রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

গরু ও মাদক পাচার ঠেকাতে রাজশাহী সীমান্তে বিজিবি-চরবাসী পাহারায়

রাজশাহী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০২০, ১১:৪৮ এএম

কোরবানীর ঈদে ভারত থেকে মাদক ও গরু চোরাচালান ঠেকাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে সীমন্ত পাহারা দিচ্ছে এখন রাজশাহীর চরের বাসিন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে রাত জেগে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন রাজশাহী সীমান্তের চরখিদিরপুর গ্রামের বাসিন্দারা। চোরাচালান ঠেকাতে বিজিবি সদস্যদের পাশাপাশি গ্রামের বাসিন্দারাও কাজ করছেন। সীমান্তে চোরাচালান ঠেকাতে ইতিমধ্যে গ্রামের ১৬ জন ব্যক্তিকে নিয়ে দুটি দল গঠন করা হয়েছে। সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ৮ জন সীমান্ত পাহারা দেন। তারা ৪ জন করে ভাগ হয়ে সীমান্তে নজর রাখেন। একইভাবে অপর ৮ জন রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত সীমান্ত পাহারা দেন। বিজিবির সঙ্গে সমন্বয় করেই তারা এই কাজ করছেন। রাতে যখন গ্রামের লোকজন সীমান্ত পাহারা থাকেন তখন তাদের কাছে থাকে টর্চ লাইট আর লাঠি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় রাজশাহীর সীমান্ত ঘেষা গ্রামের নাম চরখিদিরপুর। এ গ্রামের তিন পাশেই ভারত। কিন্তু কাঁটাতারের বেড়া নেই। তাই এ পথেই চোরাচালানের ঝুঁকি বেশি। সে কারণেই গ্রামবাসী সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন। চরখানপুর রাজশাহীর পবা উপজেলার মধ্যে পড়েছে। কখনও কোন এলাকায় সন্দেহজনক কিছু মনে হলে খবর দেন বিজিবিকে। তারা গিয়ে পরিস্থিতি দেখেন। গ্রামবাসী বলছেন, বিজিবির সঙ্গে এভাবে সীমান্ত পাহারা দেয়ায় এ পথে কোন মাদক আসে না। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গরুও আসছে না। আর বিজিবি বলছে, গ্রামবাসীর স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে দুর্গম এই চরে তাদের কাজও অনেক সহজ হয়ে গেছে। এভাবে প্রত্যেক এলাকায় গ্রামবাসীর অংশগ্রহণ থাকলে চোরাচালান বন্ধ করা অনেক সহজ হতো। তাহলে সীমান্ত হত্যাও বন্ধ হতো।

চরখিদিরপুরের বাসিন্দা পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য কোহিনুর বেগম জানান, তাদের গ্রাম এখনও করোনামুক্ত। কিন্তু ভারত থেকে যদি গরু আসে তাহলে করোনার সংক্রমনের আশঙ্কা রয়েছে। তাই বিজিবি তাদের বুঝিয়েছে যে নিজেদের গ্রাম নিজেদেরকেই নিরাপদ রাখতে হবে। তাই দুটি দল গঠন কর তাদের গ্রামের পুরুষরা ৯ জুলাই থেকে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন।

রাতে সীমান্ত পাহারায় থাকেন গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, চরে চাষবাস করি। গরু-ছাগল পালন করি। সামনে কোরবানি ঈদ। ভারত থেকে যদি গরু আসে তাহলে বাংলাদেশের গরুর দাম কমে যাবে। আমার যে গরুর দাম ৮০ হাজার, সেটা তখন ৫০ হাজারে বিক্রি করতে হবে। আমিই লোকসানে পড়ব। তাই ভারতীয় গরু আসা বন্ধ থাকা দরকার। সেই ভাবনা থেকেই আমি সীমান্ত পাহারা দেই।

চরখিদিরপুরের গ্রাম্য চিকিৎসক পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, আমাদের গ্রামের কেউ মাদকের সঙ্গে এখন সম্পৃক্ত না। যে ক’জন চোরাচালান করতো দুই বছর আগে তারা আত্মসমর্পণ করে। এরপর গ্রামের লোকজন মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ঘোষণা করে। কিন্তু ওপারের গ্রাম থেকে লোকজন এসে সীমান্ত থেকে ফেনসিডিল পাচার করে নিয়ে যেত।

গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে তা এখন বন্ধ হয়েছে। গ্রামের মানুষ এভাবে এগিয়ে না এলে মাদক পাচার বন্ধ করা সম্ভব হতো না। কারণ, গোটা এলাকাটিতেই ফসলের ক্ষেত। এমন এলাকায় চোরাচালান বন্ধ করা শুধু বিজিবির একার পক্ষে কঠিন হতো।
বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সীমান্ত এলাকায় আমাদের চারটি বিওপি রয়েছে। সবখানেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একটি করে কমিটি গঠন করেছেন। আমাদের প্রয়োজন হলেই সেই কমিটির সদস্যরা এভাবে সীমান্ত পাহারায় আসেন।
তিনি বলেন, কোনকিছুর বিনিময়ে নয়, গ্রামবাসী স্বত:স্ফূর্তভাবেই এগিয়ে আসেন। বিজিবি দেখা যাচ্ছে সীমান্তের একপাশে গিয়েছে, গ্রামবাসী অন্য পাশে নজর রেখেছেন। এভাবেই আমরা কাজ করছি। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করার উদ্দেশ্যেকে সামনে রেখেই আমরা এভাবে কাজ করছি। এতে ভাল ফল মিলছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন