প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিক সঙ্কট উত্তরণ এবং সুষম অর্থব্যবস্থাপনার কোন দিক-নির্দেশনা নেই বলে উল্লেখ করেছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। গতকাল নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা শায়খ জিয়া উদ্দীন এবং মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী একথা বলেছেন। তারা বলেন, নতুন বাজেটে মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন যাত্রাকে আরো ব্যয়বহুল ও সঙ্কটময় করে তুলবে। বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিতকরণের আবরণে সর্বস্তরের মানুষের জীবন যাপনে অপরিহার্য ও ব্যাপক ব্যবহৃত বেশ কিছু খাতে কর বৃদ্ধি ও বিস্তৃত করা হয়েছে। অন্যদিকে অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করার আবরণে শিল্পতিপতিদের সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের সুদহার ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ দশমকি ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। কোনোরূপ বাছবিচার ছাড়াই প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনীতির জন্য টিউমারখ্যাত কালো টাকা সাদা করার অবারিত সুযোগ দেয়া হয়েছে। কর্পোরেট কর কমিয়ে বড় বড় ব্যবসায়িক গ্রুপের জন্য আরো সুবিধা করে দেয়া হয়েছে। শিল্পখাতের জন্য সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা রাখা হয়েছে।
জমিয়তের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, প্রস্তাবিত মোট বাজেটের প্রায় ৩ ভাগের ১ ভাগই ঋণনির্ভর। এতে করে সরকারের ব্যাংক নির্ভরতা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণের উপর জাতীয় ঋণের বোঝা ভয়াবহ রূপ নিবে। চলতি অর্থ বছরের ১১ মাসে সরকার ব্যাংক থেকে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে সরকার ১৯টি প্যকেজে ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন- যা সরবরাহের দায়িত্ব মূলত ব্যাংকগুলোর। ব্যাংকের এমনিতেই তারল্য সঙ্কট রয়েছে; বাজেটে ব্যাংক থেকে ৮৪ লাখ ৯ হাজার ৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাবের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতকে আরো সঙ্কটের দিকে ঠেলে দেয়া হবে। এতে করে দেশের আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা আরো ভঙ্গুর হয়ে পড়ার প্রবল আশঙ্কা।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে দেশের স্বাস্থ্যখাতের যে করুণ দশা স্পষ্ট হয়েছে, এটা থেকে উত্তরণের জন্য বাস্তবসম্মত কোন ব্যবস্থা নতুন বাজেটে নেই। শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা এবং খাদ্য নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাত প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের মতোই অবহেলার শিকার।
জমিয়ত শীর্ষ নেতৃদ্বয় বলেন, প্রস্তাবিত এই বাজেট সংশোধন ছাড়া পাশ হলে একদিকে সাধারণ মানুষের জীবন-যাপনের ব্যয় বাড়বে, অন্যদিকে বড়লোকদের আরো ধনবান হওয়ার পথ সহজ হবে। দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনারোধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ না থাকায় অর্থনৈতিক বৈষম্য ও ধনী-গরীবের ব্যবধান আরো বাড়বে। তাছাড়া ব্যাপক ব্যাংক ঋণ ও প্রণোদনার কারণে ব্যাংকিং খাতকে আরো রুগ্ন করে তুলবে। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে প্রস্তাব করা হয়েছে, এতে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে।
জমিয়ত নেতৃবৃন্দ বলেন, দারিদ্র দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে গুরুত্বের কথা বলা হলেও এক্ষেত্রে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা বাস্তবায়নের কোন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা নেই। বাজেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ সকলের জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার গতানুগতিক বক্তব্য ছাড়া নতুন কোন ব্যবস্থার উল্লেখ নেই। কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। কৃষকরা বরাবরই তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না। প্রস্তাবিত বাজেটে উৎপাদনের উপকরণের মূল্য হ্রাসের কোন কথা বলা হয়নি। বরং গত বছরের সারের মূল্যই বহাল রাখা হয়েছ। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতসহ কৃষিখাতকে যথাযথ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়নি বাজেটে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শ্রমিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, আবাসন ও জীবন যাপনের সঙ্কট নিরসন এবং অপেক্ষাকৃত সহজতর করতে বাজেটে বিশেষ কোন উল্লেখ নেই।
জমিয়ত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও মহাসচিব বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা আনয়নের কার্যকর প্রতিশ্রুতি, সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা, দুর্নীতির পথ কঠোরভাবে রুদ্ধ করার যৌক্তিক উপায়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও গ্রামীণ অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ বাড়ানো এবং সর্বসাধারণের নিত্য ব্যবহার্য পণ্যে বাড়তি করোরোপ না করা’সহ জনবান্ধব সংশোধনী আনতে আমরা সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি’।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন