৬ ঘন্টা ধরে তান্ডব চালিয়ে উপকুলীয়াঞ্চলকে অনেকাংশে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬ টায় শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ১১২ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানে খুলনা সাতক্ষীরা বাগেরহাট সুন্দরবনসহ উপকুলীয়াঞ্চলে। প্রায় ৬ ঘন্টা তান্ডব চালিয়ে রাত ১২ টার দিকে উপকুলীয়াঞ্চল অতিক্রম করেছে আম্পান।
প্রবল বেগের এই ঝড়ে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটসহ উপকূলীয় এলাকা ল-ভ- করে দেয়। বিধ্বস্ত হয় ঘরবাড়ি, ভেঙে পড়ে গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি। উপকূলের ১৯ জেলায় অন্তত ৫১ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন আছে।
আম্পান সবচেয়ে বেশি তা-ব চালিয়েছে সাতক্ষীরায়। উপকূলীয় এ জেলায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঝড়ের গতিবেগ ছিল ১৪৮ কিলোমিটার।
সেখানকার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, এক ঘণ্টার বেশি সময় তীব্রগতিতে তা-ব চলেছে সাতক্ষীরায়। পরে গতিবেগ কমে ১০০ কিলোমিটারে নেমে আসে।
আমফানের প্রভাবে গতকাল বুধবার রাতে সাতক্ষীরা, খুলনাসহ পশ্চিম উপকূলে ৫ থেকে ৭ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস বয়ে যায়। রাত ১০টার দিকে জোয়ার শুরু হলে ১৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু জলোচ্ছ্বাস হয়। এতে প্লাবিত হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা।
খুলনা সাতক্ষীরা বাগেরহাট সহ উপকুলের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে পড়েছে, বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে অনেক বাঁধ। গাছপালা উপড়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে এক ঘণ্টার মধ্যেই উপকূলীয় এলাকার ৫১ লাখের মতো গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল বিকেল ৫টায় সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলে প্রবেশ করে আম্পান। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ব্যাসের এই ঝড় পুরোপুরি সুন্দরবনের স্থলভাগে উঠে আসে সন্ধ্যা ৭টায়। এ সময় চারপাশে প্রবল বেগে ঝড় বয়ে যায়। রাত ৮টায় এটি সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চল অতিক্রম করে।
আমাদের কয়রা উপজেলা সংবাদদাতা শফিকুল ইসলাম জানান, কয়রা ও দাকোপ উপজেলার অসংখ্য স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। ভেঙে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালা। মূল ঝড় আসার আগে থেকেই দুপুর ১২টার পর দাকোপ উপজেলার ৩১ নম্বর পোল্ডারের খলিশা, পানখালী, কাঁকড়াবুনিয়া, কামিনিবাসিয়া, বটবুনিয়া গ্রামের বেড়িবাঁধ উপচে গ্রামের ভেতরে পানি প্রবেশ শুরু করে।
তিনি আরও জানান, আম্পানের তান্ডবে খুলনার কয়রার ৮ টি পয়েন্ট নদীর বাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়রা সদর, উত্তর বেদকাশি, দক্ষিণ বেদকাশি, মহারাজপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের আংটিহারা এলাকার নিরাঞ্জন ও মাজিদ গাজীর বাড়ির সামনে, ছোট আংটিহারা এলাকার বাকের গাজীর বাড়ির সামনে, গোলখালী গ্রামের তসলিম মোল্লার বাড়ির সামনে ও চরামুখা খেয়াঘাট এলাকায় বাঁধ ভেঙেছে।
খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দ্দার বলেন, খুলনায় ২ লাখ ৭ হাজার মানুষ ৮১৪টি সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নেন। ঘূর্ণিঝড়ে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। অনেক ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙেছে বেড়িবাঁধ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বিকেল নাগাদ ক্ষয়ক্ষতি তথ্য জানালে সঠিক পরিসংখ্যান জানা যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন