শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ট্রাম্পের শিকার চীন ও জাতিসংঘ ফল ভোগ করবে আমেরিকানরা

ফরেন পলিসি : | প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০২০, ৮:৫৮ পিএম

ছবি: ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে রোজ গার্ডেনে হোয়াইট হাউস করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের দৈনিক ব্রিফিংয়ের সময় রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। -সংগৃহীত


গেল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ তথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার-ডবিøউএইচও’র সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। এটি উভয়ভাবেই অনৈতিক এবং খুব সম্ভবত অবৈধ সিদ্ধান্ত এবং এটি মার্কিন প্রেসিডেন্টের নেতৃত্ব শৈলীর সর্বাধিক প্রশ্নবোধক দিকগুলিও তুলে ধরেছে: তার ভুলের জন্য অন্যকে দোষারোপ করার প্রবণতা, অন্য নেতাদের সাথে নম্রভাবে একসাথে বিশ্ব মঞ্চ ভাগ করে নিতে অস্বীকৃতি, অন্ধ স্বার্থের প্রবৃত্তি এবং বিজ্ঞানকে চ‚ড়ান্ত অবমাননা।

প্রগল্ভ বাচ্চার মতো ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন যে, করোনাভাইরাসে ১০ হাজারেরো বেশি আমেরিকান মারা যাওয়ার দোষটি হ’ল চীন বা ডবিøউএইচও’র। তিনি বলেছেন, ‘আমরা গুরুতরভাবে তদন্ত করছি। আমরা চীন নিয়ে খুশি নই।’ শীর্ষস্থানীয় রিপাবলিকান নেতারা জানিয়েছেন যে, দলীয় ভোটের ধারাবাহিকতা প্রকাশ করে যে, চীনকে সমালোচনা করা ট্রাম্প দলীয় সমর্থকদের মধ্যে প্রচুর জনপ্রিয় এবং দেশটির ঘাড়ে দোষ চাপানোর কৌশলটি নভেম্বর মাসে প্রেসিডেন্টকে পুনর্র্নিবাচিত করতে সহায়তা করতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের কোভিড-১৯ সঙ্কট সামলানোর বিষয়ে তাকে অপছন্দ করা অনেক আমেরিকানদের চুপ করিয়ে দেবে।
চীনের পাশাপাশি, ডবিøউএইচও প্রকাশ্যভাবে চীনের দাবির বিরোধিতা না করায় এবং ৩০ জানুয়ারির আগে দু’বার পালিক হেল্থ এমারজেন্সি অফ ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন-পিএইচইইসি ঘোষণা করতে অস্বীকৃতি জানানোতে, ট্রাম্প প্রশাসন ডবিøউএইচওকে চীনের সাথে জড়িত থাকার, সংক্ষেপে বলতে গেলে প্রতিষ্ঠানটিকে চীনের যড়যন্ত্র সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করেন। যদিও সাক্ষ্যপ্রমাণ ও সিদ্ধান্ত ব্যতীত এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট বিধিমালার বাইরে জাতিসংঘ কোনো সদস্য রাষ্ট্রের বিরোধিতা করতে পারে না।
গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হোয়াইট হাউসকে চীনের করোনা প্রাদুর্ভাবের বিশদ, জরুরি পর্যালোচনা দিয়েছিল এবং ডবিøউএইচওতে নিযুক্ত মার্কিন কর্মকর্তারা জেনেভা থেকে নিরন্তর বিশদ প্রতিবেদন সরবরাহ করেছিলেন। এসব যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্তে¡ও ট্রাম্প চীন ও ডবিøউএইচও’র বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযোগ করে চলেছেন।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে জাতিসংঘ থেকে সরিয়ে নেকার ঘোষণা দেবার পর পৃথিবীর বাকি অংশ দ্রæত বাণিজ্য ও গবেষণা জোট গঠন করতে শুরু করেছে, কোভিড-১৯’র চিকিৎসা এবং ভ্যাকসিনগুলি সন্ধানের জন্য একসাথে কাজ করার জন্য একজোট হচ্ছে, ইতিমধ্যে ডবিøউএইচও’র অভ্যন্তরে কয়েকটি সম্মিলিত চুক্তিও করা হয়ে গেছে, অন্যান্যরাও আঞ্চলিকভাবে চুক্তি করে নিয়েছে। এবং ট্রাম্প প্রশাসন কারোর সাথেই যোগ দেয়নি।
এতে করে, যেমন কোনো মার্কিন সংস্থার পক্ষে প্রথম কার্যকর কোনো ভ্যাকসিন উদ্ভাবন এবং বিকাশ ঘটানো সম্ভব, ঠিক সেভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের আগেই চীন, ইউরোপ, এশিয়া বা সম্ভবত লাতিন আমেরিকা থেকেও একই রকম উদ্ভাবন ঘটতে পারে। এবং সেক্ষেত্রে, আমেরিকান জনগণ ট্রাম্পের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জীবন রক্ষাকারী সরবরাহ পাওয়ার অগ্রাধিকারের তালিকার একেবারে নীচের দিকে নিজেদের আবিষ্কার করতে পারে। কারণ ট্রাম্প সমস্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং সহযোগিতা থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
এর আগে, ট্রাম্প বার বার বলে এসেছেন যে, করোনা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু যখন দেখা গেল যে, করোনা একটি মহামারী, তখন ট্রাম্প ভ্রমণ বিধিনিষেধ জারি করেন এবং তখনো আমেরিকানদের আশ্বাস দেন যে, উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নেই। পরে যেহেতু এটা স্পষ্ট হয়ে উঠল যে, আমেরিকানদের ভেতর করোনাভাইরাসের জাতীয় বিস্তার এবং প্রবল বিশৃঙ্খল প্রশাসনের দায়িত্বহীন প্রতিক্রিয়া আমেরিকানদের চিন্তিত করে তোলার জন্য সন্দেহাতীতভাবে সবচেয়ে বড় বিষয়, ট্রাম্প চীনের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে মার্কিন জনগণের দৃষ্টি মূল বিষয়টি থেকে ঘুরিয়ে দিতে সচেষ্ট হন।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন দোষারোপের খেলাটি তিক্ত হতে বেশি সময় লাগেনি। তারপর ট্রাম্প ডবিøউএইচওকেও তার নির্বাচনী বলির পাঁঠার তালিকায় যুক্ত করে নিয়েছেন। ট্রাম্পের এই ঘৃণ্য আচরণের আঘাতটি এখন বিশ^ব্যাপী কোভিড-১৯ যুদ্ধের ময়দানে এবং প্রতিটি দরিদ্র সম্প্রদায়ের মধ্যে অনুভ‚ত হবে যারা জাতিসংঘের জরুরি খাদ্য, শিশু রোগ প্রতিরোধ, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং দিক নির্দেশনার জন্য মার্কিন সংস্থাগুলির উপর নির্ভর করে থাকে। নিজের ব্যর্থতার জন্য অন্যদের শাস্তি দেওয়ার ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত তার শাসনকালীন এই সময়ে অবাক হওয়ার মতো কিছুই নয়। তবে এখনো নৈতিকতার দিক থেকেও সম্পূর্ণ নিন্দনীয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
মোঃ আক্কাস আলী মোল্লা ৩১ মে, ২০২০, ১০:২৩ পিএম says : 0
ট্রাম্প একটা মাথামোটা শয়তান।ও মনে করে আমেরিকা ছাড়া দুনিয়া চলে না।একটা ভালো জাতীকে ধংস করে দিল।
Total Reply(0)
মোঃ আক্কাস আলী মোল্লা ৩১ মে, ২০২০, ১০:২৩ পিএম says : 0
ট্রাম্প একটা মাথামোটা শয়তান।ও মনে করে আমেরিকা ছাড়া দুনিয়া চলে না।একটা ভালো জাতীকে ধংস করে দিল।
Total Reply(0)
habib ১ জুন, ২০২০, ৯:৩৪ এএম says : 0
America Israel and India is most hypocrite country in the world. that why many peoples suffer world wide
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন