নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে
উত্তরের নীলফামারীর সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতাল জনবল সংকটে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারসহ অন্যান্য জনবল না থাকায় ও অ্যাম্বুলেন্স বিকল হয়ে পড়ে থাকায় রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। হাসপাতালের জরুরি ও বহিঃবিভাগে সেকমোদের দ্বারাই চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। ১৯৬৫ সালে নির্মিত এ হাসপাতালটি শুরু থেকেই ৫০ শয্যার সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছিল। পরবর্তীতে সাবেক এমপি কর্নেল (অবঃ) মারুফ সাকলানের আমলে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বিগত ২০১৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীনে প্রায় ২১ কোটি ব্যয়ে হাসপাতালের চারতলা ভবন, ডাক্তার ও স্টাফ কোয়াটার, ডাক্তারদের স্ব-স্ব চেম্বার, উন্নত অপারেশন থিয়েটার, যথেষ্ট ওষুধ সরবরাহসহ চিকিৎসার জন্য সকল ক্ষেত্রই প্রস্তুত করা হয়েছে। সূত্র জানায়, এই হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল বাড়েনি। ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে হাসপাতালটি। সিনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন ১ জন, সিনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি ১ জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট প্যাথলজি ১, জুনিয়র কনসালটেন্ট ইএনটি ১ জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট অ্যানেসথেসিয়া ১ জন, আর এম প্যাথলজি ১ জন ও রেডিওলিস্ট নেই হাসপাতালে। বর্তমানে একজন ডেন্টাল সার্জন, ১ জন এমও এবং ১ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি মিলে অনুমোদিত পদে আছেন কেবল ৩ জন। হাসপাতালের স্টাফ নার্স, সহকারি নার্স ফার্মাসিস্ট, এমএলএস, কুক মশালচি, সুইপারসহ ৬৩টি পদ অনুমোদিত থাকলেও ১৭টি পদে কোন জনবল নিয়োগ করা হয়নি। ফলে চিকিৎসক ও নার্স সংকটে উপজেলার বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকের ৩ জন সেকমো আর ৩ জন ডাক্তার দিয়ে প্রতিদিন জরুরি আন্তঃ ও বহিঃবিভাগে রোগীদের চিকিৎসাসেবা চলছে। হাসপাতালের কোন জরুরি রোগীকে রেফার্ড করলে রোগীর স্বজনদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। কারণ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। মেরামতের বা নতুন করে অ্যাম্বুলেন্স আনারও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অ্যাম্বুলেন্সের ২ জন চালকের মধ্যে একজন বসে বসে বেতন গুনছেন অপরটিকে কোন লোক নেই। উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও অন্যত্র নেয়ার ক্ষেত্রে রোগী ও পরিবারের লোকজনকে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জানান, হাসপাতালে কোন নিয়ম শৃঙ্খলা নেই। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশ হাসপাতাল জুড়ে। ভর্তির পর আর ডাক্তার পাওয়া যায় না ও মিলে না প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। এই হাসপাতালে সৈয়দপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী চিরিবন্দর, খানসামা, তারাগঞ্জ, পার্বতীপুর প্রভৃতি এলাকার লোকজন প্রতিনিয়ত এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্ত চাকচিক্য ১০০ শয্যা হাসপাতালের ভবন ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি হলেও মিলছে না চিকিৎসাসেবা। এ ব্যাপারে নীলফামারী সিভিল সার্জন ডা. আব্দুর রশীদ জানান, হাসপাতালে ডাক্তার সংকট রয়েছে। রোগীদের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে বাইরের ডাক্তার এনে চিকিৎসা ব্যবস্থা ঠিক রাখা হয়েছে। হাসপাতালের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন