শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

প্রতিবন্ধীত্বের কাছে হার মানেনি মিঠু সরকার পিতার কোলে চড়ে প্রতিদিন যায় স্কুলে

প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জি এম মুজিবুর রহমান, আশাশুনি (সাতক্ষীরা) থেকে

প্রতিবন্ধী কন্যাকে প্রতিদিন কোলে ও কাঁধে করে স্কুলে আনা-নেওয়া করার মাধ্যমে অসাধ্যকে সাধন করে চলেছেন আদর্শ পিতা পলাশ সরকার। শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী কন্যাকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার অদম্য কামনা বুকে পুষে তিনি জটিল ও কঠিন কর্ম সম্পাদনের কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা। পরিবারের জন্য কষ্টের দরিয়া। বাবা-মায়ের বুকে একরাশ বেদনা জন্ম দিয়ে তারা সময় পার করে থাকে। এটি যেমন অস্বাীকার করার উপায় নেই। তেমনি তাদেরকে সাধ্যমত সহযোগিতা দিয়ে যতটুকু সম্ভব উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারলে তারাও যে বোঝা নয় বরং আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারেÑ এমনটি প্রমাণ করার জন্য পলাশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পলাশ কাদাকাটি ইউনিয়নের যদুয়ারডাঙ্গা গ্রামের অধিবাসী। তার কন্যা শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্ম নেয়। তারা আদর করে নাম রাখেন মিঠু সরকার। অসহায় গরিব পরিবারের সন্তান মিঠু হাঁটতে-চলতে পারে না। দিনমজুর পলাশ সরকার তার কন্যার বয়স বাড়লে কি করবেন এনিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। মিঠু হাঁটাচলা না করতে পারলেও স্কুলে গিয়ে পড়ালেখা করার বায় না ধরেন। পিতাও তার কথায় সায় দিয়ে ঠিক করলেন তাকে স্কুলে পাঠাবেন। বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে স্কুল। বুকে অদম্য আশা নিয়ে তিনি ঠিক করলেন কন্যাকে কোলে করে স্কুলে আনা-নেওয়া করবেন। এবং যে চিন্তা সেই কাজ। তাকে টেংরাখলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হলো। স্কুলে তার পড়ালেখায় শিক্ষক ও অভিভাবকরা সবাই সন্তুষ্ট হলেন। চলতে থাকলো মিঠুর স্কুলে যাতয়াতের সংগ্রাম। পিতা প্রতিদিন জনমজুরিতে বের হওয়ার আগে কন্যাকে স্কুলে পৌঁছে দেন এবং কাজ শেষে আবার স্কুল থেকে কোলে-কাঁধে করে অতিকষ্টে বাড়িতে এনে থাকেন। আস্তে আস্তে সে বড় হচ্ছে এবং বড় ক্লাসে উঠছে। ক্লাসে পরীক্ষার ফলাফলও ভালো, গত বছর সে ৫ম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষায় ১ম স্থান অধিকার করেছিল বলে তার পিতা জানান। বর্তমানে টেংরাখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। পিতা বড় হয়ে যাওয়া কন্যাকে অতিকষ্টে কোলে-কাঁধে করে স্কুলে আনা-নেওয়া করে থাকেন। দুর্গম পথে কোন গাড়িঘোড়া চলে না। তবুও স্কুলে আনা-নেওয়ায় যেন কষ্ট হয় না দিনমজুর পিতার। অর্থ কষ্ট, পরের ক্ষেতে কাজ করে সময় বের করাও কষ্ট। তবুও কন্যাকে স্কুলে আনা-নেওয়া করছেন তিনি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিষ্ণুপদ সরকার জানান, আমরা তাদেরকে বলেছিলাম, এত কষ্ট করে স্কুলে আনার দরকার নেই, প্রয়োজনে স্কুলের আগে পরে আমাদের শিক্ষক দিয়ে তার পড়ানোর ব্যবস্থা করবো। কিন্তু তাতে তারা রাজি নয়, তারা ছাত্রছাত্রীদের সাথে স্বাভাবিকভাবে ক্লাস করে স্বাভাবিক জীবনযাপনে তাকে অভ্যস্ত করাতে চায়। তাই শতকষ্ট করেও অসাধ্য সাধনে জীবনপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সমাজের মানুষকে তার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি তাকে যেভাবে সহযোগিতা করা যায় সেভাবে পাশে দাঁড়ানো উচিৎ বলে আমরা মনে করি। আসুন, আমরা সবাই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন