শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

অধিকাংশের নেই কাগজপত্র ফিটনেসবিহীন অ্যাম্বুলেন্সের রমরমা বাণিজ্য

প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা

ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। নেই গাড়ির যথাযথ কাগজপত্র। রোগীকে সাপোর্ট দিতে যেসব সেবার ব্যবস্থা থাকা দরকার তার কোনটাই নেই। তারপরও প্রতিদিন পথচারীদের কান ঝালাপালা করে চলছে ফিটনেসবিহীন প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স নামের লক্কর-ঝক্কর গাড়িগুলি। এসব অ্যাম্বুলেন্সের কোনটি পিকআপ গাড়িকে মডিফাই করে, কোনটি বা মাইক্রোবাসকে এম্বুলেন্স সাজিয়ে চলছে রমরমা ব্যবসা। যেন দেখার কেউ নেই। সরকারি হাসপাতালগুলোতে এম্বুলেন্সের ঘাটতির ফলে সুফল হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি। বিষয়টি অবগত থাকলেও বিআরটিএ’র উপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের আড়াল করছে খোদ স্বাস্থ্য বিভাগ। জানা যায়, গুরুতর অসুস্থ রোগীকে পরিবহনের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের ১৭টি এম্বুলেন্স রয়েছে। এরমধ্যে ৯টি সচল। বাকি ৮টি এম্বুলেন্স নষ্ট হবার পর মেরামতের ব্যবস্থা না করেই অচল অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের স্বল্পতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন ক্লিনিক ও ব্যক্তি এম্বুলেন্স না কিনে তারা মাইক্রোবাস বা পিকআপকে মডিফাই করে তৈরি করেছে ফিটনেসবিহীন প্রাইভেট এম্বুলেন্স। এই এম্বুলেন্স নামের গাড়িটিতে অক্সিজেন, ফ্যান বা রোগী পরিবহনের উপযুক্ত ব্যবস্থা ও শোবার সিট নেই। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সংকট থাকায় জীবন বাঁচানোর তাগিদে সমস্যা জর্জরিত এসব এম্বুলেন্স ব্যবহার করছেন সেবা গ্রহীতারা। দীর্ঘ পথের গঞ্জনা সহ্য করে রোগীকে পরিবহনে একপ্রকার বাধ্য হচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে ফিটনেসবিহীন এসব এম্বুলেন্সের মালিক বেসরকারি ক্লিনিক ছাড়াও সরকারি এম্বুলেন্সের ড্রাইভারসহ থানার পুলিশও রয়েছে। যার অধিকাংশের কাগজপত্র নেই। এম্বুলেন্স হবার কারণে ট্রাফিকের নজরদারির মধ্যে আসে না এই গাড়িগুলো। ফলে দাপটের সাথে ব্যবসা করছে তারা। এমনকি সরকারি হাসপাতাল চত্বরে পার্কিং নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। কিছু অসাধু কর্মকর্তার সাথে যোগসাজস করে হাসপাতাল চত্বরেও রাখা হচ্ছে এসব প্রাইভেট এম্বুলেন্স। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ড্রাইভার বলেন, এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ির জন্য প্রতিমাসে ২শ’ টাকা ট্রাফিক বিভাগকে চাঁদা দিতে হয়। ট্রাফিক বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোগী পরিবহনের বিষয়টি মাথায় রেখে এসব যানবাহনকে তারা ছাড় দিলেও চাঁদার বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানান। এক তথ্যে জানা গেছে, জেলায় বেসরকারিভাবে ২০টি ফিটনেসবিহীন অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করছে। এরমধ্যে খান ক্লিনিকের ৩টি, পপুলার ক্লিনিকের ২টি, আইডিয়াল ক্লিনিকের ১টি, সরকারি হাসপাতালের এম্বুলেন্স চালক ফজলু ড্রাইভারের নামে ২টি, রাজারহাট হাসপাতালের ড্রাইভার আব্দুল কালামের নামে ২টি, সদর থানার এসআই আরমানের নামে ১টি, বিশ্বাস এম্বুলেন্স নামে সান্টু মিয়া ও আলেফ উদ্দিনের নামে ২টি, আকুল এম্বুলেন্স, ভুরুঙ্গামারীতে মাদার্স ক্লিনিক ও মাহবুব ক্লিনিক নামে ২টি, নাগেশ্বরীতে ২টি এবং ফুলবাড়ী উপজেলায় রয়েছে ৩টি। এ নিয়ে ২০টি ফিটনেসবিহীন এম্বুলেন্স রোগীদের কোন প্রকার সেবার ব্যবস্থা না রেখেই পরিবহন করছে। অপর তথ্যে জানা গেছে, সরকারি এ¤ু^লেন্সে প্রতি কিলোমিটার যাতায়াত ভাড়া ১০টাকা এবং পৌরসভার মধ্যে ২শ’ টাকা। সেখানে বেসরকারি এম্বুলেন্স কিলোমিটার প্রতি ভাড়া নিচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। ফিটনেসবিহীন এম্বুলেন্স সয়লাবের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে সেবা গ্রহীতারা। এতে করে একদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলেও প্রাইভেট এম্বুলেন্সের নামে ফিটনেসবিহীন গাড়ি নামিয়ে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মালিক পক্ষ। আর এসব বিষয় দেখেও না দেখার ভান করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কুড়িগ্রাম জেলা এম্বুলেন্স ড্রাইভার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মমিনুল ইসলাম মনু প্রাইভেট এম্বুলেন্সগুলোর সমস্যার কথা স্বীকার করে জানান, জীবিকার প্রয়োজনে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা মাসিক বেতনে আমরা এই কাজ করছি। অনেকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। আবেদন করা হয়েছে। দীর্ঘসূত্রিকার কারণে সমস্যা হচ্ছে। বর্তমানে এম্বুলেন্স ড্রাইভার কল্যাণ সমিতির সদস্য রয়েছে ৪০ জন। গ্রহীতারা জানান, প্রায় প্রতিটি প্রাইভেট এম্বুলেন্সে অক্সিজেন, ফ্যান, রোগী পরিবহন সিট না থাকায় এবং শব্দজনিত কারণে পথে নানান ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগীকে। সরকারি এম্বুলেন্স সংকট থাকায় জীবন বাঁচানোর তাগিদে সমস্যা জর্জরিত এম্বুলেন্স ব্যবহার করছেন সেবা গ্রহীতারা। এ ব্যাপারে ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহসান শামিম জানান, সরকারি হাসপাতালের এম্বুলেন্স দুটি প্রায়ই সময় নষ্ট থাকার কারণে বেসরকারি এম্বুলেন্সের চাহিদা বেড়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেন সরকারি হাসপাতালের সামনে রাখা এম্বুলেন্সগুলোর অধিকাংশই লক্কর-ঝক্কর। নেই অক্সিজেন সাপোর্ট। তিনি দাবি করেন খান ক্লিনিকের নামে ৩টি এম্বুলেন্স থাকলেও একটি’র মালিক আমি। এরকম ক্লিনিকের নাম ব্যবহার করা হলেও মালিক কিন্তু ক্লিনিকগুলো নয়। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অজয় কুমার রায় জানান, প্রাইভেট এম্বুলেন্সগুলোর মান সন্তোষজনক নয়। এগুলোর সেবার মান বাড়াতে কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানো দরকার। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. জয়নাল আবেদীন জিল্লুর জানান, সমস্যা জর্জরিত এসব এম্বুলেন্সগুলোর সেবার মান নিয়ে আমাদের মনেও সংশয় রয়েছে। ড্রাইভারদের দক্ষতা, রোগীদের ভোগান্তি ও এম্বুলেন্সের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। কিন্তু এসব দেকভালের বিষয় আমাদের নয়। এটি বিআরটিএ’র কাজ। আমরা কি করতে পারি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন