শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

দর্শনা কেরু উচ্চ বিদ্যালয় : শিক্ষক সংকট ও শ্রেণী কক্ষের অভাবে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে : দামুড়হুদার দর্শনার কেরু উচ্চ বিদ্যালয় বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত। নানা অনিয়ম ও কর্তৃপক্ষের অবহেলায় হারাতে বসেছে বিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক সংকট, আসবাবপত্রসহ শ্রেণিকক্ষের অভাব সেইসাথে নানাবিধ সমস্যা ও উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। প্রধান শিক্ষক না থাকায় ঝিমিয়ে পড়েছে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা সচেতন মহলের। জানা যায়, ১৯৩৮ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা দামুড়হুদার দর্শনায় এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ চিনিকল কেরু অ্যান্ড কোম্পানি এবং একই সাথে দর্শনা ডিস্টিলারি স্থাপিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার বিষয়টি মাথায় রেখে চিনিকল কর্তৃপক্ষ ১৯৪৭ সালে চিনিকল কম্পাউন্ডেই কেরু উচ্চ বিদ্যালয় নামের বিদ্যালয়টি স্থাপন করে। এ বিদ্যালয়টিতে প্রথম থেকেই দুই শিফ্টে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান চলে আসছিল। ১৯৮১ সালে কেরুজ কর্ণার মাঠে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য আলাদা ভবন তৈরি করে এবং আলাদা শাখা খুলে সেখানেই চলছে তাদের শিক্ষাদান কার্যক্রম। সেই থেকে বিদ্যালয়ের মূল ভবনে শুধুমাত্র মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান চলছে। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা আট শতাধিক। আগের তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও সেই তুলনায় বাড়েনি পর্যাপ্ত আসবাবপত্রসহ শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকের সংখ্যা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকের ২১টি পদের মধ্যে বর্তমানে শিক্ষক রয়েছেন ১৪জন। প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকের বাকি ৭টি পদ রয়েছে শূন্য। কয়েক বছর আগে প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ায় পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। সেই থেকে চিনিকলের প্রশাসন বিভাগের একজন কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বেশ ক’বছর যাবৎ অবসর ও মৃত্যুজনিত কারণে মোট ৭জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ২০১৪ সালের নভেম্বরে শূন্য পদগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। অজ্ঞাত কারণে দীর্ঘ এক বছরেও উক্ত শূন্য পদগুলিতে কোন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। এদিকে অবসরজনিত কারণে আগামী ১ বছরের মধ্যে আরো ৩ জন শিক্ষকের পদ শূন্য হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া গত ২ বছরে কেরুজ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৩ জন শিক্ষক উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন যারা প্রাথমিক শিক্ষার উপর ভিত্তি করে বিএড করেছেন। ফলে শিক্ষকের অভাবসহ নানাবিধ কারণে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও এখানে রয়েছে শ্রেণিকক্ষ ও বেঞ্চের স্বল্পতা। প্রায় ৮ শতাধিক ছাত্রÑছাত্রীকে প্রতিটি ক্লাসেই একেকটি বেঞ্চে ৫/৬ জন গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করতে হয়। রয়েছে পর্যাপ্ত শৌচাগারের অভাব। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ৪টি টয়লেট থাকলেও ছাত্রদের ২টিতে নেই কোন পানির ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও বিদ্যালয়ে নেই নামাজের জন্য কোন ব্যাবস্থা। বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে মাধ্যমিক পর্যায় থেকে কম্পিউটার শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে। সেক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় কম্পিউটার ও শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও কম্পিউটার শিক্ষার প্রতি রয়েছে চরম অবহেলার অভিযোগ। এছাড়াও এ বিদ্যালয়টিতে আগে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়ে বিদ্যালয়ের সুনাম অর্জন করলেও বর্তমানে খেলাধুলার ব্যাপারে কোন আগ্রহ নেই কর্তৃপক্ষের। বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক চর্চার বিষয়টিও বর্তমানে অনেকটাই উপেক্ষিত। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা চিনিকলের প্রশাসনিক বিভাগের কর্মকর্তা আকরাম হোসেন বলেন, বর্তমানে নানা সমস্যার মধ্যে আমাদের বিল্ডিংয়ের সমস্যাটাই মুল সমস্যা। আর শিক্ষক নিয়োগের জন্য বছর খানেক আগে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল। উক্ত পদসমূহে বেশ কিছু আবেদনও জমা পড়ে। ওই সময় আবেদনকারীদের মধ্য থেকে জনৈক প্রার্থী নিয়োগের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করায় আইনি জটিলতার কারণে শিক্ষক নিয়োগ সম্ভব হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন