টানা বৃষ্টিতে বন্দর নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে পাহাড় ধস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অফিস থেকেও ভারী বর্ষণের সাথে এ অঞ্চলে পাহাড় ধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রশাসনের করোনা মহামারী ব্যস্ততার কারণে পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার কাজ থেমে গেছে। তবে থেমে নেই পাহাড় কাটা। পাহাড়খেকোরা নির্বিচারে পাহাড় টিলা কেটে সাবাড় করে চলেছে। টানা ছুটির সুযোগে নগরী এবং আশপাশের অসংখ্য পাহাড় নিধন করা হয়েছে। নতুন নতুন এলাকায় পাহাড় কাটার ফলে এবারের বর্ষায় ধস আর প্রাণহানি বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা যায়, নগরীর পাশাপাশি সীতাকুÐ, মীরসরাই, হাটহাজারী, রাউজান, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়াসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা চলছে। কিছু এলাকায় পরিবেশ অধিদফতর জরিমানা আদায় করলেও থামছে না ভ‚মিদস্যুদের অপতৎপরতা।
গত দুই সপ্তাহে চারটি পাহাড় কাটার ঘটনায় জড়িতদের ৮১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যেও বায়েজিদ লিংক রোড সংলগ্ন এলাকায় চলছে পাহাড় কাটা। নগরীর বায়েজিদ এলাকায় এক পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে পাহাড় কেটে জমি দখলের অভিযোগও জমা পড়েছে পরিবেশ অধিদফতরে।
১ জুন নগরীর জামাল খানে বহুতল ভবন নির্মাণে পাহাড়ের ২৮ হাজার বর্গফুট কেটে ফেলায় সনজিৎ দত্ত ও দারদাউস শাহ নামের দুই ব্যক্তিকে ২৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ৮ জুন রাউজানে পাহাড় কেটে রাস্তা করায় মাজেদা এন্টারপ্রাইজকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ৯ জুন বায়েজিদ আরেফিন নগরে পাহাড় কাটায় আবু তৈয়বকে ৩২ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং ফয়’স লেক এলাকায় আলী শাকের মুন্নাকে ১৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এসব অভিযানে ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি পাহাড়ের কাটা অংশ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়। নিকট অতীতে পাহাড় কেটে সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কেও জরিমানা গুনতে হয়েছে।
পরিবেশ অধিদফতর, মহানগরের পরিচালক নুরুল্লাহ নূরী বলেন, মহামারীতেও কিছু কিছু ব্যক্তি পাহাড় কাটছে। খবর পাওয়ার সাথে সাথে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। যেখানে পাহাড় কাটা হয়েছে সেখানে কাউকে কোন স্থাপনা করতে দেয়া হবে না।
এদিকে করোনার কারণে পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানও থেমে গেছে। প্রতিবছর বর্ষার আগে উচ্ছেদ এবং লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হলেও এবার তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। গত বছরের এপ্রিলে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় পরবর্তী এক মাসের মধ্যে ১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে ৮৩৫টি পরিবারকে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়। উচ্ছেদ পরিচালনায় বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে একটি কমিটিও করে দেয়া হয়। তখন কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হলেও তা থেমে যায়।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতিবছর পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ২০০৭ সালের ১১ জুন টানা বর্ষণে কয়েক ঘণ্টায় ১২৯ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালের ১২-১৩ জুন রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে ১১০ জন, চট্টগ্রামে ২৩ জনসহ ১৫৬ জন মারা যায়।
নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং : পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করেছে জেলা প্রশাসন। আবহাওয়া অফিস থেকে ভারী বর্ষণের আভাস দেয়ার পর নগরীর কয়েকটি এলাকায় মাইকিং করা হয়। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, লোকজনের জন্য ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন