সিডর, আইলা কিংবা বুলবুলের মত একের পর এক ঝড়-ঝাপটা মায়ের মত আগলে রেখে উপকূলবাসীকে রক্ষা করে চলেছে সুন্দরবন। ঘুর্ণিঝড় আমফান মোকাবেলা আজও রক্ষা কবজ হয়ে দাড়িয়ে আছে সেই সুন্দরবন। মায়ের মত নি:স্বার্থভাবে বাঁচাতে চায় উপকূলবাসীকে।
এদিকে ঘুর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে খুলনায় গতকাল দুপুর থেকে মাঝারি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে।
এদিকে আবহাওয়াবিদরা জানান, ঘুর্ণিঝড় আমফান সিডরের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এর কেন্দ্র বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ২২০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অপরদিকে, ২০০৭ সালে বাংলাদেশে আঘাত হেনেছিল ঘুর্ণিঝড় সিডর, তাতে তছনছ হয়েছিল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল, প্রাণ হারিয়েছিল দুই হাজারের বেশি মানুষ। বঙ্গোপসাগরের জানা ইতিহাসে দ্বিতীয় সুপার সাইক্লোন হিসেবে ধরা হচ্ছে আমফানকে।
কোভিড-১৯ মহামারিকালে এই ঘুর্ণিঝড়টি উপকূলের হাজারের কম দূরত্বে আসার পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক নানা ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে। আর মংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মংলা সুন্দরবন ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার ঘুর্ণিঝড় আশ্রায় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপক‚লবর্তী এলাকায় সকল সর্তক থাকার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।
এদিকে ঘুর্ণিঝড় আমফানের খবরে খুলনার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা সাতক্ষীরার শ্যামনগর আশাশুনি, দেবহাটাসহ বাগেরহাটের মংলা, রামপাল, শরনখোলার অধিবাসীরা আতংকিত হয়ে পড়েছে।
সূত্রমতে, এক যুগ আগের সিডরের ঝড় গিয়েছিল সুন্দরবনের উপর দিয়ে, যা রক্ষা করেছিল উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা। বুলবুলের ক্ষেত্রের ঢাল হয়ে ছিল সুন্দরবন। ঠিক এবারও ঘুর্ণিঝড় আমফান থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষায় বুক উচু করে ঢাল হয়ে দাড়িয়ে আছে সুন্দরবন।
জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার আমফানের সম্ভাব্য যে গতিপথ দেখিয়েছে, তাতে উপকূল অতিক্রম করার সময় এ ঝড়ের কেন্দ্র বা চোখ থাকতে পারে সুন্দরবন।
বন বিভাগ জানায়, এবারের সুপার সাইক্লোনের প্রভাব সুন্দরবনেও পড়বে। আমরা ইতোমধ্যে সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট এলাকাসহ সবাইকে নিরাপদে অবস্থান নেওয়ার জন্যে সতর্ক করে দিয়েছে। মৎসজীবী ও বনজীবীদেরও নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্যে বলা হয়েছে।
ঘুর্ণিঝড়ে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ন থাকে বন্যপ্রানীরা। মানুষের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গেলেও বনের ক্ষয়ক্ষতি ঝড় থেকে এড়ানো সম্ভব হয়ে ওঠে না বলে জানায় বন বিভাগ। কিন্তু ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বরাবরের মতো নতুন চর ও উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক বনায়ন কর্মসূচি নেয়া হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন