বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’

সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৭ কিলোমিটার : সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সঙ্কেত : পশ্চিমবঙ্গ হয়ে সুন্দরবন-খুলনা-দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানতে পারে বুধবার

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০২০, ১২:০১ এএম

বঙ্গোপসাগরে গর্জে উঠেছে ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’। এটি আরও জোরদার হচ্ছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত কার্যত স্থির অবস্থায় থেকে শক্তি সঞ্চয় করে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে ‘আমফান’। ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৭ কিলোমিটার। আবার গতকাল সন্ধ্যায় ‘আমফান’ স্থির অবস্থা পরিবর্তন করে কিছুটা গতিশীল এবং সামান্য উত্তর দিকে অগ্রসর হয়। 

এটি শুরু থেকেই ক্রমশ ঘনীভূত ও জোরালো হচ্ছিল। গতকাল সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়ের বিশেষ আবহাওয়া বুলেটিনে জানা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ কিছুটা উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১২ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৬ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
আন্দামান সাগরে ৫ দিন আগে লঘুচাপ থেকে ধাপে ধাপে ঘনীভূত হয়ে গত শনিবার মাঝ রাত নাগাদ গভীর নিম্নচাপটি রূপ নেয় ঘূর্ণিঝড়ে। এবারের ঘূর্ণিঝড়ের ‘আমফান’ নামটি দিয়েছে থাইল্যান্ড। থাই ‘আমফান’ শব্দের অর্থ দৃঢ়তা, স্বাধীন চিত্ত, শক্তি ইত্যাদি। বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের ফোরাম দেশসমূহের প্যানেল ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে আগেভাগে বিভিন্ন সদস্যদেশে প্রচলিত কিছু দেয়া নাম থেকে। যার উদ্দেশ্য একটি ঘূর্ণিঝড়কে দুর্যোগের হিসাবের খাতায় চিরকাল ধরে রাখা। দুর্যোগের নামানুসারে ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা জমা রাখা ও পরস্পর বিনিময়।
সর্বশেষ গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’র অবস্থান ছিল বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরসমূহ থেকে বেশ দূরে। ১২শ’ থেকে ১৩শ’ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখানো হচ্ছে। সঙ্কেত পেয়ে হাজারো মাছশিকারি ট্রলার নৌযান চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন ফিশারিঘাট ও পোতাশ্রয়ে ফিরে এসেছে। তবে শত শত ট্রলার সমুদ্র থেকে ফিরেনি এখনও।
সঙ্কেত যদি বেড়ে যায় তাহলে সমুদ্রবন্দর ও নৌ-পরিবহন কার্যক্রম ক্রমেই সঙ্কুচিত এবং স্থগিত বা আপাতত বন্ধ রাখা হবে। করোনাকালে ঘূর্ণিঝড় আরও কী বিপদাপদ দুর্ভোগ বয়ে আনে এ নিয়ে উপক‚লবাসীর মাঝে বাড়ছে দুশ্চিন্তা। বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণরোধে লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে হলে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া, যাওয়া-আসার প্রক্রিয়াও কঠিন হয়ে পড়বে।
‘আমফান’র গতিপথ-
ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’র গতিমুখ এখন পর্যন্ত দক্ষিণ ভারতের উপক‚ল-ওড়িশা হয়ে পশ্চিমবঙ্গের দিকে। এরপরই ধেয়ে আসতে পারে বাংলাদেশের খুলনা-সাতক্ষীরা ও আংশিক দক্ষিণাঞ্চলের উপক‚ল বরাবর। পশ্চিমবঙ্গ হয়ে সুন্দরবন-খুলনা-দক্ষিণ উপক‚লে আঘাত হানতে পারে ‘আমফান’ আগামী বুধবার নাগাদ। এর আগে-পরে প্রবল বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে ভারত ও বাংলাদেশে তার গতিপথে।
ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ আজ ও আগামীকাল মঙ্গলবার নাগাদ সমুদ্রে আরও প্রচন্ড শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। তখন ঝড়ের গতিবেগ উঠতে পারে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৭০ থেকে ২শ’ কিলোমিটার পর্যন্ত। আবার উপক‚লে আছড়ে পড়ার সময় অতিবৃষ্টি, সময়ক্ষেপণ অথবা প্রকৃতিগতভাবে শক্তি হারিয়ে দুর্বল হয়েও যেতে পারে। বৈশ্বিক আবহাওয়া সংস্থাগুলো, ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ ও বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদগণ এ ধরনের পূর্বাভাস দিচ্ছেন।
‘বুলবুল’র মতোও হতে পারে-
আবহাওয়াবিদগণ আভাস দেন, এরআগে সর্বশেষ আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র সঙ্গে বর্তমান ‘আমফান’র গতিপথ ও আঘাতের প্রায়ই মিল থাকতে পারে। ‘বুলবুল’ ভারত হয়ে বাংলাদেশের খুলনা-সাতক্ষীরার ওপর দিয়ে দক্ষিণ উপক‚লের আংশিক এলাকাগুলোতে মাঝারি ধরনের আঘাত হানে গত বছর ৯ ও ১০ নভেম্বর। তখন দশ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখানো হয়।
ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ সমুদ্রে ঘুরপাক খাবে ৩ থেকে ৪ দিন। এরফলে এটি কখন ধেয়ে এসে কোথায় আঘাত করবে, সুনির্দিষ্ট কোন দিকে যাবে তা নির্ভর করছে আরও অনেক সময় ধরেই ঝড়টি সমুদ্রে গড়ানো বা ঘূর্ণনের ওপর। তাছাড়া অনেক সময়েই ঘূর্ণিঝড় গতিপথে তার মতিগতি, শক্তি, সম্ভাব্য দিক পরিবর্তন করতে পারে। ‘আমফান’ এক পর্যায়ে সমুদ্রে ভয়াল শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। তবে উপক‚লে আছড়ে পড়ার সময়কালে শক্তি কমবেশি হারিয়ে ফেলতেও পারে।
উপকূলবাসীর বিপদ-
করোনাকালে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের বাড়তি বিপদ মাথায় নিয়ে উপকূলবাসীর মাঝে বিরাজ করছে ভয়-শঙ্কা। উপকূলের অনেক জেলায় গুমোট আবহাওয়া যেন আসন্ন দুর্যোগের জানান দিচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের সর্বশেষ অবস্থান ও গতিপ্রকৃতি-
গতকাল সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’র সর্বশেষ অবস্থান ও গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে বিশেষ বুলেটিনে আবহাওয়াবিদ মো. আফতাব উদ্দিন জানান, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় আমফান সামান্য উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৪০ কি.মি. দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৩০ কি.মি. দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২১০ কি.মি. দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
আমফান আরও ঘনীভ‚ত হয়ে উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে চার নম্বর হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপক‚লের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। যাতে স্বল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে। সেই সাথে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
গতকাল তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী ও যশোরে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বোচ্চ। ঢাকায় ছিল সর্বোচ্চ ৩৬ এবং সর্বনিম্ন ২৬.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। দুয়েক জায়গায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন