মোবায়েদুর রহমান
গত ৩০ জুন এবং ১ জুলাই গুলশান ম্যাসাকারের পর ২৫ দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। এই ২৫ দিন ধরেই এ ভয়াবহ রক্তপাতের বিভিন্ন দিক নিয়ে রেডিও, টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকায় তুমুল আলোচনা চলছে। এমন তুমুল আলোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ এ রকম ঘটনা আমরা তো দূরের কথা, আমাদের বাপ-দাদারাও শোনেননি। ভারত বিভাগ তথা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে আমরা শুনেছিলাম জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকা- কিন্তু তার প্রেক্ষিত সম্পূর্ণ আলাদা। সেটার সাথে গুলশান ম্যাসাকারের তুলনা করা যাবে না। আমরা আরেকটি ম্যাসাকারের কথা শুনেছি। সেটি হলো বিডিআর ম্যাসাকার। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার মাত্র এক মাস ২০ দিনের মাথায় ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর ক্যাম্পের মধ্যে বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিলসহ ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়। সেটিরও পটভূমি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেটির সাথে গুলশান ম্যাসাকারের তুলনা করা যাবে না। জালিয়ানওয়ালাবাগ এবং বিডিআর ম্যাসাকারের একটি কার্যকর সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় কিন্তু গুলশান ম্যাসাকারের কোন কারণ এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাত প্রায় ১২ টার দিকে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ ঐ এলাকা থেকে পাবলিক এবং সাংবাদিকদেরকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে সরিয়ে দেন। সাংবাদিকদেরকে সরাসরি খবর সম্প্রচার করতে নিষেধ করেন। তিনি বলেন, এখন তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা বা নেগোসিয়েশন করা হবে। জনগণ এবং সাংবাদিকরা র্যাব প্রধান বেনজির আহমেদের অনুরোধ বা নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। শুধুমাত্র মার্কিন টেলিভিশন সিএনএন র্যাব প্রধান বলা সত্ত্বেও বাইরের ঘটনাবলি সরাসরি সম্প্রচার করে। যাই হোক, অনেকেই সেদিন গভীর রাত পর্যন্ত, এমনকি শেষ রাত পর্যন্তও টিভির সামনে বসে ছিলেন। আশা ছিল, যদি কোন লেটেস্ট খবর পান কিন্তু কোন খবর আর পাওয়া যায়নি। সকাল সাড়ে ৮টা কি ৯টার দিকে সরকারি ভাবেই খবর আসে যে সেনাবাহিনী বিশেষ করে সেনাবাহিনীর কমান্ডো ইউনিট, নেভি, এয়ার ফোর্স, বিডিআর, র্যাব, সোয়াত এবং পুলিশের যৌথ বাহিনী হোলি আর্টিজানে ঢুকে পড়ে এবং ৬ জন জঙ্গিকে হত্যা করে। এই অপারেশনকে বলা হয়, অপারেশন থান্ডার বোল্ট। অবশ্য এই ৬ জনের মধ্যে একজন ছিলেন ঐ রেস্টেুরেন্টের শেফ। তার আগেই হামলাকারীরা ২০ জনকে হত্যা করে।
এসব খবর সকলেই জানেন। প্রতিদিনই তারা পত্রিকায় এসব পড়ছেন। কিন্তু যে প্রশ্নটির জবাব পাওয়া যায়নি সেটি হলো, সন্ত্রাসীদের সাথে সরকারি বাহিনীর আদৌ কি কোন নেগোসিয়েশন হয়েছিল? হয়ে থাকলে কি কথা হয়েছিল? পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট পড়ে মনে হয়, আসলে সরকার পক্ষ এবং সন্ত্রাসীদের সাথে কোন আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়নি। সন্ত্রাসীরা যাদেরকে হত্যা করতে চেয়েছিল তারা সকলে মারা গেছেন। আবার সরকারি বাহিনীও সন্ত্রাসীদের যে কয়জনই ভেতরে ছিল তাদের প্রত্যেককেই হত্যা করে। সুতরাং কোন পক্ষের কোন কথাই আর জানা যাচ্ছে না। হয়তো কোন দিন জানা যাবেও না। সরকার বলছে এই দলে যারা ছিল তাদের কয়েকজনকে পাকড়াও করা হয়েছে এবং রিমান্ডে নিয়ে তাদের কাছ থেকে তথ্য বের করার চেষ্টা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ঠিক কি তথ্য বের করা হয়েছে সেটি জনগণকে জানানো হয়নি। ঐ দিকে ঐ ঘটনার ৭ দিন পর দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত শোলাকিয়ায় কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা হয়। সেই হামলায় ২ জন পুলিশ নিহত হয় এবং পুলিশও হামলাকারীদের গোলাগুলিতে পাশের বাসার এক গৃহবধূ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। শোলাকিয়া থেকেও একাধিক হামলাকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারাও সরকারের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে কিন্তু তারা কি বলেছে সেগুলো জনগণ এখনো জানতে পারেনি।
ধীরে ধীরে খবর বেরিয়ে এসেছে যে, বিগত এক দেড় বছরে দেশের অনেক মেধাবী তরুণ দেশ থেকে বেরিয়ে গেছে। তারা কোথায় গেছে সে খবর সঠিকভাবে কেউ জানতে পারেননি। পুলিশও জানতে পারেনি, তাদের পিতা-মাতারাও জানতে পারেনি। এখন দেখা যাচ্ছে, ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান এবং ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া ছেলে-মেয়েসহ ২৬২ জন বিদেশে গেছে।
॥দুই॥
এত দিন পর্যন্ত সরকার উঠতে বসতে বলেছে যে দেশে যত জঙ্গি সব মাদ্রাসার ছাত্র। এতদূরও বলা হতো যে, কওমি মাদ্রাসাগুলো জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র। এর আগে জঙ্গিবাদের কারণে শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইসহ জেএমবির কয়েকজন নেতাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। তারপরেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক মুসুল্লি টাইপের মানুষজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ওরা জঙ্গি বলে প্রচার করা হয়েছে। সরকার যখন যা বলেছে জনগণ তখন সেটি জানতে পেরেছে। এর বাইরে আর অন্য কোন সূত্র থেকে খবর পাওয়া যায়নি। এরপর সরকারই বলেছে যে, জঙ্গিরা আর এখন কোন থ্রেট নয়, ধরপাকড় এবং বিভিন্ন সাজা দেয়ার ফলে জঙ্গি সংগঠনগুলো এবং সেই সুবাদে জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। মনে হয় সত্যিই এই জঙ্গিবাদ বাংলাদেশ থেকে নির্মূল হয়ে গিয়েছিল। পত্র-পত্রিকাগুলো বহুবার লিখেছে যে, জঙ্গিবাদ বলতে যা বোঝায় বাংলাদেশে সেটা নেই। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে যে ভয়াবহ মাত্রায় জঙ্গিবাদী এ্যাকশন দেখা যায় তার ছিটে-ফোঁটাও বাংলাদেশে নেই।
এভাবে সরকার এবং জনগণের মাঝে যখন সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব নিয়ে চরম আত্মতৃপ্তি বিরাজ করছিল তখন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত গুলশান হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে। এবার বেরিয়ে আসে নতুন তথ্য। শুধু ঐ ৬ জন নয়, এর মধ্যে যারা ঘর ছেড়েছে তারা প্রায় সকলেই বড় লোকের সন্তান এবং ভাল ভাল বিশেষ করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ওদের অধিকাংশই পড়ত। স্কুল পেরিয়ে তারা নর্থ সাউথের মত দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে। এদের কেউ কেউ বিদেশেও লেখাপড়া শিখছে বা শিখছিল। আগেই বলেছি যে, গুলশান হত্যাকা-ের পর ধীরে ধীরে খবর বেরিয়ে আসে যে অনেক তরুণ বাংলাদেশের বাইরে বেরিয়ে গেছে। কোথায় গেছে তারা? কেউ সেটি সঠিক করে বলতে পারে না। অবশ্য র্যাব যে ২৬২ জনের নিখোঁজ তালিকা দিয়েছে সেই তালিকাও এখন আবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে যে, যারা নিখোঁজ হয়েছে তাদের প্রায় সকলের পিতা-মাতাই থানায় ডায়েরি করেছেন। অনেক অভিভাবক নালিশ করছেন যে, তারা যখন থানায় ডায়েরি করেন তখন এবং তারপর পুলিশ ঐসব নিখোঁজ তরুণদের খুঁজে বের করার জন্য তেমন আগ্রহ দেখায়নি। ফলে তাদেরকে খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে পুলিশ কোন তৎপরতাও দেখায়নি। এখন যে মুহূর্তে সবকিছু পুলিশের ঘাড়ে এসে চেপে বসেছে তখন নিখোঁজের যে লিস্ট বের করা হয়েছে সেই লিস্টও অনেক ভুলে ভরা বলে প্রতিভাত হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক ছেলে ফিরে এসেছে। পত্র-পত্রিকার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে, কোন কোন তরুণ বিদেশ থেকে ফোন করে বাবা-মাকে আশ্বস্ত করেছে যে তারা ভাল আছে।
এমন একটা বিভ্রান্তিকর অবস্থার মধ্যে টক শোতেও অনেকে প্রশ্ন করছেন এবং পত্রিকাতেও কলাম লিখে অনেকে প্রশ্ন করছেন, এই সব টগবগে তরুণ, যারা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, যারা ব্রিলিয়ান্ট, যারা বড়লোকের ছেলে-মেয়ে, যারা চাইতে না চাইতেই হাতের কাছে সবকিছু পেয়ে যায়, তারা কেন এভাবে জঙ্গিবাদের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে? আমি এখানে রিপিট করছি যে, যেসব কথা আমি এখানে বলছি সেসবের একটি বর্ণও আমার নিজের নয়। সবকিছুই পত্র-পত্রিকা থেকে নেয়া হয়েছে। প্রশ্ন করা হচ্ছে যে, এরা এমন কোন্ আকর্ষণে আকৃষ্ট হচ্ছে যে তাদের নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিতেও তারা এতটুকু দ্বিধা করছে না?
॥তিন॥
আমার মনে হয় যে, জঙ্গিবাদ এবং মিলিট্যান্সি, এ ইস্যুটিকে কোন সময়ই কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে এড্রেস করেননি। এটির নাম জঙ্গিবাদ। আর যারা এগুলো করে তাদেরকে বলা হয় জঙ্গি। আসলে ‘জঙ্গি’ শব্দটি কি সঠিক? এই শব্দটি এসেছে ইন্ডিয়া থেকে কিন্তু এটি সঠিক বলে মনে হয় না। জঙ্গির উৎপত্তি হয়েছে ‘জং’ থেকে। জং মানে যুদ্ধ। যে যুদ্ধ করে সে হলো জঙ্গি। যে বিমানে যাত্রীরা আসা-যাওয়া করে সেটি হলো যাত্রী বিমান কিন্তু যে বিমানটিকে যুদ্ধে ব্যবহার করা হয় সেটিকে বলে জঙ্গি বিমান। তাই যাদেরকে জঙ্গি বলা হয় তারা আসলে জঙ্গি নয়, তারা হলো সন্ত্রাসী, ইংরেজীতে টেরোরিস্ট।
আমাদের দেশে একটি বিশেষ ঘরানা তাদের নিজেদের কিছু লোককে ইন্টেলেকচুয়াল বা আঁতেল বলে পরিচিত করেন। এরা অতীতে মানুষকে বুঝিয়েছে যে গরীব এবং দরিদ্র ঘরের যেসব ছেলে-মেয়ে অতি কষ্টে দিন যাপন করে, যাদের দু’মুঠো খাবার অন্ন জোটে না, লেখা-পড়া শিখতে গেলে ফি দেয়ার যাদের সামর্থ্য নেই, আর তার পাশে যখন দেখে অন্যদের অঢেল অর্থ, তখনই তাদের মন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে তখন তারা সমাজ পরিবর্তনের নেশায় ধনীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে। কিন্তু এখন যারা নর্থ সাউথ বা স্কলাস্টিকার ছাত্র হয়ে জঙ্গি বা টেরোরিস্ট হচ্ছে তাদের বেলায় তো এ কথাটি খাটে না। নকশাল বাড়ির আন্দোলনটি কি ছিল? এরপর ঐ একই ঘরানা থেকে বলা হলো যে, মাদ্রাসার ছাত্ররা টেরোরিস্ট বা জঙ্গি হচ্ছে। এরা হলো ইসলামী জঙ্গি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিগত সাড়ে ৭ বছর ধরে এ কথাটিই শুনে আসছি এবং অসংখ্য মাদ্রাসার ছাত্রকে গ্রেফতার হতে দেখছি।
কিন্তু গুলশান ম্যাসাকারের পর থেকে আওয়ামী লীগের প্রোপাগা-ার বাতাস দিক পরিবর্তন করেছে। এখন আই জি পি শহিদুল হকও বলছেন যে, মাদ্রাসার ছাত্ররা জঙ্গি নয়। এখন সে একই ঘরানার ইন্টেলেকচুয়ালরা সুর বদলিয়েছেন। এখন বলছেন, ধনী লোকদের সন্তানরা বাবা-মায়ের সঙ্গ থেকে বঞ্চিত। এ বঞ্চনার কারণেই কি তারা টেরোরিস্ট বা জঙ্গি হবেন? আসলে এ ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা নিজেরাই বিভ্রান্ত। নিজেরাই জানেন না যে কেন এগুলো ঘটছে। ওরা এক সময় ছিলেন কমিউনিষ্ট। এখন আর সর্বহারাদের কথা ওদের মাথায় নেই। ওরা বড়লোক হয়েছেন। তবুও প্রগতিবাদীতার ভড়ং তো রাখতে হবে। তাই ওদেরকে মানুষ ঠাট্টা করে বলে, হলিউডি কমরেড।
নীচে একটি ঘটনা উল্লেখ হলো ঘটনাটি সব পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ঘটনাটি নি¤œরূপ :
‘ভাই, আল্লাহর রাস্তায় চলে যাচ্ছি। দোআ করিও। পরকালে তোমাদের সঙ্গে দেখা হবে’। স্বজনদের সঙ্গে এসব কথা বলেই বছর খানেক আগে স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক মেয়ের জামাতাসহ দেশ ছেড়েছিলেন এক চিকিৎসক। সূত্রমতে, তারা প্রথমে বাংলাদেশ থেকে যান মালয়েশিয়ায়, পরে সেখান থেকে পাড়ি জমান তুরস্কে। প্রসঙ্গত, এ চিকিৎসকের এক মেয়ে ও তার স্বামী দুজনেই নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিলেন।
সপরিবারে বিদেশ পাড়ি দেয়া এ চিকিৎসকের নাম রোকনুদ্দীন খন্দকার। ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. রুহুল আমীনের অধীনে রেজিস্ট্রার ছিলেন তিনি। যাওয়ার আগে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন।
রাজধানীর খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ার ৪৪১/বি নম্বর বাড়িতে সপরিবারে থাকতেন ডা. রোকনুদ্দীন খন্দকার। তার স্ত্রী নাইমা আক্তার মালিবাগের হোমিও চিকিৎসক ডা. আলী আহম্মেদের মেয়ে। তিনি যশোর এমএম কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ছিলেন। পৈত্রিক সূত্রে মালিবাগের ওই বাড়ির মালিক নাইমা আক্তার ও তার ছোট বোন ডা. হালিমা আক্তার। সাত তলা বাড়ির ১৪টি ফ্ল্যাটের মধ্যে দুই বোন ৭টি করে ফ্ল্যাটের মালিক। এ বাড়ির তৃতীয় তলার ডান পাশের ফ্ল্যাটে থাকতেন ডা. রোকনুদ্দীন খন্দকার। তার বড় মেয়ে রেজওয়ানা রোকন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। ওই বিভাগের শিক্ষার্থী শিশিরের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
এখন আপনারাই বলুন, যিনি শিশু হাসপাতালের ডাক্তার, যার স্ত্রীর ৭টি ফ্ল্যাট আছে, তিনি কেন, কিসের নেশায় সব ছেড়ে ছুড়ে, ফেলে ফুলে কন্যা, স্বামী এবং জামাতাকে নিয়ে দেশ ছাড়লেন? এ পরিবারে তো স্বামী-স্ত্রী বা পিতা-পুত্র বা মাতা-কন্যা সর্বক্ষণ এক সাথে থাকতেন। এখানে তো সময় দেয়ার প্রশ্ন আসে না। তারপরেও তারা কেন গেলেন?
শুধুমাত্র নাঈমা আক্তার বা রোকন উদ্দিন নন, সপরিবারে না হলেও বিক্ষিপ্তভাবে অনেকেই দেশ ছেড়েছেন বলে পত্র-পত্রিকার রিপোর্টে প্রকাশ। এরা কেন সুখী সচ্ছল জীবন ছেড়ে অনিশ্চিতের পথেই শুধু নয়, নিশ্চিত মৃত্যুর পথে পাড়ি জমাচ্ছেন। তারা দুনিয়ায় আর দেখা হবে না, জান্নাতে দেখা হবে, কেন বলছেন? সন্ত্রাসবাদ বলুন আর জঙ্গিবাদ বলুন, এ কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে, শুধু এটুকু বললে আসল কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এর পেছনে মনস্তাত্বিক কারণ কি সেটিও খুঁজে বের করতে হবে। রাজনীতি বা ধর্মে দীক্ষা নেয়া দেয়ার ব্যাপারে ইনডকট্রিনেশন (Indoctrination) বলে একটি পরিভাষা আছে। সেটি নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।
Email: journalist15@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন