শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

শিবগঞ্জের প্রাথমিকে উপবৃত্তির টাকা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা

সরকার শিক্ষার শতভাগ হার নিশ্চিত করতে শিশুদের উৎসাহ বৃদ্ধিতে উপবৃত্তির প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সে মোতাবেক চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তি বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘুরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টাকা বিভিন্ন অজুহাতে কর্তন করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত অর্থাৎ সম্পূর্ণ টাকাই কর্তন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ আরো জানা গেছে, পূর্বে যদিও ছবি তোলার টাকা পরিশোধ করা রয়েছে তবুও আবারো ছবির টাকা কর্তন করেছে। অভিভাবকের অভিযোগ, একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকৌশলে টাকা বিতরণের আগেই বিভিন্ন ফরমে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছে শিক্ষার্থীদের। কোনো কোনো বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের উন্নয়নের অজুহাতে শিক্ষার্থী প্রতি ৫০ টাকা করে কর্তন করেছে। টাকা কর্তনের কারণ হিসাবে তারা দেখিয়েছেন শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি, পরীক্ষায় ৩৩%-এর কম নম্বর। তবে শিক্ষার্থীদের অনেকেই জানায়, তারা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত না থেকে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার পরও শিক্ষকরা তাদের টাকা কর্তন করেছে। এদিকে খড়িয়াল গ্রামের শাহাজাহান শেখ জানান, আমার মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। শিক্ষকরা মাত্র ২শ’ টাকা দিয়েছে। বাকি টাকা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ও পরীক্ষার ফলাফল খারাপ বলে কর্তন করেছে। একই গ্রামের মুন্সি শেখ জানান, আমার মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়লে শিক্ষকরা একটি টাকাও দেয়নি। মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকার দিনমজুর শামীম রেজা বলেন, শত কষ্ট করে আমার সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠালে শিক্ষকরা ২শ’ টাকা কর্তন করেছে। তিনি বলেন, যদিও আগে ছবি তোলার টাকা দিয়েছি, তারপরও টাকা উত্তোলনের দিন ২০ টাকা নিয়েছে। প্রধান শিক্ষক কাজরিয়া বেগম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অবৈধভাবে কোনো কোনো শিক্ষার্থীর নিকট হতে কোনো প্রকার অর্থ নেয়া হয়নি। দারিয়াগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদালয়ের গেট করার জন্য শিক্ষার্থী প্রতি ৫০ টাকা করে নেয়া হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক জানান। এব্যাপারে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের মতামতের ভিত্তিতে এ টাকা নেয়া হয়েছে। একই অভিযোগÑ রাঘববাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ও সাতভাইয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক। মনাকষা মাদ্রাসা সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন গিয়ে টাকা কর্তনের উপযুক্ত কারণ অনুপস্থিতি ও পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ হওয়ার বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষ দেখালেও টাকা কর্তনের বিষয়টি এড়িয়ে যান। অন্যদিকে বিভিন্ন ইউনিয়নের শত শত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন। কয়েকটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিলেও পরে তা উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে টুপাইসের মাধ্যমে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রত্যাহার হয়ে যায় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা অফিসারের একজন কর্মকর্তা জানান, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় পুরাতন জাতীয়করণ ১২০টি, নতুন জাতীয়করণ ১০৮টি ও নতুনভাবে গেজেট হওয়া ৮টি সব মিলিয়ে মোট ২৩৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭৪ হাজার ৪৯৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। এ টাকা শুধু শিশু শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ৫০ টাকা ও প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ১শ’ টাকা উপবৃত্তি দেয়ার নিয়ম আছে। তবে কোনো শিক্ষার্থী যদি ৮৫% এর কম উপস্থিতি থাকে এবং একটি সাময়িক পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে ৩৩ নম্বর না পায় তাহলে তার টাকা কর্তন হয়ে যাবে। এব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইউসুফ আলী ভুঁইঞার সাথে মুঠোফোনে ০১৭১৭৪২৪৪৯২ একাধিবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার রিয়াজুল ইসলামের সাথে ০১৭৬৬২০২৩৩৪ মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মোবাইলে কোনো প্রকার তথ্য দেয়া যাবে না বলে সংযোগটি কেটে দেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন