প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে কোন ধরনের সহায়তা না পেয়ে রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীরা। অবসায়ন ঘোষণার পর অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে টাকা হারিয়ে আমানতকারীরা দিশেহারা হয়ে ঘুরছেন। এ অবস্থায় জমানো ৫০ শতাংশ অর্থ (বিশেষ বিবেচনায়) অথবা বিশেষ প্যাকেজ হিসেবে (আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে) ফেরত চান আমানতকারীরা। একই সঙ্গে পিপলস লিজিংকে পুনঃর্গঠন করে সম্পূর্ণ অর্থ আমানতকারীদের মাঝে ফেরত দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। গত ১০ মে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বরাবর এ সংক্রান্ত আবেদন জানিয়েছেন পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (পিএলএফএস) কোম্পানি ব্যক্তি ও ক্ষুদ্র আমানতকারী কাউন্সিল।
জানা গেছে, জমানো টাকা ফেরত না পেয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন অবসায়ন প্রক্রিয়ায় থাকা পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের আমানতকারীরা। সব প্রক্রিয়া শেষে কবে নাগাদ টাকা ফেরত দেয়া হবে বা কোন প্রক্রিয়ায় দেয়া হবে, তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় আছেন তারা। পিপলস লিজিং অবসায়ন না করে ব্যবসায়ীদের একটি কনসোর্টিয়ামের কাছে বিক্রির আলোচনা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পিপলস লিজিংয়ের নামে ঋণ করে বা সরকারের বিশেষ অনুদানের মাধ্যমে ব্যক্তি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। পরবর্তীতে পিপলস লিজিংয়ে ফেরত আসা অর্থ থেকে যা সমন্বয় করা যেতে পারে। এমন প্রস্তাবও স¤প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে দিয়েছে পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীদের কাউন্সিল ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, আমানতকারীরা টাকা চাচ্ছেন। আদালতের নির্দেশনার বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের এখন আর কিছু করার নেই। আবার এমনও নয় যে, কোথাও টাকা জমা আছে এবং সেখান থেকে তুলে আমানতকারীদের দেয়া হবে। পিপলসের অ্যাকাউন্টে বর্তমানে মাত্র ১৫ কোটি টাকার মতো জমা রয়েছে। জমার পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা হলেও হয়তো আদালতের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্কিমের আওতায় ক্ষুদ্র আমানতকারীদের কিছু টাকা ফেরত দেয়ার প্রস্তাব দেওয়া যেত। আমানতকারীর জমানো টাকা ফেরত দিতে না পারায় পিপলস লিজিং বন্ধের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের ১৪ জুলাই প্রতিষ্ঠানটি অবসায়ন চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আবেদন গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। পিপলস লিজিংয়ে আমানতকারীদের জমা রয়েছে দুই হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ের আমানতকারীদের রয়েছে সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীদের কাউন্সিলের সমন্বয়কারী সামিয়া বিনতে মাহবুব বলেন, ঋণখেলাপিদের নানাভাবে সুবিধা দিচ্ছে সরকার। আর আমরা নিজেদের জমানো টাকা ফেরত না পেয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছি। এখন পিপলস লিজিংয়ের নামে ঋণ বা সরকারের বিশেষ অনুদানের মাধ্যমে আমাদের টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করছি। তিনি বলেন, আমাদের জমানো ৫০ শতাংশ অর্থ (বিশেষ বিবেচনায়) অথবা বিশেষ প্যাকেজ হিসেবে (আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে) ফেরত দিতে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বরাবর আবেদন জানিয়েছে। একই সঙ্গে পিপলস লিজিংকে পুনঃর্গঠন করে সম্পূর্ণ অর্থ আমানতকারীদের মাঝে ফেরত দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
আদালতের আদেশে গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে নিরীক্ষা করে বহিঃনিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান গত ৩১ মার্চের মধ্যে আদালত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আদালত এ প্রতিবেদন পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও নির্দিষ্টভাবে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দায়ের পরিমাণ, সময়কালসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এরপর প্রত্যেককে আদালতে উপস্থিত হয়ে টাকা ফেরত দেয়ার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব চাওয়া হবে বলে জানা গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন