সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

‘মুহতামিমের দায়িত্ব আমি কাউকে দেইনি’

রাতে ভিডিও বার্তায় আল্লামা শাহ আহমদ শফী

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০২০, ১২:৩৯ পিএম | আপডেট : ১:০৮ পিএম, ১৭ মে, ২০২০

‘মুহতামিমের (মহাপরিচালক) দায়িত্ব আমি কাউকে দেইনি। কাউকে নায়েবে মুহতামিম করিনি। মাদরাসার জিম্মাদারিতে আমি এখনও আছি। যা শুনছেন তার সবকিছু গুজব। গুজবে কান দেবেন না, আপনারা শান্ত হন’।
শনিবার রাতে হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক হেফাজতে ইসলামের আমির শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর এমন ভিডিও বার্তায় মাদরাসা এলাকায় জড়ো হওয়া শতাধিক আলেম, ছাত্র-শিক্ষক ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্থি ফিরে আসে। অবসান ঘটে উত্তেজনার।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যবাহী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার বর্তমান নায়েবে মুহতামিম আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরীকে সরিয়ে অপর একজনকে নায়েবে মুহতামিমের পদ দেয়া হবে এমন খবর প্রচার হয়। জুনাইদ বাবুনগরী হেফাজতের মহাসচিবও। এমন খবরে শুরু হয় উদ্বেগ উৎকন্ঠা।
১৮৯৬ সালে প্রতিষ্টিত দেশে হাজার হাজার আলেম তৈরীর এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আগলে রেখেছেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। ১০৩ বছর বয়সী এ আলেমেদ্বীন দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ।
মাহে রমজানের আগে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। চট্টগ্রামের সিএইচসিআর হাসপাতালে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে এয়ার অ্যাম্বেলেন্স নেওয়া হয় ঢাকায়। সেখানে কিছুটা সুস্থ হলে তাকে হাটহাজারী মাদরাসায় ফিরিয়ে আনা হয়।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়ায় তার বাড়ি হলেও তিনি মাদরাসায় আবাসিক ভবনে বসবাস করে আসছেন। মাদরাসাকে ঘিরেই তার জীবন। ছাত্র শিক্ষকসহ দেশের আলেম উলামার কাছে বটবৃক্ষ হিসাবে পরিচিত এ প্রবীণ আলেম এখনও মহাপরিচালকের দায়িত্বে আছেন।
তার অবর্তমানে মাদরাসা এবং অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বে কারা আসবেন তা নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠা সবার মধ্যে।
মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের পাশাপাশি সারা দেশের কওমি ধারার আলেম এবং হাটহাজারীর সর্বস্তরের তৌহিদ জনতাও এবিষয়ে চিন্তিত।
এমন পরিস্থিতি কোন একটি পক্ষ মাদরাসার মহাপরিচালকের দায়িত্বে আসতে তৎপর হয়ে উঠে বলেও অভিযোগ আছে। আর এমন অভিযোগের তীর আল্লামা শফীর আশপাশে থাকা স্বজনসহ কয়েকজনের দিকে। যদিও হুজুরের ব্যাপারে সবাই আস্থাশীল।

এদিকে হঠাৎ করে প্রচার করা হয় তিনি কাউকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এমন খবরে শনিবার সকাল থেকে মাদরাসার অনুসারি স্থানীয় দুই পক্ষের শত শত মুসল্লি মাদরাসায় জড়ো হলে দিনভর উত্তেজনা বিরাজ করে।
দেশের অন্যতম প্রবীণ এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অবর্তমানে জামেয়ার সিনিয়র শিক্ষক আহমদ দিদার কাসেমীকে ভারপ্রাপ্ত মহপরিচালক ও মাওলানা আনাছ মাদানিকে সহকারি মহাপরিচালক করা হচ্ছে বলে স্যোশাল মিডিয়ায় প্রচার করা হয়।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাটহাজারীর স্থানীয় বাসিন্দা আলেমগণ মাদরাসার সামনে অবস্থান নিতে থাকেন।
ডবপুল মানুষের সমাগম ঘটলে মাদরাসার কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষকের একটি প্রতিনিধি দল আল্লামা শাহ আহমদ শফীর কামরায় গিয়ে পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
জোহরের নামাজের পর মাদরাসার মসজিদে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে হাটহাজারী ওলামা পরিষদের নেতারা বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, মাদরাসার শুরার সিদ্ধান্ত ছাড়া কাউকে পরিচালক ও সহকারী পরিচালক মানবেনা হাটহাজারীর জনগণ।
হুজুরের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন মহলকে খুশি করতে দেওবন্দীর ১২৫ বছরের ঐতিহ্য নসাৎ করতে দেয়া হবে না বলেও তারা হুঁশিয়ারী দেন।
আমরা সর্বোচ্চ সংগঠন ওলামা পরিষদের পক্ষ থেকে যে কোন বিভাজন নসাৎ করে দেব, কাউকে ছাড়ব না। প্রয়োজন হলে জনগণকে নিয়ে মাঠে নেমে প্রতিরোধ করব।
এমন কঠোর অবস্থানের খবর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর কাছে পের্ঁৗছানো হলে তিনি অসুস্থ অবস্থায় ২ মিনিট ৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বার্তা দেন।
নাকে রাইস টিউব পরা অবস্থায় তিনি এ বার্তা দেন। জনতার উদ্দেশে তা প্রচার করা হয়। এতে তিনি বলেন, হাটহাজারী মাদরাসায় মুহতামিম (মহাপরিচালকের) দায়িত্ব পেয়ে আমি কি না করেছি, এমন কিছু কথা, কিছু অপবাদ দিচ্ছে, আমার মুহতামিমের সময়ের মধ্যে কি লাভ হল।
সবাই জানেন, পুরো দুনিয়া জানে। সারা জিন্দেগী মাদরাসার জন্য কুরবান দিয়েছি। মাদরাসার জিম্মাদারিতে (দায়িত্বে) আমি এখনো আছি।
আমার অবর্তমানে কে দায়িত্ব নেবে সেটা মাদরাসার শুরা বা পরিচালনা কমিটি করবে। আমি কাউকে জিম্মাদারি দেয়নি। কাউকে নায়েবে মুহতামিম করিনি, কাউকে ভারপ্রাপ্ত মুহতামিমের দায়িত্বও দেয়নি।
যেগুলো শুনছেন সবগুলো গুজব। আমি সবাইকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন, মাদরাসার জন্য দোয়া করবেন।
এবিষয়ে হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী ইনকিলাবকে বলেন, হুজর এখনও দায়িত্বে আছেন। তিনি যা বলেন সেটাই চূড়ান্ত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন