সরকারের মদদেই রিজেন্ট হাসপাতালে অপকর্ম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, একটা হাসপাতাল কি করে একটা মিথ্যা সার্টিফিকেট দিতে পারে। ছবিতে দেখলাম, আমাদের সমস্ত মন্ত্রীরা তার (রিজেন্ট হাসপাতালের কর্ণধার মো. সাহেদ) সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্টভাবে পরিচিত, কথা বলছেন, কাজ করছেন। অর্থ্যাৎ পুরোপুরি সরকারের মদদ নিয়ে এই অপকর্মটা তারা করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ এন্ড কমিউনিকেশনের উদ্যোগে ‘রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন: করোনাভাইরাস বিপর্য়য়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের আবারো সংবিধান বিরোধী পদক্ষেপ’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সকালে উঠে শুনতে হয় মৃত্যুর খবর আবার রাতে শোয়ার আগেও শুনতে হয় মৃত্যুর খবর। এভাবে মহামারীতে মৃত্যু হবে কিন্তুকোনো রকমের প্রতিরোধ গড়ে উঠবে না এবং চরম উদাসীনতা, অবহেলার মধ্য দিয়ে সরকার মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে-এটা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে জনগণের মতামতকে যদি সত্যিকার অর্থেই গুরুত্ব দিতে হয়, সত্যিকার অর্থেই যদি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা তৈরি করতে চাই, কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই, তাহলে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই। সেই ঐক্য গড়ে তুলতে হবে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার জন্য, জনগণের অধিকারকে রক্ষা করবার জন্য। সকলকে একটা জায়গায় আসতে হবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে শুদ্ধ করে আনার জন্যে নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ কালীন সরকার এবং এই সরকারকে চলে যেতে হবে-এই দাবি তুলতে হবে। আওয়ামী লীগকে বার বার ক্ষমতায় আনতেই ইসি রাজনৈতিকদলের নিবন্ধন আইনের সংশোধন করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা এবং তাদেরকে ক্ষমতায় রাখার প্রক্রিয়াটি ২০০৭ সালের এক-এগারোর সেনা সমর্থিত সরকার থেকে শুরু হয় উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এক এগারো থেকে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে, রাজনৈতিক দলগুলোকে একেবারে অকার্যকর করে। এখনো পরিকল্পিতভাবে সচেতনভাবে সেই কাজ চলছে। লক্ষ্য করে দেখবেন যে, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন একইভাবে নির্বাচন কমিশনগুলো তাদের দায়িত্ব পালন করেছে সেই দায়িত্বটা ছিলো যে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা। সংবিধান থেকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা বাতিল করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে ক্ষমতাসীন দলকে ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সরকার অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভূগছে মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এখন বড় ক্রাসিস হচ্ছে- এক কোটি থেকে আরো বেশি লোক দরিদ্র হয়ে গেছে, দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে। প্রতিদিন দৃশ্যমান ন্যূনতম ১০/২০ পরিবার ঢাকা থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে। এদের সেইভ করা হবে কিভাবে? সরকারের কোনো প্ল্যান নেই। সোশ্যাল সেফটিনেন্ট বা করোনাকালে আক্রান্ত মানুষগুলোর সহযোগিতার জন্য বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে বেতন-ভাতায় বাড়ানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, সব উন্মাদ কতগুলো ফর-টোয়ন্টি ভদ্রলোক মন্ত্রী-টন্ত্রী হয়েছেন এবং উনারা একটার পর একটা কথা বলে যাচ্ছেন। এখন দেখা যাচ্ছে- সরকারের কাছে কোনো টাকাই নেই্। সরকার টাকার জন্য কী করছে? প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, দেখেন তো ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ থেকে নেয়া যায় কিনা। ক্যান ইউ ইমাজিন দেশ কত বড় ক্রাসিসে পড়লে ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভে হাত দিতে চায়। মান্না বলেন, সেই লোকটা (রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক) আওয়ামী লীগের একজন মদদপুষ্ঠ, আওয়ামী লীগের উচ্ছিষ্ট লোক। আর সে রীতিমতো গানম্যানসহ পুলিশ প্রটেকশন পেতো। সরকার তাকে তৈরি করেছে। এরকম একটা দুইটা না। আপনার এন নাইটি ফাইভ দুর্নীতি যারা করেছে তারাও। মানুষের যখন মৃত্যুর আহজারি, ক্ষুধার্তের আর্তনাদ সেই সময়ে মানবতার সাথে এতো বড় বেইমানী করার দল পৃথিবীতে বেশি নাই।
বিএনপি নেতা জহিরউদ্দিন স্বপনের পরিচালনায় আলোচনায় অংশ নেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ ও নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব আবদুর রশিদ সরকার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন