নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে
প্রতি বছর দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারসহ শহর ও গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে নানা কাজে ব্যবহৃত পানি ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ ব্যয় করে ড্রেন নির্মাণ করা হয়। সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা ও জনসচেতনতার অভাবে এসব ড্রেন নানাভাবে ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও সংস্কারের অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সংশ্লিষ্ট এলাকবাসীর। এসব ড্রেন নির্মাণের পিছনে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় হলেও এগুলো সাধারণ মানুষের কোন উপকারে আসে না। দামুড়হুদা উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বসতবাড়ি, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নানাকাজে ব্যবহৃত পানি ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রতি বছর সরকারি টাকায় নির্মিত হয় ছোট বড় বিভিন্ন দৈর্ঘ্যরে কয়েক কোটি টাকার ড্রেন। এসব ড্রেনের বেশিরভাগই অপরিকল্পিত ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নির্মিত হওয়ার কারণে হাতেগোনা কিছু মানুষ উপকৃত হলেও এলাকার বেশিরভাগ মানুষ এসব ড্রেনের সুবিধা ভোগ করতে পারে না। এছাড়া সচেতনতা ও সংস্কারের অভাবে ড্রেনগুলো ভরাট ও অকেজো হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ এর সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। উপজেলার মদনা বাজার ও আশপাশ এলাকায় বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা নিরসনসহ সারাবছর বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত পানি নিষ্কাশনের জন্য বছর দশেক আগে পূর্বপাড়া জামে মসজিদ থেকে বাজারের রাস্তার পাশ দিয়ে খোরশেদ মাস্টারের বাড়ি পর্যন্ত বেশ প্রশস্ত করে প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ড্রেন নির্মাণ করা হয়। ড্রেনের উপর কোন স্লাব না থাকায় ময়লা-আবর্জনা ও পরিত্যক্ত পলিথিন পড়ে কয়েক বছরেই ড্রেনটি ভরাট হয়ে যায়। সংস্কারের অভাবে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ খরচ করে নির্মিত ড্রেনটি অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় মানুষের কোন কাজেই আসে না। বর্ষকালে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হতে পারায় রাস্তার উপর ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা মিশ্রিত পানি জমে থাকে। বিশেষ করে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে বাজারের বিভিন্ন স্থানে কাদামাটি ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বাজারের ব্যবসায়ীরাসহ এলাকার বাসিন্দাদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। প্রায় এক যুগ আগে উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা বাজারের পানি নিষ্কাশনের জন্য বাজারের প্রধান সড়কের পাশ দিয়ে প্রায় ৫শ’ ফুট দৈর্ঘ্যের ড্রেন নির্মাণ করা হয়। এ ড্রেনটির উপরিভাগে কোন ঢাকনা না থাকায় বাজারের মানুষজনের চলাচলের অসুবিধার সৃষ্টি হতে থাকে। ফলে কয়েক বছর যেতে না যেতেই স্থানীয়রা মাটি ও আবর্জনা ফেলে ড্রেনটি ভরাট করে ফেলে। যার ফলে বর্তমানে ড্রেনটি সম্পূর্ণরূপে মাটির নিচে চাপা পড়ে গেছে। আগে থেকে জানা না থাকলে ড্রেনের অস্তিত্বের কথা বলাও কঠিন। বাজারের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বাজারের মানুষের সুবিধার জন্যই ড্রেনটি নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু ড্রেনের উপর কোন স্লাব বা ঢাকনি না থাকায় আলগা ড্রেনের কারণে মানুষের চলাচলের অসুবিধা হতে থাকে। এ কারণেই মানুষ ড্রেনটি আস্তে আস্তে ভরাট করে ফেলে। বছর পাঁচেক আগে দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের পাশে কুড়ালগাছি বাজারে পানি নিষ্কাশনের জন্য স্বল্প গভীরতার ড্রেন নির্মাণ করা হয়। নিমার্ণের পর এক বছর যেতে না যেতেই ড্রেনটি আবর্জনা ও কাদা মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। ভরাট হয়ে যাওয়া ড্রেনটি পরিষ্কার না করায় সেটি আর কোন কাজেই আসছে না বাজারের মানুষের। কুতুবপুর গ্রামের ভিতরের ড্রেনগুলোরও একই অবস্থা দেখা গেছে। অপরদিকে ড্রেনের অভাবে অনেক স্থানে বাড়ি-ঘরের ব্যবহৃত নোংরা পানি ও বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকার বাড়ি-ঘর ও রাস্তায় পানি জমে ভোগান্তিতে পড়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ। লোকনাথপুর গ্রামের আব্বাস উদ্দীন, কাশেম, বাবলু বলেন, আমাদের গ্রামে ড্রেনের অভাবে বর্ষকালে একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় হাঁটু সমান পানি জমে চলাচলের অসুবিধার সৃষ্টি হলেও কারও কোন মাথাব্যথা নেই। বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে অভিযোগ করেও কোন ফল হয়নি। দর্শনা পৌর এলাকার আজমপুর ও মহম্মদপুর এলাকায় ড্রেনের অভাবে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হতে না পেরে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ পানি পচে দুর্গন্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে পরিবেশ দুষণ ঘটে। দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে বিস্তার ঘটছে মশা-মাছিসহ নানা ধরনের রোগ জীবাণুর। ফলে এ সমস্ত এলাকায় নানা বয়সী মানুষের মধ্যে চর্মরোগসহ নানা ধরনের পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সচেতন মহল মনে করেন, এসব ড্রেন নির্মাণের আগে সুবিধা-অসুবিধা, সম্ভাব্যতা ও প্রয়োজনীয়তা যাচাই করা এবং ড্রেনগুলো ব্যবহারের ব্যাপারে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ড্রেনগুলোর সুবিধা ভোগ করতে পারবে সাধারণ মানুষ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন