা, প্রকৃতি সাক্ষী দিবে মানুষ হত্যাকারীর বিপক্ষে। পরকালীন আদালতে থাকবে না পৃথিবীর আদালতের মতো মিথ্যা সাক্ষী দেবার কোনো সুবিধা।
ষ লেখক : অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, তারাগঞ্জ কলেজ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন