বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

তানোরে রোপা আমন আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক

প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মমিনুল ইসলাম মুন, তানোর (রাজশাহী) থেকে
সময়মতো হয়েছে বৃষ্টি। এ সময় কোনোক্রমেই হাতছাড়া করতে রাজি না কৃষক। তাইতো রাজশাহীর তানোরে প্রতিটি জমিতে রোপা আমন চাষে মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। কিন্তু গত দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে অনেকের রোপিত ধান উজানের ঢেউয়ে নষ্ট হয়েছে চারা। যারা রোপণ করেছিলেন রোপা বীজ তাদের কপালে কিছুটা হলেও ভাঁজ পড়েছে। আবার মঙ্গলবার থেকে খাওয়া-দাওয়া ভুলে রাতদিন চলছে রোপা আমন চাষের হিড়িক। চারদিকে একই তালে শুরু হয়েছে জমি তৈরি ও রোপণের কাজ। কদরও বেড়েছে কৃষি শ্রমিকদের। আবার অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছে ব্যাপক হারে কৃষি শ্রমিক সংকট। মাঝে মাঝে প্রচ- রোদ ও বৃষ্টি পড়লেও কোনোকিছুই মানতে নারাজ কৃষকরা। ফলে মহা উৎসবে তানোরজুড়ে চলছে এ অবস্থা। বিভিন্ন কৃষি মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কেউ পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি তৈরি করছেন আবার যার জমি তৈরি হয়েছে তার জমিতে ধান রোপণ চলছে ব্যাপক হারে। এ সুযোগে কদরও বেড়েছে কৃষি শ্রমিকদের। তারাও নাওয়া-খাওয়া ভুলে চুক্তিমূল্যে শুরু করেছেন জমির রোপণের কাজ। বিঘাপ্রতি চুক্তি হচ্ছে কোনো এলাকায় নি¤েœ ৮০০ টাকা আবার কোনো এলাকায় ১০০০ টাকা পর্যন্ত। এভাবে ৭-৮ জন দলবদ্ধ হয়ে সারাদিনে কয়েক বিঘা করে জমি রোপণ করছেন তারা। এতে করে প্রতিজনে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা করে আয় করছেন। গত কয়েক দিন ধরে হালকা-মাঝারি বৃষ্টি পড়েছে ব্যাপক হারে। গত সোমবার ও রোববার জমিতে প্রচুর পানি থাকায় অনেকেই চাষ ও রোপণ করতে পারেননি। এ উপজেলায় জমি রোপণ থেকে শুরু করে কাটা মাড়াই পর্যন্ত ব্যাপক ভূমিকা আদিবাসী নারী-পুরুষ শ্রমিকদের। তারা আদিকাল থেকে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কৃষিতেও তাদের অবদান চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা তাদের নিপুণ হাতে রোপণ করে তুলেছেন জমি। এককথায় বলা যায়, তারা না থাকলে কৃষি ক্ষেত্রে চরম ধস নামতো এ উপজেলায়। তানোর পৌর সদরের কৃষক আব্দুল হালিম ২৫ থেকে ৩০ বিঘা জমিতে রোপণ আমন চাষ করবেন। একদিকে চলছে জমি তৈরি অন্যদিকে আদিবাসী নারী-শ্রমিকরা করছেন জমি রোপণ। আব্দুল হালিম জানান, দীর্ঘদিন থেকেই আদিবাসী নারী শ্রমিক ধান রোপণে অন্যতম ভরসা আমার। তারা নিয়মিতই আমার জমিতে কাজ করে থাকেন। তিনি আরো জানান, শুধু ধানের আবাদ না আলুসহ বিভিন্ন সবজির চাষাবাদ করে থাকেন। এ জন্য বছরের প্রায় সময় এসব শ্রমিক কাজ করে থাকেন আমার জমিতে। পৌর সদরের আরেক কৃষক একরামুল জানান, বিঘাপ্রতি এবার খরচ হচ্ছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। সেচ না লাগায় এমন খরচ। অবশ্য রোপা আমনে সেচ লাগেনা বললেই চলে। অতীতে গরুর লাঙ্গল দিয়ে চাষ হলেও বর্তমানে এর ব্যবহার নেই বললেই চলে। এক বিঘা জমি রোপণের জন্য চাষ দিতে হচ্ছে ৪টি করে। এ জন্যে বিঘাপ্রতি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা খরচ গুনতে হচ্ছে। বিঘাপ্রতি ২০ কেজি ডিএপি, ১০ কেজি পটাশ, ৫ কেজি জীবসাম এবং ৫ জন করে শ্রমিক প্রয়োজন পড়ে। তিনি এবার ৬ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করেছেন করে জানান। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারে রোপা আমনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২১ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত ১৫০০ হেক্টর জমিতে রোপণ হয়েছে বলে জানায় কৃষি অফিস। কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, আশা করছি ১৫-২০ দিনের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে। এ কারণে রোপা আমন উত্তোলন করে নেমে পড়বে মৌসুমী আলু চাষের জন্যে। উপজেলার নিচু এলাকায় যেমন কামারগাঁ ইউপির বাতাসপুর, মালশিরা, মাদারীপুর, ভবানীপুর, হাতিশাইল, হাতিনান্দা, তালন্দ, আজিজপুর, এসব এলাকার নিচু জমিগুলো গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে রোপিত জমির ধানগুলো উপড়ে পড়েছে। এ নিয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম ও কামারগাঁ ইউপির চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন জানান, গত বছর বোরো মৌসুমে কামারগাঁ ইউপি এলাকার কৃষকরা ব্যাপক ভাবে ধরাশয়ী হয়েছিলেন বন্যার কবলে পড়ে। অবশ্য এ বোরো মৌসুমে শুকনো ঝরঝরে ধান ঘরে তুলেছেন কৃষকরা। কিন্তু চলতি রোপা আমনে অনেকের রোপিত জমির ধান উজানের পানির ঢেউ এবং বিলকুমারী বিলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সংলগ্ন জমিগুলো ডুবে গেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন