লিয়াকত আলী ভুঁইয়া
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়েছে আটটি ভেন্যুতে। এগুলো হলো, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, ঢাকা। শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, মিরপুর, ঢাকা। খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ। এম এ আজিজ স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম। শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম, বগুড়া। শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম, খুলনা। সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম, সিলেট। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে যেহেতু আর ক্রিকেট হবে না সেহেতু বাকি থাকে আরও সাতটি স্টেডিয়াম। এছাড়া কক্সবাজাওে তৈরি হয়েছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। বলা যায় এটি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর স্টেডিয়াম। এর বাইরেও রাজশাহীতে রয়েছে শহীদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়াম ও বরিশালে রয়েছে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়াম। এই দুই স্টেডিয়ামে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ আয়োজিত হয়েছে। পূর্বাচলে তৈরি করা হচ্ছে ৭০ হাজার আসনবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এরেনা ও কক্সবাজারের রামুতে তৈরি হবে ১ লাখ আসনবিশিষ্ট দেশের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম।
এছাড়া মানিকগঞ্জে পদ্মার পাড়েও তৈরি হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্রিকেট কমপ্লেক্স। উপরের বিস্তারিত তালিকা দেয়ার কারণ হলো এটা বলা যে আমাদের দেশে যথেষ্ট পরিমাণ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ক্রিকেট স্টেডিয়াম রয়েছে। আরও বেশ কিছু অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম তৈরি হচ্ছে। নিঃসন্দেহে ক্রিকেট আমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা এবং বিনোদনের মূল উপাদান। দেশের সর্বস্তরেই এর জনপ্রিয়তা রয়েছে।
এবার ক্রিকেটীয় অন্য একটি ব্যাপারে নজর দেয়া যাক। ক্রিকেটে আমাদের সম্ভাবনার অন্যতম দিক হলো পেস বোলিং ডিপার্টমেন্ট। মাশরাফি, মোস্তাফিজ, তাসকিন, রুবেল, আল আমিন, শহীদ, রাব্বি, রনিদের নিয়ে বলা যায় বিশ্বের অন্যতম সেরা পেস ডিপার্টমেন্ট হলো বাংলাদেশ। টেস্ট ম্যাচ জিততে হলে এদের দক্ষতার সর্বোচ্চ ব্যবহার প্রয়োজন। এজন্য এদের পেস ও বাউন্সি উইকেটে বোলিং করার সুযোগ করে দিতে হবে। আমাদের সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য এবং বিদেশে ভালো করার জন্য সব ধরনের উইকেটে খেলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দেশের মাটিতে বাঘ হয়ে বিদেশ থেকে মাথা নিচু করে ফিরলে তো হবে না। এখনই সময় ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করার।
সম্প্রতি তামিম ইকবাল একটি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘দুর্দান্ত ২০১৫ সালের পর এ বছরও ভালো শুরু ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। যখন কোনো ব্যাটসম্যান ভালো করতে থাকে, তখন সে যত ম্যাচ খেলবে ততই ভালো করবে। আমি গত বছর ভালো ছন্দে ছিলাম। তখন যদি আরও কিছু ম্যাচ খেলতে পারতাম, পারফরম্যান্স আরও ভালো হতে পারত। এটা অবশ্য আমার হাতে নেই। যে মানসিকতায় ব্যাটিং করেছি, চেষ্টা থাকবে এ বছরও সেটি ধরে রাখার। বাকিটা নির্ভর করছে ভাগ্যের ওপর।’
আরেকটি বিষয় হলো ২০১৫ সালে ভালো ক্রিকেট খেলার পর বাংলাদেশের হাতে কোন খেলা নেই। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা অনেকটা বেকার বশে আছে। এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সিরিজ চালু করা। খেলতে খেলতে খেলার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। যত খেলবে তত খেলা শিখবে। তাই উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে যতো বেশি খেলা চালু করা যাবে বাংলাদেশের খেলায়াড়রা খেলায় তত অভিজ্ঞ হয়ে উঠবে। নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে। মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে যেমন সারা বিশ্বে মাতামাতি হচ্ছে তেমনি নতুন নতুন কাউকে নিয়ে আরো মাতামাতি হবে। তাই বিসিবিকে নতুন নতুন ম্যাচ সিরিজ চালুর ব্যাপারে আরো সচেতন হত হবে। যত বেশি সম্ভব প্রথম ক্যাটাগরির দলের সঙ্গে ম্যাচ চালু করতে হবে।
অনেক দিন আমাদের বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের হাতে কোন ম্যাচ নেই। অথচ বর্তমানে নিউজিল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ভারত, পাকিস্তান-ইংল্যান্ড, শ্রীলংকা-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে খেলা চললেও বাংলাদেশের হাতে খেলা নেই। এর জন্য দায়ী আমাদের বিসিবির সাংগঠনিক দুর্বলতা।
বাংলাদেশের ক্রিকেটও যেভাবে এগিয়ে চলেছে তাতে বিশ্বসেরা দল হয়ে ওঠা আর দূরের স্বপ্ন নয়, বরং ইতিমধ্যেই নাগালে সেটা ক্রিকেটবোদ্ধারাই বলতে শুরু করেছেন। নতুন নতুন খেলোয়াড় উঠে আসছে। ভালো খেলতে পারলে এলাকা এবং পারিবারিক-সামাজিক পরিবেশ নির্বিশেষে যে কেউ জাতীয় দলে নিজের স্থান করে নিতে পারে। পরিশেষে বলছি, একজন মুস্তাফিজ নয়, আমাদের ক্রিকেট অঙ্গনে আরো নতুন নতুন মুস্তাফিজের জন্ম হোক। আর শুধু ক্রিকেটইবা বলি কেন- সব ধরনের খেলাতেই চাই ঝাঁকে ঝাঁকে দি ফিজ ফ্রম বাংলাদেশ।
ষ লেখক : ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রথম), রিহ্যাব, জেনারেল বডি মেম্বার, এফবিসিসিআই
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন