করোনায় চিংড়ি রপ্তানিতে ধস নেমেছে। মাছের দাম প্রতি কুইন্টালে ২৫/৩০ হাজার টাকা কম হওয়ায় দিশেহারা চাষী। আর এখন চিংড়ি পোনার তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকেই সঙ্কট বাড়তে থাকে। ফলে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের চিংড়ি চাষীরা তাদের চাহিদার অর্ধেকও পোনা ঘেরে অবমুক্ত করতে পারেনি। যে কারণে হোয়াইট গোল্ডখ্যাত চিংড়ি খাতে আগামী বছর বড় ধরণের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে চাষী সাগরে মা চিংড়ি আহরণ করতে পারছে না। ২০ মে থেকে ৬৫ দিন অর্থাৎ ২২ জুলাই পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। ফলে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের হ্যাচারী মালিক ও ঘের মালিকরা পোনা সঙ্কটে বিপাকে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বছরও চিংড়ি সেক্টরে লোকসানের হিসাব নিকাশ হলে সম্ভাবনাময় এ খাত দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
সূত্রমতে, বৃহত্তর খুলনায় প্রায় ৮শ’ কোটি বাগদা ও ৬ কোটি গলদা চিংড়ি রেণুর চাহিদা রয়েছে। খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার চিংড়ি ঘেরগুলোতে এবার যথা সময়ে পর্যাপ্ত পরিমান বাগদা ও গলদা রেণু ছাড়া সম্ভব হয়নি।
এ অঞ্চলের প্রায় অর্ধশত হ্যাচারীর অধিকাংশই বন্ধ রয়েছে। চাষীদের তাই প্রাকৃতিক পোণার ওপর নির্ভর করতে হবে। কিন্তু সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় আগামী ৬৫ দিন সাগরে মা মাছ ধরাসহ পোনা ধরা যাচ্ছে না। অন্যান্য বারের মত সাতক্ষীরা অঞ্চলের ৮টি অবৈধ সীমান্ত ঘাট দিয়ে এখনও পোনা ঢোকেনি।
এ অঞ্চলের দেড় লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে প্রায় দুই লক্ষাধিক বাগদা ও গলদা চিংড়ি ঘের রয়েছে। এসব ঘেরে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে প্রায় ৫০ হাজার মে. টন বাগদা ও প্রায় ৪০ হাজার মে: টন গলদা উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতিতে সিংহভাগ উৎপাদন না হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। যে কারণে সাদা সোনা থেকে সরকার হাজার হাজার কোটি বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
উপকূলীয় অঞ্চল তথা খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা থেকে সবচেয়ে বেশি চিংড়ি উৎপাদন হয়ে থাকে। যা দেশের মোট রফতানির সিংহভাগ। আর দেশের রফতানি পণ্যের মধ্যে চিংড়ি অন্যতম। আশি বা নব্বই দশকে এ খাতে ব্যাপক লাভ হলেও বর্তমানে নানা প্রতিকূলতায় শিল্পটি হুমকির সম্মুখীন। ভাইরাসসহ নানা কৃত্রিম সঙ্কটের পাশাপাশি এবার নতুন উপসর্গ পোনা সঙ্কট। এছাড়া চিংড়ি উৎপাদক সমিতির নেতারা বলছেন, সাগরেও মা চিংড়ির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ব্যাংক ঋণের অপ্রতুলতা, সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অভাবসহ নানা কারণে খুলনাঞ্চলের অনেক পোনা উৎপাদনকারি হ্যাচারী বন্ধ হয়ে গেছে।
খুলনা মৎস্য ব্যবসায়ী শাহ ইফতেখার আলম বাবু ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে চিংড়ি উৎপাদনের উপযোগী সময় অতিবাহিত হচ্ছে, এ সময় চিংড়ি দ্রুত বেড়ে ওঠে। চিংড়ি পোনা ছাড়ার উপযুক্ত সময় চলে যাচ্ছে। অথচ কোথাও পোনা পাওয়া যাচ্ছে না। যা কখনই এমন সঙ্কট হয়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন