মিযানুর রহমান জামীল
পৃথিবীর বিস্ময় মহাগ্রন্থ আল-কোরআন! আজ পর্যন্ত যার বিকৃতি সাধন করা যায়নি, যাবেও না। সেই চৌদ্দশ বছর পূর্ব হতে যার ভেতরে একটি ছোট্ট সূরার সাদৃশও কেউ তৈরি করে আনতে পারেনি, পারবেও না। কারণ এই কোরআন মহাসত্যের এক সুউচ্চ হিমাদ্রী। কল্যাণময় জীবনের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক এবং দিকভ্রান্ত নাবিকের আলোকিত বাতিঘর। যা নাজিল করা হয়েছে সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর। ইরশাদ হচ্ছে ‘বস্তুত এ উপদেশ বাণী (কোরআন) আমিই নাজিল করেছি এবং আমিই এর রক্ষক।’ (সুরা হিজর-৯)
দুনিয়ার বুকে যারা এই কোরআনের সাথে বেয়াদবিমূলক আচরণ দেখিয়েছে তারা ইতিহাসের আস্তাকুড়ে হয়েছে নিক্ষিপ্ত। যারা বিরোধিতা করেছে তারা কঠিনভাবে ভোগ করেছে এর বিষফল। যারা এর বিধান থেকে সরে গেছে তাদের জীবনে নেমেছে চরম ভোগান্তি। আর যারা একে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করেছে তারা হয়েছে যুগের অভিশপ্ত। যারা এর পথ মত ও হুকুম আহকাম থেকে সরে গেছে তারা হয়েছে লাঞ্ছিত অপমানিত নিগৃহীত। জীবনের পদে পদে দুনিয়ার ইতিহাস তাদের ধিক্কার প্রদর্শন করেছে। আজকের এই সময়ে এসে পৃথিবীর অনুকূল পরিস্থিতির জন্য একমাত্র দায়ী কোরআন বিমুখ মানব সম্প্রদায়। যাদের পাপাচারের বিষফলে পৃথিবীর আবহাওয়া উল্টো স্রোতে বিরাজমান। উপেক্ষিত গোটা ইসলামী দুনিয়া। ভূলুণ্ঠিত মানুষের জানমাল ইজ্জত-আব্রু নিশ্চয়তা।
এ সমূহ ক্ষয়-ক্ষতি ও অধঃপতনের পেছনে যে রহস্য জমাট বেঁধে আছে তার সমাধান বা উত্তরণের পথ কোথায়? কোথায় এর কাক্সিক্ষত ফলাফল? পবিত্র কোরআন নিজেই বলে দিয়েছে ‘তোমরা যদি এই কোরআন সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সন্দেহে থাক যা আমি আমার বান্দা (মুহাম্মদ সা.)-এর প্রতি নাজিল করেছি, তবে তোমরা এর মতো কোনো একটা সুরা রচনা করে নিয়ে আসো, আর সত্যবাদী হলে তোমরা আল্লাহ ছাড়া নিজেদের সাহায্যকারীদের ডেকে নাও।’ (সুরা বাকারা-২৩)
আজ আমি কোরআন পড়তে পারি। কোরআনের মতো করে জীবন সাজাতে পারি না। ফলে মুত্তাতি হওয়া আমার ভাগ্যে জুটে না। যদিও আমি কোরআন বুঝি কিন্তু সেই বুঝাকে সমাজিক নীতিমালায় রূপ দিয়ে অন্যায়-অবিচার দূর করার বোধশক্তিটুকুও লালন করি না।
যেমন আল-কোরানের সমাজ গড়ার শ্লোগান দিতে জানি পক্ষান্তরে নিজের মধ্যে কোরআনের আইন বাস্তবায়ন করতে জানি না। উল্টো যারা কোরআনের মিছিলে রাজপথে আসতে উদ্ধত হয় তাদের বিরুদ্ধে পরওয়ানা জারি করার দুঃসাহস দেখাই। এ কারণে আমরা যে কোরআনের অদৃশ্য লানতের অক্টোপাসে নিজেকে জড়িয়ে নিচ্ছি সে অনুধাবনও আমাদের থেকে লোপ পেয়েছে। অথচ বুক ফুলিয়ে গলা ফাটিয়ে বলি আমরা মুসলমান। অথচ আমাদের ভেতর খেয়ে ফেলেছে মিথ্যা, গীবত, লোভ, পরনিন্দা, প্রলোভন, দুনিয়াপ্রীতি, হিংসা, ফাসাদ, সুদ, ঘুষ, জিনা, ব্যভিচার, অত্যাচার, মারামারি, গুম, ধোঁকা, চুরির মতো সব জঘন্য পাপ কর্ম। ফলে এগুলো আমাদের জীবনের নিয়মিত পেশা বা নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা কোরআনের খাদেম দাবিদার কিন্তু এই কোরআনের আহালদের বিপদমুহূর্তে তাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন বোধ করি না। উল্টো যারা মানবতার দাবি করে মুসলমানদের ওপর নির্বিচারে হামলে পড়ে, একজন মুসলিম দেশের দায়িত্বশীল হয়ে তাদের প্রতি আমাদের নীরব ভূমিকা কী পশ্চিমাদের পক্ষপাতিত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়? হাদিসে আছে “খারাপ কাজ দেখলে তা সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিরোধ করো। যদি সে শক্তি না থাকে তবে মুখে বারণ করো, আর সেটাও যদি সম্ভব না হয় তবে মনে মনে ঘৃণা করো এবং এটা ঈমানের সর্বনি¤œ স্তর।”
দুঃখের বিষয় আমাদের মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মধ্যে এমন কোনো ব্যক্তি পাওয়া যায়নি যিনি গাজায় হামলার ব্যাপারে জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রতি জোরালো চাপ প্রয়োগ করেছেন। অথচ ফিলিস্তিনে ইসরাইল হামলার প্রতিবাদে পৃথিবীর অন্যতম বিজ্ঞানী ‘স্টিফেন হকিং’ জেরুজালেমের বিশ্ববিদ্যালয়ের তাদের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে এক ধরনের প্রতিবাদ করেছেন। আর ভিন্ন কৌশলে হামলা বন্ধের স্বার্থে তিনি যে মানবতা দেখিয়েছেন তার জন্য মুসলিম বিশ্বের ঘুমকাতুরে ব্যক্তিদের শিক্ষা নেয়া উচিত। কারণ আল্লাহ তাআলার চরম ঘোষণা “যদি তোমরা দীনের কাজ আঞ্জামে এগিয়ে না আসো তবে অন্য জাতি গোষ্ঠী বা শ্রেণী দ্বারা আমি আমার দীনের সাহায্য নেব।” হস্তিবাহিনী পরাস্ত করে দেয়া বাইতুল্লাহ উদ্ধারকারী সেই ‘আবাবিল’ পাখিগুলো যার অকাট্য প্রমাণ বহন করে। এরপরও আমরা আল-কোরআন থেকে বিমুখ রয়ে যাই। দুনিয়ায় বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন, আবিষ্কার ও উন্নতির পেছনে আল-কোরআনই শ্রেষ্ঠত্ব লাভের সর্বোচ্চ হকদার। কারণ বর্তমানে বিজ্ঞান যা কিছু আবিষ্কার করেছে কোরআন তা চৌদ্দশ বছর পূর্বে বলে গেছে।
দুনিয়ার এ উন্নতির পেছনে কোরআন যেখানে মাইলফলক সেখানে কোরআন থেকে আজ মানব সভ্যতার ভিন্নমুখী। বিপদমুহূর্তে কোরআনের ধারক-বাহকদের (ফিলিস্তিনের মুসলমান) সাহায্যে এগিয়ে আসছে না আপন সম্প্রদায় মুসলিম দেশগুলো। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদী একটা পতন আমাদের জন্য যে অনিবার্য হয়ে যাচ্ছে সেটা কোনো ক্ষেত্রেই অস্বীকার করা যাবে না। কারণ পৃথিবীর কোথাও যদি কোনো মুসলিম আঘাত পায় সেই আঘাত এসে অন্য মুসলমানের বুকে লাগে। আর আজকের এই প্রেক্ষাপট যদি কোনো সমাধানের পথকে ত্বরান্বিত না করে তবে আমাদেরও অপেক্ষা করতে হবে ফিলিস্তিনি মা-বোনদের মতো একটা কঠিন বিপর্যয়ের। আল্লাহ সবাই পবিত্র কোরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করুন।
ষ লেখক : সম্পাদক, কলমসৈনিক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন