বিশ্বব্যাংক আয়ের স্তরের প্রতিবেদন আকারে তার সর্বশেষ দেশের শ্রেণিবিন্যাসে বলেছে, নেপাল ‘নিম্ন-আয়ের’ দেশ থেকে একটি ‘নিম্ন-মধ্যম আয়ের’ দেশে উন্নীত হয়েছে। হিমালয় বেষ্টিত রাষ্ট্রটির মোট মাথাপিছু জাতীয় আয় (জিএনআই) ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯০ ডলারে। এটি প্রান্তিকে ১ হাজার ৩৬ ডলারের গন্ডি ছাড়িয়েছে। মাথাপিছু জিএনআই হ’ল দেশটির বার্ষিক আয় জনসংখ্যায় বিভক্ত। ২০১৮ সালে এটি ছিল ৯৬০ ডলার। ১ জুলাই বার্ষিক শ্রেণিবিন্যাস আপডেট হয় মাথাপিছু জিএনআই-এর ওপর ভিত্তি করে।
অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, এটি সুসংবাদ তবে এটি স্বল্পস্থায়ী হবে। কোভিড-১৯ মহামারিতে দেশ-বিদেশে উচ্চস্তরের বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে নেপাল এই বছর স্বল্প আয়ের দেশের মর্যাদায় ফিরে আসবে বলে তারা জানিয়েছেন। জিএনআইতে দেশের মোট দেশীয় পণ্য (জিডিপি) এবং বিদেশী উৎস থেকে রেমিটেন্সের মতো উপার্জন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিশ্বব্যাংক অর্থনীতির ভিত্তিতে বিশ্বের দেশগুলোকে চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করে। সেগুলো হচ্ছে, নিম্ন, নিম্ন-মধ্যম, উচ্চ-মধ্যম এবং উচ্চ-আয়ের দেশ। প্রতিটি দেশে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বিনিময় হার এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির মতো উপাদানগুলি মাথাপিছু জিএনআইকে প্রভাবিত করে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, মাথাপিছু জিএনআইযুক্ত দেশগুলো ১২,৫৩৫ ডলার মাথাপিছু উচ্চ আয়ের হিসাবে বিবেচিত হয়, আর উচ্চ-মধ্য-আয়ের স্থিতিশীল দেশগুলোর মাথাপিছু জিএনআই রয়েছে ৪,০৪৬ থেকে ১২,৫৩৫ ডলার। একইভাবে নিম্ন-মধ্যম আয়ের বিভাগে মাথাপিছু ১,০৩৬ থেকে ৪,০৪৫ ডলার জিএনআইসহ দেশগুলি অন্তর্ভুক্ত এবং মাথাপিছু ১,০৩৬-এর চেয়ে কম জিএনআইযুক্ত দেশগুলোকে স্বল্প আয়ের হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ব্যাংক জানিয়েছে, ২০১৯ সালের জিএনআই পরিসংখ্যান ব্যবহারের মাধ্যমে আয়ের শ্রেণিবিন্যাস গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে কোভিড-১৯ এর প্রভাব প্রতিফলিত হয়নি।
অর্থনীতিবিদ বিশ্বম্ভর পাইকুড়িয়াল বলছেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারি দেশের অর্থনীতিকে আপ্লুত করেছে এবং এই বিদ্যমান সঙ্কটের ফলস্বরূপ দেশে এবং বিদেশে উভয়ই এ বছর বা এমনকি পরের বছরেও আয় তীব্র হ্রাস পাবে বলে মনে করেন’। ‘তার অর্থ মোট জাতীয় আয়ের ক্ষতি হবে এবং এটি নেপালকে স্বল্প আয়ের দেশগুলোর মধ্যে ফিরিয়ে আনবে’।
বিশ্বব্যাংকের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ২০২০ সালের সংস্করণে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে সমাপ্য অর্থবছরে নেপালের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য নেপালের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এক চরম চিত্র ব্যাঙ্কটি চিত্রিত করেছে, উল্লেখ করেছে যে, দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতিতে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব হ্রাস পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, তবে মহামারীটি নেপালের মতো স্বল্প আয়ের দেশগুলিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা দুর্বল।
পরের অর্থবছরের জন্য বিশ্বব্যাংক নেপালে ২.১ শতাংশের উল্লেখযোগ্য কম হারে বৃদ্ধি পাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, গত বছর রেমিট্যান্স থেকে আয় হয়েছে ৮.১ বিলিয়ন ডলার, যা নেপালের মোট দেশজ উৎপাদনের এক চতুর্থাংশেরও বেশি। তবে ভাইরাসে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দা এবং তেলের দাম হ্রাসের কারণে ২০২০ সালে রেমিট্যান্স ১৪ শতাংশ কমে যাবে।
তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশ এবং মালয়েশিয়ায় কাজ করা কয়েক হাজার নেপালি অভিবাসীকে বিদায় দেয়া হয়েছে এবং মহামারিটি বাকী শ্রমিকদের দেশে ফিরতে বাধ্য করতে পারে। নেপাল গত ২০ বছরে দারিদ্র্য হ্রাসে অগ্রগতি করেছে। ২০১০ সালে আনুমানিক দারিদ্র্যের প্রধান হিসাব অনুপাত (প্রতি আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা জনপ্রতি প্রতিদিন ১.৯৯ ডলার) ছিল ১৫ শতাংশ, যা ১৯৯৮ সালে আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৮ শতাংশে। ২০১৯ সালে দিনে ৩ দশমিক ২০ ডলার আয়ের লাইনে ছিল নেপালের জনসংখ্যার ৩৯ শতাংশ যা ২০১০ থেকে ১৫ শতাংশ-পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে।
ব্যাংক বলছে, প্রতিদিন প্রায় ১.৯ ডলার থেকে ৩.২ ডলারে বেঁচে থাকা জনসংখ্যার আনুমানিক ৩১ শতাংশ চ‚ড়ান্ত দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে যাওয়ার উল্লেখযোগ্য ঝুঁকির মুখে রয়েছে। মূলত রেমিট্যান্স হ্রাস, সম্ভাব্য অভিবাসীদের উপার্জন হ্রাস, অনানুষ্ঠানিক খাতে চাকরি হ্রাস এবং কোভিড-১৯-এর ফলস্বরূপ পণ্যমূল্য বৃদ্ধি এর কারণ।
অর্থনীতিবিদ পাইকুরিয়াল বলছেন, ‘দারিদ্র্যের সফল ও দ্রুত হ্রাস সত্তে¡ও, কোভিড -১৯ মহামারির আগেও নিম্নগতির প্রবৃদ্ধির কারণে নেপাল ২০৩০ সালের আগে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার মতো অবস্থানে ছিল না। কয়েক বছর ধরে প্রবৃদ্ধি স্থগিতের সাথে মহামারির কারণে ২০৩০ সালের আগে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এখন এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। নেপালকে তাৎক্ষণিকভাবে তার উন্নয়নের মডেল পাল্টাতে হবে এবং করোনাভাইরাস-পরবর্তী মহামারি সম্পর্কিত ব্যাপক কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন, কারণ বর্তমান বিকাশের পথটি নিম্ন-বৃদ্ধির ফাঁদ থেকে বাঁচতে সহায়তা করছে না’।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন